ঋতুপর্না চাকমা। বেশ সুহাসিনী, হাস্যজ্বল। প্রতিপক্ষের জন্য ভয়ংকর এবং আক্রমনাত্মক। দলের অসংখ্য জয়ে যার অবদান অনস্বীকার্য। কিন্তু জানেন কি? এই হাসির আড়ালে কতোটা বিসাদ লুকোনো? কতোটা হৃদয় পোড়ালে লাখো মানুষের মুখে হাসি ফোটানো যায়? কতো বেশি কষ্ট লুকাতে জানলে ঋতুপর্না হওয়া যায়?
মায়ের ক্যানসার, পাহাড়ি দুর্গমে পরিত্যাক্ত প্রায় এক ঘর। ঝর-বৃষ্টি আর জীবন নামক যুদ্ধের শত শত প্রতিকূলতা। যে মানুষটা প্রতিপক্ষের ডিফেন্ডারদের প্রতিকূলতা কাটিয়ে বয়ে নিয়ে আসে অসংখ্য জয়। জীবনের প্রতিকূলতায় আটকে পড়া তার কি শোভা পায়? তাইতো জীবনের নির্মমতাকেই পাশ কাটিয়ে লড়া যাচ্ছেন দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য।
মায়ের অসুস্থতার খবর ছড়িয়ে পড়লে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান আস্বাস দিয়েছেন চিকিৎসা খরচ বহনের। তবে এবার পেলো আরা বড়ো সুখবর।
ফুটবল পাড়ার ঋতুপর্নার পাশে দাড়ালেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড। গড়ে দিবেন নতুন বাড়ি। ভুল শুনেননি। যে ক্রিকেট বোর্ড বরাবরই ক্রিকেটারদের পাশে দাড়িয়েছে পরম আশ্রয় হয়ে, অসহায় ক্রিকেটারদের সহায় হয়ে। মেহেদী হাসান মিরাজের পাশে দাড়ানো থেকে শুরু করে এরকম নজীর রয়েছে অসংখ্য ক্রিকেটারের ওপরে সদয় হওয়ার। ক্রিকেটের গন্ডি পেড়িয়ে মানব সেবায় বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড যেনো সদা সর্বদাই প্রস্তুত। যার প্রমাণ বহু ভাবে বহুবার মিলেছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায়, কিংবা মাইলস্টোন ট্রাজেডির সময় বিসিবির উদারতা, সবকিছুই যেনো চোখে লাগার মতো।
ঋতুপর্নার বাড়ি নির্মাণ করে দিবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড। এমন খবর পেয়ে আনন্দে আত্মহারা হয়েছেন এই ফুটবলার কৃতজ্ঞতা এবং ধন্যবাদের ফুলঝুরিতে যেনো আত্ম আনন্দে নিজেই আত্মহারা তিনি।
বাংলাদেশ নারী ফুটবলের উদীয়মান তারকা ঋতুপর্ণা চাকমার সাফল্যের গল্পের সঙ্গে জড়িয়ে আছে তাঁর কঠিন পারিবারিক বাস্তবতা। সেই বাস্তবতাকে কিছুটা হলেও সহজ করতে এগিয়ে এসেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। এই তরুণ ফুটবলারকে একটি নতুন বাড়ি উপহার দিতে যাচ্ছে বিসিবি।
রাঙামাটির কাউখালী উপজেলার একটি দুর্গম এলাকায় পরিবার নিয়ে বসবাস করেন ঋতুপর্ণা। তাঁদের বর্তমান বাসস্থানটি বাঁশের বেড়া দিয়ে ঘেরা অস্থায়ী একটি ঘর। ২০২৪ সালে সাফ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর স্থানীয় প্রশাসনের কাছ থেকে একটি জমি পেলেও সেখানে এখনো বাড়ি নির্মাণের কাজ শুরু হয়নি। এবার সেই বাড়ি বানানোর দায়িত্ব নিয়েছে বিসিবি। আজ বিসিবির বোর্ড সভা শেষে বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন বোর্ডের মিডিয়া কমিটির চেয়ারম্যান ইফতিখার রহমান মিঠু।
তবে কবে থেকে নির্মাণ কাজ শুরু হবে বা কীভাবে তা বাস্তবায়ন করা হবে—সেই বিষয়ে এখনো বিস্তারিত কিছু জানায়নি বিসিবি। বর্তমানে ভুটানের লিগে খেলার মাঝে কয়েক দিনের ছুটি কাটাতে ঢাকায় রয়েছেন ঋতুপর্ণা। দু’দিন পর তিনি আবার ভুটানে ফিরবেন। এরপর জাতীয় দলের ক্যাম্প শুরু হলে সে দিকেই মনোযোগ দেবেন তিনি।
গত মাসে এশিয়ান কাপ বাছাই পর্বে বাংলাদেশ নারী দল মিয়ানমারকে ২-১ গোলে হারায়। ঐ ম্যাচে দুইটি দুর্দান্ত গোল করেন ঋতুপর্ণা, যা বাংলাদেশের জন্য মার্চে অস্ট্রেলিয়ায় অনুষ্ঠিতব্য নারী এশিয়ান কাপে খেলার সুযোগ এনে দেয়। এই অর্জনের পেছনে যিনি মূল ভূমিকা রেখেছেন, তাঁকে সম্মান জানাতেই বিসিবির এই বিশেষ উদ্যোগ।
দিনশেষে খেলাধোলা কিংবা আনন্দ উপলেক্ষের গন্ডি পেড়িয়ে যখন আমাদের ইমোশন, আবেগ, অনুভুতিগুলো হয়ে ওঠে মানবসেবি, নিঃসন্দেহে আনন্দের মাত্র অধিক হারে বেড়ে যায়। তাই অবশ্যই সবিনয়ে একটা ধন্যবাদ প্রাপ্য বিসিবি।