তারেক রহমান কবে দেশে ফিরবেন?

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে থাকা মামলাগুলো প্রত্যাহারের জন্য বিএনপি সমর্থিত আইনজীবীরা ক্রমেই সক্রিয় হচ্ছেন। ১৫ অক্টোবরের একটি সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম দাবি করেছে, তারেক রহমানের বিরুদ্ধে দায়ের করা সব মামলা দ্রুত প্রত্যাহার করা হোক। অন্যথায় আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছে তারা। তবে তারেক রহমান কবে দেশে ফিরবেন, তা নিয়ে দলটির মধ্যে ধোঁয়াশা বিরাজ করছে।

দেশে ফিরবেন কবে?

৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অনেকেই ভাবছিলেন, তারেক রহমান দ্রুত দেশে ফিরবেন। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকারের আড়াই মাস পার হয়ে গেলেও তারেক রহমানের দেশে ফেরা নিয়ে দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে এক ধরনের অনিশ্চয়তা রয়ে গেছে। প্রশ্ন হচ্ছে, চলমান মামলাগুলো থাকার পরও তিনি কি দেশে ফিরবেন, নাকি মামলার নিষ্পত্তির জন্য অপেক্ষা করবেন?

তারেক রহমানের উপদেষ্টা মাহদী আমিন জানান, তারেক রহমান শুধু তার নিজের মামলা নিয়ে চিন্তিত নন। বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে অসংখ্য মামলা করা হয়েছে, যা তিনি প্রত্যাহারের দাবি তুলছেন। মাহদী বলেন, তারেক চান, প্রতিটি মামলা প্রত্যাহার হোক এবং মানবাধিকার প্রতিষ্ঠিত হোক। দেশের রাজনৈতিক ও আইনগত পরিবেশ সঠিক না হলে তিনি দেশে ফিরতে ইচ্ছুক নন।

মামলাগুলোর প্রত্যাহারের দাবি

বিএনপি দাবি করে আসছে, আওয়ামী লীগ সরকারের গত ১৫ বছরে বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে প্রায় এক লক্ষ ৪৫ হাজার মামলা দায়ের করা হয়েছে। বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের দাবি, রাজনৈতিক প্রতিহিংসার বশে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন মামলা করা হয়েছে। বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক কায়সার কামাল জানান, মামলাগুলো গায়েবি ও মিথ্যা। তিনি বলেন, তারেক রহমান সব সময়ই আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল, এবং মামলাগুলো আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মোকাবেলা করা হবে। তবে একই সঙ্গে তিনি দাবি করেন, মামলাগুলো দ্রুত প্রত্যাহার হওয়া উচিত।

মামলা প্রত্যাহার প্রক্রিয়া

আওয়ামী লীগ সরকার ‘হয়রানিমূলক রাজনৈতিক মামলা’ প্রত্যাহারের জন্য দুটি কমিটি গঠন করেছে। একটি জেলা পর্যায়ের এবং অন্যটি মন্ত্রণালয় পর্যায়ের। এ প্রক্রিয়ায় মামলা প্রত্যাহারের জন্য নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে আবেদন করতে হবে এবং তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে মন্ত্রণালয়ের পর্যায়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তবে বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা মনে করছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে মামলা প্রত্যাহারের প্রক্রিয়া দ্রুত শুরু না হলে তারেক রহমানের দেশে ফেরা আরও অনিশ্চিত হয়ে পড়বে।

কায়সার কামালের মতে, সারা দেশের বিভিন্ন জেলায় এখনো সরকার-নিযুক্ত পাবলিক প্রসিকিউটররা রয়েছেন, যাদের সরানোর আগে মামলা প্রত্যাহারের কাজ ত্বরান্বিত করা সম্ভব নয়।

তারেক রহমানের বিরুদ্ধে মামলাসমূহ

ওয়ান ইলেভেনের সময় তারেক রহমানের বিরুদ্ধে ১৭টি মামলা হয়েছিল। এর মধ্যে অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলাসহ কয়েকটি মামলায় তার সাজা হয়েছে। বর্তমানে ১৫টি মামলা স্থগিত রয়েছে, এবং এসব মামলার মধ্যে কর ফাঁকি ও চাঁদাবাজির অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া মানহানির মামলাসহ আরও প্রায় ৭০টির বেশি মামলা দেশের বিভিন্ন জেলায় তারেক রহমানের বিরুদ্ধে চলমান।

সরকারি মামলা প্রত্যাহারের উদ্যোগগুলো শেষ হলে এবং রাজনৈতিক পরিবেশ স্থিতিশীল হলে তারেক রহমানের দেশে ফেরা নিশ্চিত হতে পারে বলে মনে করেন দলটির নেতারা।