ফুটবল বিশ্বকাপ মানেই মহাযজ্ঞ—বড় স্টেডিয়াম, বড় তারকা আর কোটি মানুষের উন্মাদনা। কিন্তু ইতিহাস বলছে, আকারে ছোট কিছু দেশও তাদের অদম্য মনোবল দিয়ে ছুঁয়েছে বিশ্বমঞ্চ। আজ জানুন এমনই কিছু ক্ষুদ্র দেশের রূপকথার গল্প।
ফুটবল বিশ্বকাপ—এ যেন এক আবেগ, এক স্বপ্ন, এক মহোৎসব!
বিশাল স্টেডিয়াম, গর্জন তোলা দর্শক আর তারকাদের ঝলকানি—সব মিলিয়ে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ক্রীড়া আসর। তবে এই প্রতিযোগিতায় দাপট দেখায় ইউরোপ-দক্ষিণ আমেরিকার পরাশক্তিরাই। কিন্তু ইতিহাসে এমন কিছু দেশও আছে, যাদের নাম শুনলে অবাক হতে হয়। তারা ছোট, কিন্তু স্বপ্নে বিশাল।
তাদের গল্প যেন “অসাধ্যকে সাধন করার” এক নিদর্শন।
আইসল্যান্ড — বিশ্বের সবচেয়ে ছোট বিশ্বকাপ দল
২০১৮ সালের রাশিয়া বিশ্বকাপে ইতিহাস রচনা করে আইসল্যান্ড।
মাত্র ৩ লাখ ৫০ হাজার জনসংখ্যা নিয়ে বিশ্বকাপে খেলা দেশ হিসেবে আজও রেকর্ড তাদেরই। ইউনিয়নের মতো ছোট এই জনসংখ্যার দেশটি শুধু অংশগ্রহণ করেই থামেনি, আর্জেন্টিনার সঙ্গে ড্র করে তাক লাগিয়েছিল গোটা বিশ্বকে।
তাদের সেই "ভাইকিং ক্ল্যাপ" উদযাপন আজও ফুটবলপ্রেমীদের মনে অমর।
কেপ ভার্দে — আফ্রিকার ছোট্ট রত্ন
আফ্রিকার পশ্চিম উপকূলের ছোট দ্বীপরাষ্ট্র কেপ ভার্দে এবার ২০২৬ বিশ্বকাপের টিকিট কেটে ফেলেছে।
জনসংখ্যা ৫ লাখ ২০ হাজারেরও কম, অথচ তারা হারিয়েছে মহাদেশের পরাশক্তি ক্যামেরুনকে!
‘ব্লু শার্কস’ নামে পরিচিত দলটি আইসল্যান্ডের পর বিশ্বকাপে খেলা দ্বিতীয় ক্ষুদ্রতম দেশ হিসেবে নাম লিখিয়েছে ইতিহাসে।
প্যারাগুয়ে — দক্ষিণ আমেরিকার প্রাচীন রূপকথা
দক্ষিণ আমেরিকার দেশ প্যারাগুয়ে প্রথম বিশ্বকাপ খেলে ১৯৩০ সালে।
তখন তাদের জনসংখ্যা ছিল মাত্র ১০ লাখেরও কম।
সেবার তারা যুক্তরাষ্ট্রের কাছে হেরে বেলজিয়ামকে হারিয়ে গ্রুপ থেকে বিদায় নেয়।
বর্তমানে প্রায় ৭০ লাখ জনসংখ্যা নিয়ে প্যারাগুয়ে ২০২৬ সালে নবমবারের মতো অংশ নিতে যাচ্ছে বিশ্বকাপে।
ত্রিনিদাদ ও টোবাগো — ক্যারিবীয় স্বপ্নযাত্রা
২০০৬ সালের জার্মানি বিশ্বকাপে প্রথমবার খেলেছিল এই ক্যারিবীয় দ্বীপরাষ্ট্রটি।
জনসংখ্যা ছিল প্রায় ১৩ লাখ।
সুইডেনের সঙ্গে ড্র করে আলোচনায় আসে দলটি, যদিও ইংল্যান্ড ও প্যারাগুয়ের কাছে হেরে গ্রুপ পর্বেই থেমে যায় তাদের স্বপ্নযাত্রা।
তারপর থেকে আর বিশ্বকাপে ফেরা হয়নি তাদের, কিন্তু সেই গল্প এখনো অনুপ্রেরণার।
ছোট দেশ, বিশাল স্বপ্ন
আইসল্যান্ড থেকে কেপ ভার্দে—এই দেশগুলো প্রমাণ করে দিয়েছে, ফুটবল শুধু অর্থ বা জনসংখ্যার খেলা নয়, এটি ইচ্ছে, বিশ্বাস ও পরিশ্রমের খেলা।
তারা দেখিয়েছে, ছোট দেশও বিশ্ব জয় করতে পারে যদি থাকে দৃঢ় মনোবল ও দলগত ঐক্য।
তাদের এই সাফল্য শুধু ফুটবলের নয়, বরং কোটি ছোট জাতির মানুষের জন্য এক অনুপ্রেরণার গল্প।