ক্রিকেট

মাশরাফির যুগে ৪ ফাস্ট বোলার, এখন একমাত্র মুস্তাফিজ!

মাহবুবুর রহমান সাব্বির (ক্রীড়া সাংবাদিক)

মাহবুবুর রহমান সাব্বির (ক্রীড়া সাংবাদিক)

মঙ্গলবার, ২১ অক্টোবর, ২০২৫
মাশরাফির যুগে ৪ ফাস্ট বোলার, এখন একমাত্র মুস্তাফিজ!
২০১৫ সালে মাশরাফি বিন মুর্তাজার নেতৃত্বে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল মাঠে নামত চারজন ফাস্ট বোলার নিয়ে। ইনফর্ম রুবেল হোসেন, তরুণ তাসকিন আহমেদ, অভিষিক্ত মুস্তাফিজুর রহমান ও অধিনায়ক মাশরাফি নিজে—এই চার পেসারই ছিল সেই সময়ের দলের মূল শক্তি। মিরপুরের সেই সবুজ উইকেটে ভারতকে ২-১ ব্যবধানে হারিয়ে ইতিহাস গড়েছিল বাংলাদেশ। সেই সিরিজ বদলে দিয়েছিল দেশের ওয়ানডে ক্রিকেটের আত্মবিশ্বাস, বদলে দিয়েছিল বাংলাদেশ ক্রিকেটের ধারা।
তখনই দেখা গিয়েছিল একজন সাহসী অধিনায়কের নেতৃত্ব কেমন হতে পারে। এশিয়ার কোনো দল যেখানে ঘরের মাঠে চারজন স্বীকৃত ফাস্ট বোলার নিয়ে মাঠে নামার চিন্তাই করতে পারত না, মাশরাফি সেখানে ভাঙেন প্রচলিত ধারা। ভারতের বিপক্ষে সিরিজে অভিজ্ঞ স্পিনার আরাফাত সানিকে বসিয়ে দেন, আর নবাগত মুস্তাফিজুর রহমানকে দেন অভিষেকের সুযোগ—যেই সিদ্ধান্ত ইতিহাসে স্থান করে নেয় “কাটার মাস্টার”-এর জন্মের মাধ্যমে।
কিন্তু দশ বছর পর ছবিটা একেবারেই ভিন্ন। এখনকার বাংলাদেশ দল একাদশে তো দূরের কথা, পুরো স্কোয়াডেই পাওয়া যায় না চারজন ফাস্ট বোলার। বর্তমান সময়ে টাইগাররা মাঠে নামছে মাত্র একজন জেনুইন পেসার ও চারজন স্পিনার নিয়ে। এমনকি পার্ট-টাইম বোলার সাইফ হাসানকেও ধরলে, স্পিনারের সংখ্যা দাঁড়ায় পাঁচে! ভাবা যায়, একসময় পেসারদের দেশ হিসেবে পরিচিত বাংলাদেশ এখন মাঠে নামছে মাত্র একজন ফাস্ট বোলার নিয়ে!
ভাগ্যিস, সেই ২০১৫ সালেই মিরপুরে অভিষেক হয়েছিল মুস্তাফিজুর রহমানের। তাই তো দশ বছর পরেও তিনি একমাত্র ফাস্ট বোলার হিসেবে দলকে প্রতিনিধিত্ব করছেন। কিন্তু প্রশ্ন রয়ে যায়—যে দল একসময় পেস আক্রমণে কাঁপিয়ে দিত প্রতিপক্ষকে, তারা এখন কেন এমন আত্মঘাতী পথে হাঁটছে?
সমালোচকরা বলছেন, মিরপুরের পিচ এখন এমন পর্যায়ে চলে গেছে যে এখানে ভালো পেসার বা ব্যাটার গড়ে ওঠা প্রায় অসম্ভব। ধীরগতির উইকেট যেন ধীরে ধীরে মেরে ফেলছে বাংলাদেশের ক্রিকেটের প্রতিভা বিকাশের সুযোগ। এক সময়ের আগুনঝরা ফাস্ট বোলিংয়ের ঐতিহ্য এখন পরিণত হয়েছে নিস্তেজ এক স্মৃতিতে।
যে বাংলাদেশ একসময় এশিয়ার প্রথম দল হিসেবে ৪ ফাস্ট বোলার নিয়ে মাঠে নেমেছিল, আজ তারাই মাঠে নামে ৪ স্পিনার নিয়ে। সময় বদলেছে ঠিকই, কিন্তু এই বদল কি উন্নতির নাকি অবক্ষয়ের? হয়তো এই প্রশ্নটাই এখন মিরপুরের গ্যালারিতে প্রতিধ্বনিত হচ্ছে সবচেয়ে জোরে।