ক্রিকেট

বলেই ছিনিয়ে নিল জীবন! ফিলিপ হিউজের পর ফের বলের আঘাতে মৃত্যু তরুণ অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটার বেন অস্টিনের

মাহবুবুর রহমান সাব্বির (ক্রীড়া সাংবাদিক)

মাহবুবুর রহমান সাব্বির (ক্রীড়া সাংবাদিক)

বৃহস্পতিবার, ৩০ অক্টোবর, ২০২৫
বলেই ছিনিয়ে নিল জীবন! ফিলিপ হিউজের পর ফের বলের আঘাতে মৃত্যু তরুণ অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটার বেন অস্টিনের
ক্রিকেট মাঠে মৃত্যু—শব্দদুটো কখনোই পাশাপাশি মানায় না। কিন্তু আবারও সেটিই ঘটল অস্ট্রেলিয়ায়। বলের আঘাতে প্রাণ হারিয়েছেন প্রতিশ্রুতিশীল তরুণ ক্রিকেটার বেন অস্টিন। এক দশক আগের ফিলিপ হিউজের মর্মান্তিক মৃত্যুর দৃশ্য যেন আবারও ফিরে এলো অস্ট্রেলিয়ার ঘরোয়া ক্রিকেটে।
মৃত্যু এলো নেট সেশনে
বিবিসির প্রতিবেদনে জানা গেছে, গত মঙ্গলবার ফার্নট্রি গালি ক্রিকেট ক্লাবে অনুশীলনের সময় বেন অস্টিনের ঘাড়ে বলের আঘাত লাগে।
তখন হাতে ব্যবহৃত সাইডআর্ম থ্রোয়ার দিয়ে বল ছোঁড়া হচ্ছিল তার দিকে।
অস্টিনের মাথায় হেলমেট থাকলেও ‘নেক গার্ড’ বা ঘাড়রক্ষী ছিল না — আর সেই ছোট্ট অনুপস্থিতিই হয়ে ওঠে মৃত্যুর কারণ।
আরেক আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, ম্যাচের আগে নেটে ব্যাটিং অনুশীলন করছিলেন অস্টিন। হঠাৎ থ্রোয়ার থেকে ছোড়া বলে কাঁধে আঘাত পান তিনি। দ্রুত হাসপাতালে নেওয়া হলেও, চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৩০ অক্টোবর শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন মাত্র কিশোর বয়সী এই প্রতিভাবান ক্রিকেটার।
অসমাপ্ত স্বপ্ন, অকাল বিদায়
হয়তো একদিন স্টিভ স্মিথ কিংবা ডেভিড ওয়ার্নারের মতো তারকাদের কাতারে নাম উঠতে পারত তার।
কিন্তু ফুল ফোটার আগেই ঝরে গেল বেন অস্টিন।
তার মৃত্যুর খবরে শোকের ছায়া নেমে এসেছে অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটে, মাঠ থেকে সোশ্যাল মিডিয়া—সবখানেই এখন একটাই প্রশ্ন: “আর কত মৃত্যু লাগবে নিরাপত্তা বুঝতে?”
 ক্লাবের শোকবার্তা
অস্টিনের ক্লাব ফার্নট্রি গালি ক্রিকেট ক্লাব এক বিবৃতিতে জানিয়েছে,
“বেনের মৃত্যুতে আমরা গভীরভাবে শোকাহত। তাঁর এই অকাল প্রয়াণ পুরো ক্রিকেট সম্প্রদায়ের জন্য এক বিরাট ক্ষতি এবং শোকের মুহূর্ত।”
অন্যদিকে ফার্নট্রি গালি অ্যান্ড ডিস্ট্রিক্ট ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আর্নি ওয়াল্টার্স বলেন,
“বেন শুধু প্রতিভাবান ক্রিকেটারই নয়, ছিলেন সবার প্রিয় মানুষ। তাঁর মৃত্যু আমাদের স্থানীয় ক্রিকেট পরিবারে এক গভীর শূন্যতা তৈরি করবে।”
বাবার হৃদয়বিদারক বার্তা
মৃত্যুর পর বেনের বাবা জেস অস্টিন জানান,
“আমরা আমাদের সুন্দর বেনকে হারিয়ে সম্পূর্ণভাবে ভেঙে পড়েছি। বৃহস্পতিবার সকালে সে মারা গেছে। এই দুর্ঘটনা আমাদের কাছ থেকে বেনকে কেড়ে নিয়েছে, তবে সান্ত্বনা একটাই — সে ঠিক সেই কাজটাই করছিল, যা সে সবচেয়ে ভালোবাসত — বন্ধুদের সঙ্গে নেটে ক্রিকেট খেলছিল।”
তিনি আরও যোগ করেন,
“যে ছেলেটি তখন নেটে বল করছিল, তার প্রতিও আমরা সমর্থন জানাতে চাই। এ দুর্ঘটনা দুই তরুণকেই গভীরভাবে নাড়া দিয়েছে, আমরা তাদের পরিবারের পাশে আছি।”
 আবারও নিরাপত্তা প্রশ্নে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া
২০১৪ সালে ফিলিপ হিউজের মৃত্যু বদলে দিয়েছিল বিশ্ব ক্রিকেটের সেফটি নীতি।
 শেফিল্ড শিল্ডের ম্যাচে শন অ্যাবটের বাউন্সারে ঘাড়ে বলের আঘাত পেয়ে মৃত্যুবরণ করেন হিউজ। এরপর থেকেই হেলমেটে ‘নেক গার্ড’ সংযোজন বাধ্যতামূলক করা হয়।
তবুও বেন অস্টিনের মৃত্যু দেখিয়ে দিল, নিরাপত্তা সচেতনতার জায়গায় এখনও ফাঁক রয়ে গেছে।
 একটি ছোট্ট সরঞ্জামের অভাব কাড়ল এক তরুণ প্রাণ, যিনি হয়তো হতে পারতেন ভবিষ্যতের অস্ট্রেলিয়ান তারকা।
শেষ কথা
মৃত্যু কখন কোন দিক থেকে আসে, কেউ জানে না। কিন্তু এতটুকু নিশ্চিত—একটি বল, একটি মুহূর্ত, একটি ভুল নিরাপত্তা—ছিনিয়ে নিতে পারে একটি সম্ভাবনাময় জীবন।
 ফিলিপ হিউজের পর এবার বেন অস্টিন—অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটে আরেকটি নাম, যা চিরকাল মনে করিয়ে দেবে:
সেফটি কখনোই ছোট বিষয় নয়।