রাজনীতি

ছাত্র আন্দোলন নিয়ন্ত্রণ করেছে জামায়াত-শিবির: সজীব ওয়াজেদ জয়

উপ-সম্পাদক

উপ-সম্পাদক

বৃহস্পতিবার, ১৭ অক্টোবর, ২০২৪
ছাত্র আন্দোলন নিয়ন্ত্রণ করেছে জামায়াত-শিবির: সজীব ওয়াজেদ জয়
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে এবং প্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় এক ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে দাবি করেছেন যে, কোটাবিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে সাম্প্রতিক ছাত্র আন্দোলন, এমনকি সরকার পতন পর্যন্ত সমস্ত ছাত্র আন্দোলনকে জামায়াত-শিবির নিয়ন্ত্রণ করেছে। এই মন্তব্যটি ১৬ অক্টোবর ২০২৪ তারিখে তিনি তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে প্রকাশ করেন। তার এই মন্তব্য দ্রুতই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে এবং বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।
সজীব ওয়াজেদ জয় তার পোস্টে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেন, “আমরা অনলাইনে দেখেছি কীভাবে ছাত্রদের আন্দোলনকে জামাত-শিবির নিয়ন্ত্রণ করেছে, এমনকি তারা নিজেরাও তা স্বীকার করেছে।” জয় দাবি করেন যে, এই দলগুলি তাদের সংগঠন এবং শক্তি ব্যবহার করে ছাত্রদের আন্দোলনের পিছনে প্রভাব বিস্তার করেছে এবং তাদের রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের জন্য এই আন্দোলনগুলোকে ব্যবহার করেছে। তিনি আরও দাবি করেন, “বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিচিহ্ন মুছে ফেলতে তাদের কর্মকাণ্ডও আপনারা দেখেছেন।”
পোস্টে জয় আরও বলেন, জামায়াত-শিবির শুধু ছাত্র আন্দোলন নিয়ন্ত্রণ করেই ক্ষান্ত হয়নি, তারা এখন মুক্তিযুদ্ধের সংগ্রামে বঙ্গবন্ধুর অবদানকে অস্বীকার করার চেষ্টা করছে। তিনি উল্লেখ করেন যে, এ ধরনের কার্যকলাপ আসলে তাদের রাজাকার পরিচয়কে আরও বেশি প্রকাশ করছে। তার বক্তব্যে তীব্র সমালোচনা উঠে আসে, বিশেষ করে বঙ্গবন্ধুর অবদান নিয়ে প্রশ্ন তোলার বিষয়টি নিয়ে।
জয়ের পোস্টে আরও উল্লেখ করা হয় যে, জামায়াত-শিবিরের আদর্শিক ভিত্তি এবং তাদের ক্রিয়াকলাপ দেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের বিরোধী। তিনি অভিযোগ করেন যে, স্বাধীনতা বিরোধীরা আবারও রাজনীতি এবং সামাজিক প্রেক্ষাপটে নিজেদের পুনরুদ্ধার করার চেষ্টা করছে। জয় বলেন, “তারা নিজেদেরকে রাজাকার হিসেবে আবার জাতির সামনে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছে।”
কোটাবিরোধী আন্দোলন ২০১৮ সালে শুরু হয়, যা প্রথমে সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধার কোটা সংস্কারের দাবিতে শুরু হয়েছিল। সেই সময় অনেক ছাত্র-ছাত্রী রাস্তায় নেমে আন্দোলন করেছিল। তবে জয় তার বক্তব্যে দাবি করেছেন যে, এই আন্দোলনের নেপথ্যে জামায়াত-শিবিরের মতো দলগুলি কার্যকরভাবে কাজ করেছিল এবং তাদের রাজনৈতিক এজেন্ডাকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য তারা এ আন্দোলনকে ব্যবহার করেছে।
সরকারবিরোধী আন্দোলনের সঙ্গে জামায়াত-শিবিরের সম্পৃক্ততা নিয়ে জয় যে অভিযোগ তুলেছেন, তা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। যারা সরকার সমর্থক, তারা এই মন্তব্যকে সমর্থন করছেন এবং বলছেন যে, জামায়াত-শিবির বরাবরই শিক্ষার্থীদের বিভ্রান্ত করে তাদের ব্যবহার করে এসেছে। অন্যদিকে, বিরোধী দলের নেতারা এই অভিযোগকে সম্পূর্ণ অস্বীকার করে বলেছেন যে, ছাত্রদের আন্দোলন সম্পূর্ণ স্বাধীন এবং গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগের একটি অংশ।
সজীব ওয়াজেদ জয়ের এই বক্তব্য থেকে বোঝা যাচ্ছে যে, আগামী দিনে বাংলাদেশে রাজনৈতিক পরিবেশ আরও উত্তপ্ত হতে পারে। ছাত্র আন্দোলন এবং জামায়াত-শিবিরের ভূমিকা নিয়ে আলোচনা এবং বিতর্ক হয়তো আরও বাড়বে। বিশেষ করে সরকার পতনের পরবর্তী সময়ে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি অনেক বেশি সংবেদনশীল এবং জটিল হয়ে উঠেছে। জয় তার পোস্টে সবার প্রতি সতর্ক থাকার আহ্বান জানান এবং জামায়াত-শিবিরের কার্যকলাপ সম্পর্কে সবাইকে সচেতন হতে বলেন।
জয়ের এই মন্তব্যের পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়েছে। কেউ কেউ এই মন্তব্যকে সমর্থন করে বলছেন যে, জামায়াত-শিবিরের মতো রাজনৈতিক দলগুলি বরাবরই দেশের স্থিতিশীলতা নষ্ট করার চেষ্টা করে আসছে। অন্যদিকে, অনেকেই এই মন্তব্যকে রাজনৈতিক কৌশল হিসেবে দেখছেন এবং বলছেন যে, ছাত্রদের আন্দোলনকে রাজনৈতিকভাবে ব্যর্থ করার চেষ্টা করা হচ্ছে।
সামগ্রিকভাবে, সজীব ওয়াজেদ জয়ের এই বক্তব্য দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির একটি প্রতিফলন। তার এই মন্তব্য দেশব্যাপী চলমান রাজনৈতিক বিতর্ককে আরও উসকে দিয়েছে এবং ভবিষ্যতে ছাত্র আন্দোলন, জামায়াত-শিবিরের ভূমিকা, এবং রাজনৈতিক দলগুলোর কৌশল নিয়ে নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে আলোচনা হতে পারে।