রাজনীতি

পদত্যাগ করলেন ছাত্র সমাজের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক

উপ-সম্পাদক

উপ-সম্পাদক

বৃহস্পতিবার, ১৭ অক্টোবর, ২০২৪
পদত্যাগ করলেন ছাত্র সমাজের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক
জাতীয় পার্টির সহযোগী ছাত্র সংগঠন জাতীয় ছাত্র সমাজের সভাপতি মো. আল-মামুন এবং সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম খান পদত্যাগ করেছেন। ১৬ অক্টোবর, ২০২৪ তারিখে সকাল ১০টায় তারা পদত্যাগ করেন এবং পরে গণমাধ্যমে পাঠানো একটি বিবৃতির মাধ্যমে এ খবর জানান।
বিবৃতিতে তারা উল্লেখ করেন যে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং তাদের দল জাতীয় পার্টির অবস্থানের মধ্যে সাংঘর্ষিক সম্পর্ক থাকায় তারা এই পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। নেতারা জানান, গত কয়েক মাসে তারা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছেন এবং কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের সমর্থনে একাধিক বিবৃতি ও সংবাদ সম্মেলন করেছেন। বিশেষ করে, ১৩ আগস্ট কোটা আন্দোলনে সমর্থন দিয়ে তারা বিবৃতি প্রকাশ করেছিলেন এবং ১৭ জুলাই আন্দোলনকারীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলনও আয়োজন করেছিলেন।
আল-মামুন এবং আশরাফুল ইসলাম খান বিবৃতিতে বলেন, "আমাদের দলীয় নেতৃত্বের সঙ্গে আমাদের বিশ্বাসের পার্থক্য তৈরি হয়েছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে আমরা একটি ন্যায়সঙ্গত এবং প্রয়োজনীয় সামাজিক আন্দোলন হিসেবে দেখি, যেখানে দেশের বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার মানুষ কোটা ব্যবস্থা সংস্কারের দাবিতে অংশগ্রহণ করেছে। কিন্তু আমাদের দলের নেতৃত্ব এই আন্দোলনকে সমর্থন দেয়নি, বরং এর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। ফলে আমরা এই বিরোধের মুখোমুখি হয়েছি।"
নেতারা আরও জানান যে, সারাদেশে জাতীয় ছাত্র সমাজের অনেক নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে, যারা এই আন্দোলনের পক্ষে অবস্থান নিয়েছিল। তারা দাবি করেন যে, দল থেকে এ বিষয়ে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি এবং বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের প্রতি দলের নেতিবাচক মনোভাব তাদের পক্ষে মেনে নেওয়া সম্ভব হয়নি। "দলীয় নেতৃত্বের সঙ্গে এই বিরোধপূর্ণ অবস্থান আমাদের বাধ্য করেছে পদত্যাগ করতে," তারা বলেন।
এই পদত্যাগের ঘটনায় জাতীয় পার্টির নেতৃত্বের প্রতিক্রিয়া এখনও পুরোপুরি জানা যায়নি। তবে দলীয় অন্দরমহলে এই পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। কিছু সূত্রে জানা গেছে, দলীয় নেতারা মনে করেন, ছাত্র সংগঠনের নেতারা স্বতন্ত্রভাবে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এবং দলীয় নেতৃত্বের সঙ্গে পরামর্শ ছাড়াই তারা আন্দোলনে অংশ নিয়েছেন। এর ফলে তাদের পদত্যাগকে নেতিবাচক দৃষ্টিতে দেখা হতে পারে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, জাতীয় ছাত্র সমাজের শীর্ষ নেতৃত্বের এই পদত্যাগ পার্টির অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বকে আরও উন্মোচিত করেছে। বিশেষ করে কোটা সংস্কার ও বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মতো জাতীয় ইস্যুগুলোতে দলীয় নেতৃত্বের সঙ্গে সংঘাতময় সম্পর্ক গড়ে ওঠা, ছাত্র সংগঠনের মধ্যে অসন্তোষের জন্ম দিয়েছে। এটি শুধু ছাত্র সংগঠনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং জাতীয় পার্টির সাধারণ সমর্থকদের মধ্যেও এই বিষয়ে বিভাজন সৃষ্টি করতে পারে।
এই পদত্যাগের ফলে জাতীয় ছাত্র সমাজে নতুন নেতৃত্বের আবির্ভাব ঘটতে পারে, যারা হয়তো দলের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে কাজ করবে। তবে, আল-মামুন এবং আশরাফুল ইসলাম খানের পদত্যাগের সিদ্ধান্ত জাতীয় ছাত্র রাজনীতিতে একটি বিশেষ প্রভাব ফেলতে পারে। বিশেষত তারা যদি বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে আরও সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করতে থাকেন, তাহলে তাদের নেতৃত্বে নতুন একটি ছাত্র আন্দোলন গড়ে ওঠার সম্ভাবনাও রয়েছে।