খেলা

রানে ফিরতে ক্রিকেটারদের যেভাবে প্রস্তুত করছেন কোচ সোহেল ইসলাম

স্টাফ রিপোর্টার

স্টাফ রিপোর্টার

সোমবার, ৪ আগস্ট, ২০২৫
রানে ফিরতে ক্রিকেটারদের যেভাবে প্রস্তুত করছেন কোচ সোহেল ইসলাম

বাংলাদেশ দলের অনেক ক্রিকেটারেরই পুরোনো সমস্যা—এক-দুই ম্যাচে ভালো করার পরই দীর্ঘ সময় অফফর্মে থাকা। যেখানে ভারত, অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকার মতো দলের খেলোয়াড়রা অল্প সময়েই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের চাপ সামলে ধারাবাহিক পারফরম্যান্স করতে শেখে, সেখানে বাংলাদেশ এখনো পিছিয়ে আছে।
এই চিত্র বদলাতে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) নানা উদ্যোগ নিয়েছে। তারই অংশ হিসেবে চালু করা হয়েছে ‘বাংলা টাইগার্স’ নামের একটি বিশেষায়িত অনুশীলন ক্যাম্প, যেখানে জাতীয় দলের সম্ভাবনাময় খেলোয়াড়দের নিয়ে সারা বছর পর্যবেক্ষণ ও প্রস্তুতি চলছে। এই ক্যাম্পের দায়িত্বে থাকা কোচ সোহেল ইসলাম আজ মিরপুরে সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন এবং ব্যাটসম্যানদের মানসিকতা নিয়ে কিছু গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য করেন।
সোহেল উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরেন নাজমুল হোসেন শান্তর কথা। এক টেস্টে দুই শতক করার পরপরই শান্তর পারফরম্যান্সে পতন আসে—এমন ধারাবাহিকতার অভাব অনেক বাংলাদেশি ব্যাটারদের মাঝেই দেখা যায়। কোচ বলেন, “রান হয়ে গেলে আমরা তৃপ্ত হয়ে যাই, কিন্তু পরের ম্যাচে আবার নতুন করে বড় ইনিংস গড়ার মানসিকতা তৈরি করতে হবে। সেজন্য কাউন্সেলিং করছি, মানসিক প্রস্তুতির দিকেও কাজ করছি।”
এ প্রসঙ্গে ভারতীয় ক্রিকেটের উদাহরণ টেনে সোহেল বলেন, “ভারতের ঘরোয়া ক্রিকেট এতটাই প্রতিযোগিতামূলক যে সেঞ্চুরি বা ডাবল সেঞ্চুরি সেখানে সাধারণ ঘটনা। সেখানে একের পর এক ব্যাটার বড় ইনিংস খেলছে। শুবমান গিল, লোকেশ রাহুল, ওয়াশিংটন সুন্দর—সবাই ধারাবাহিকভাবে রান করছে। অথচ আমাদের দেশে একবার সেঞ্চুরি হলেই সেটাকেই বড় করে দেখা হয়, এবং খেলোয়াড়রাও সেটাতেই সন্তুষ্ট হয়ে পড়ে।”
সোহেল মনে করেন, উন্নতির জন্য ঘরোয়া ক্রিকেটে ধারাবাহিক রান করা ও বড় ইনিংস খেলার সংস্কৃতি তৈরি করতে হবে। “আমরা এখনো এক-দুই ম্যাচ দেখে খেলোয়াড়দের বিচার করি। কিন্তু একটা খেলোয়াড়ের সত্যিকার মান বোঝা যায় তার ধারাবাহিকতা দিয়ে। বড় রান করাটা অভ্যাসের বিষয়, আর সেই অভ্যাস গড়ে তুলতে সময় ও প্রস্তুতি দরকার,” বলেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, শুধুই টেকনিক নয়, মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকাটাও ধারাবাহিক হওয়ার জন্য জরুরি। “পরের ম্যাচে আবার নতুনভাবে কীভাবে মনোযোগ ধরে রাখবে, সেটা খেলোয়াড়কে বুঝতে হবে। আমরাও তাদের সে দিকেই তৈরি করছি। এখন আমাদের কাজ হলো সেই ক্ষুধা জাগিয়ে তোলা, যেন ভেতর থেকে ভালো করার তাড়না আসে।”
শেষদিকে সোহেল জানান, এখন গড় ও স্ট্রাইকরেটের ভিত্তিতে মানদণ্ড তৈরি করার চেষ্টা চলছে। “লাল বলে ৫০ গড় ভালো, কিন্তু ব্যাটিং সহায়ক উইকেটে যদি কেউ গড় ৮০ পর্যন্ত নিয়ে যেতে পারে, তাহলে বুঝতে হবে সে উন্নতি করছে। ঠিক তেমনই বোলারদের ক্ষেত্রেও ইকোনমি রেট, ম্যাচে ইম্প্যাক্ট এসব বিষয় বিশ্লেষণ করা হচ্ছে।”
সব মিলিয়ে, খেলোয়াড়দের মানসিক প্রস্তুতি, ঘরোয়া ক্রিকেটের মানোন্নয়ন এবং বাস্তবভিত্তিক বিশ্লেষণের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ দলকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আরও প্রতিযোগিতামূলক করে তুলতে চায় বিসিবি ও কোচিং স্টাফ।