গত ৫ আগস্ট বাংলাদেশে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর আওয়ামী লীগ সরকার পতন হয়। সরকারের পতনের পর থেকেই বেশিরভাগ আওয়ামী লীগ নেতা আত্মগোপনে চলে যান। তাদের মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত নাম ছিল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সাবেক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তার কোথায় অবস্থান করছেন তা নিয়ে তৈরি হয় একাধিক গুঞ্জন। কেউ বলছেন তিনি দেশেই আছেন, আবার কেউ বলছেন তিনি দেশ ছেড়েছেন।
বিশ্বস্ত একাধিক সূত্র জানিয়েছে, ওবায়দুল কাদের পাঁচ দিন আগে দেশ ত্যাগ করেছেন। বিশেষত, গত বুধবার মধ্যরাতে তিনি যশোর সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশ করেন বলে গুঞ্জন ছড়িয়েছে। এসব সূত্রের দাবি, কাদের বর্তমানে ভারতে অবস্থান করছেন এবং সেখান থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। যদিও তার এই যাত্রার বৈধ কোনো তথ্য নেই কারণ তার কাছে পাসপোর্ট ও ভিসা নেই বলে জানা গেছে।
গুঞ্জন রয়েছে যে, ওবায়দুল কাদের আগস্ট মাসের তৃতীয় সপ্তাহে রাজধানীর গুলশান এলাকা থেকে যশোর সীমান্তের কাছাকাছি যান। সেখানে একটি প্রভাবশালী সরকারি কর্মকর্তার নিকটাত্মীয়ের শ্বশুরবাড়িতে অবস্থান করে তিনি ভারতে পালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। এসময় তিনি ঢাকার গুলশানে একটি বাড়িতে আত্মগোপন করেছিলেন, যেখানে ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইসহাক আলী খান পান্নাও আত্মগোপনে ছিলেন। তবে ২৪ আগস্ট ইসহাক আলী ভারতে পালানোর চেষ্টা করতে গিয়ে সীমান্তে মারা যান।
আওয়ামী লীগের কিছু পলাতক নেতা জানিয়েছেন, ওবায়দুল কাদের ভারতে পৌঁছেছেন বলে তারা শুনেছেন, তবে তার সঙ্গে দেখা হয়নি বা কোনো টেলিফোন যোগাযোগও হয়নি। তাদের ধারণা, জটিলতা এড়াতে তিনি দিল্লিতে থাকতে পারেন। ভারতে থাকা অন্যান্য পলাতক নেতারা কলকাতায় অবস্থান করছেন এবং তারা কাদেরের খোঁজ নেওয়ার চেষ্টা করছেন। তবে কলকাতায় দেখা হলে পরিস্থিতি বিব্রতকর হয়ে উঠতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন অনেকে। কারণ তারা মনে করেন, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের জন্য ওবায়দুল কাদেরকেই দায়ী করা উচিত।
অন্যদিকে, কেউ কেউ দাবি করেছেন, কয়েক দফা সীমান্ত পার হওয়ার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছেন ওবায়দুল কাদের। এ কারণেই তিনি এখনো সীমান্ত এলাকায় অবস্থান করছেন এবং ভারতে প্রবেশের জন্য অপেক্ষা করছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। এরমধ্যে কিছু নেতারা বলেছেন, সীমান্ত পার হওয়ার চেষ্টায় তিনি বেশ কয়েকবার ব্যর্থ হয়েছেন, কিন্তু এখনো আশেপাশেই আছেন।
এদিকে, বেনাপোল ইমিগ্রেশন চেকপোস্টের পরিদর্শক ইমতিয়াজ ভূঁইয়া জানিয়েছেন, গত ১৫ দিনের মধ্যে কোনো ভিআইপি বেনাপোল চেকপোস্ট দিয়ে ভারতে যাননি। সাম্প্রতিক সময়ে আলোচিত কোনো ব্যক্তি এই চেকপোস্ট ব্যবহার করে সীমান্ত পার হওয়ার খবরও তাদের কাছে নেই। ফলে, ওবায়দুল কাদেরের পালিয়ে যাওয়ার গুঞ্জনের সত্যতা নিয়ে সংশয় থেকেই যাচ্ছে।
ভারতে আত্মগোপনে থাকা আওয়ামী লীগের কিছু নেতার ধারণা, ওবায়দুল কাদের যদি দিল্লিতে অবস্থান করেন, তাহলে তাদের সঙ্গে তার যোগাযোগ হতে পারে। তবে নেতারা জানিয়েছেন, তারা এখন পর্যন্ত তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেননি। তাদের অনেকেই ওবায়দুল কাদেরকে সরাসরি দোষারোপ করছেন আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের জন্য। তাদের মতে, তার ভুল পদক্ষেপ ও রাজনৈতিক চালগুলোই সরকারকে বিপদের মুখে ঠেলে দিয়েছে।
ওবায়দুল কাদেরের দেশত্যাগ নিয়ে অনেক প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে। তার পাসপোর্ট ও ভিসা ছাড়া বিদেশ যাত্রা এবং তার সীমান্ত পাড়ি দেওয়ার গুঞ্জন একাধিক সূত্রে উঠে এলেও, সরকারিভাবে কোনো নিশ্চিত তথ্য পাওয়া যায়নি। দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে এই ধরনের খবরগুলো ব্যাপক গুঞ্জনের জন্ম দিলেও, এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি কাদের আসলে কোথায় অবস্থান করছেন।