ভাঙা হাতে স্বপ্ন জোড়া দিতে পারলেন না ক্রিস ওকস। মাত্র ৬ রানে পরাজিত হতে হলো সিরিজের সর্বশেষ ম্যাচে। সেই সাথে সিরিজ জয়ের হাতছানিতেও যেন নিয়তির বিধানে মেনে নিতে হলো ২-২ ব্যবধানে ড্র।
সিরিজটা শুধু একটা ক্রিকেট টুর্নামেন্ট নয়, যেন ক্রিকেটের চেয়েও অনেক বেশি কিছু। রান, উইকেট, সেঞ্চুরি, স্লেজিং, কমেন্ট্রি, বিতর্ক—মাঠে এবং মাঠের বাইরে যেন উত্তেজনা, উন্মাদনা—টেস্ট ক্রিকেটকে বিশ্ববাসীর কাছে নতুনভাবে চিনিয়ে দিয়েছে, দিয়েছে নতুন পরিচয়। কী ছিল না এই টেস্ট ম্যাচে! খেলোয়াড়দের শরীর যেন চেপে যাওয়া অবস্থায় ছিল আগেই, শুধুমাত্র মনোবলেই ক্রিকেটকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন। খেলেছেন দেশের জন্য, নিজেদের পতাকার জন্য।
ইনজুরি উপেক্ষা করেই ভাঙা হাত নিয়ে মাঠে নেমেছেন ক্রিস ওকস, অন্যদিকে ভাঙা পা নিয়ে ব্যাট করেছেন ঋষভ পন্থ।
ফলাফল, পাঁচ ম্যাচের সিরিজে দুই দলেরই সমান দুইটি করে জয় এবং একটি ম্যাচ ড্র। যেন বাঘে-সিংহের লড়াই, আর দর্শক গোটা দুনিয়া।
সিরিজে এক ইনিংসে দলীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রহ করেছিলেন ইংল্যান্ড। ম্যানচেস্টার টেস্টে ৬৬৯ রান করেছিলেন স্বাগতিকরা। এক ইনিংসে দলীয় দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান আবার ভারতীয়দের দখলে—সুভমান গিলের বীরত্বে বার্মিংহামে তুলেছিলেন ৫৮৭ রান।
পাঁচ ম্যাচের এ সিরিজে ১০ ইনিংসে ব্যাট করে ৭৫-এর বেশি গড়ে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ৭৫৪ রান তোলেন ভারতীয় অধিনায়ক সুভমান গিল।
এক ইনিংস কম ব্যাট করে ৫৩৭ রান সংগ্রহ করেন লিজেন্ড জো রুট।
এক ইনিংসে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ রান তোলেন ভারতীয় দলপতি, ২৬৯ রান তুলে ট্রিপল সেঞ্চুরি মিসের আক্ষেপে মাঠ ছাড়েন সুভমান।
আর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত রানের ইনিংসটা খেলেন ইংলিশ ব্যাটার জেমি স্মিথ। বার্মিংহামে ১৮৪ রান করে অপরাজিত থাকেন তিনি।
টেস্ট সিরিজ হলেও ব্যাটাররা যেন ছিলেন অপ্রতিরোধ্য, অগ্নিঝরা। এক ইনিংসে সর্বোচ্চ ৮টি ছক্কা হাঁকান ভারতীয় অধিনায়ক। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৬টি ছক্কা হাঁকান ঋষভ পন্থ।
সিরিজে ৫ ম্যাচে সর্বোচ্চ ২৩টি উইকেট শিকার করেছেন ভারতীয় বোলার মোহাম্মদ সিরাজ।
আর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উইকেট ইংলিশ বোলার জে. সি. টোঙ্গির—১৯টি উইকেট নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে আছেন তিনি।
সিরিজে সর্বোচ্চ ডিসমিসাল করেন ইংরেজ উইকেটকিপার জে. এল. স্মিথ। ২০টি ক্যাচের সাথে আছে অসাধারণ এক স্টাম্পিং।
সর্বোচ্চ ১১টি ক্যাচ নিয়ে সিরিজের সবচেয়ে বেশি ক্যাচ নেওয়া ফিল্ডার হ্যারি ব্রুক।
প্রতিদ্বন্দ্বিতা আর প্রতিযোগিতায় কোনো কিছুতেই যেন কেউ কাউকে ছাড় দিতে চাননি এক বিন্দু। দিন শেষে অ্যান্ডারসন-টেন্ডুলকার ট্রফি যেন জিতিয়ে দিল ক্রিকেটকেই।
শেষ ম্যাচে চার উইকেট শিকার করে প্লেয়ার অফ দ্য ম্যাচ হন মোহাম্মদ সিরাজ। আর পুরো সিরিজ জুড়ে অসাধারণ ব্যাটিং এবং ফিল্ডিং প্রদর্শনীর মাধ্যমে সিরিজ সেরা নির্বাচিত হন হ্যারি ব্রুক।
সবশেষে মাত্র ৬ রানের আক্ষেপে হয়তো পোড়াবে ব্রিটিশদের। পোড়ানোরই কথা। যেখানে জো রুট এবং হ্যারি ব্রুকের শতকের পর অনেকটা জয়ের বন্দরের কাছেই ছিল ইংল্যান্ড। তবে শেষ মুহূর্তে সিরাজদের কাছে ধরাশায়ী হতে হলো ব্যাটারদের।
চেষ্টায় সব সময় নিজের মতো করে সফলতাও আসে না। জয়ের চেষ্টায় জীবন বাজি রেখে মাঠে নামা ক্রিস ওকস জিততে পারেননি ম্যাচ, তবে জিতেছেন হৃদয়। যে ভারতীয়রা কথায় কথায় অশোভন আচরণ করতেন, তারাও ওকসকে জানিয়েছেন সম্মান। যেন দেশপ্রেম আর লড়াকু মনোভাব মিলেমিশে একাকার।