রাজনীতি

ট্রাইব্যুনাল ইজ রেডি, এবার আসো খেলা হবে: মাসুদ সাঈদী

উপ-সম্পাদক

উপ-সম্পাদক

মঙ্গলবার, ১৫ অক্টোবর, ২০২৪
ট্রাইব্যুনাল ইজ রেডি, এবার আসো খেলা হবে: মাসুদ সাঈদী
মাসুদ সাঈদীর সাম্প্রতিক ফেসবুক পোস্ট আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন এবং তাঁর রাজনৈতিক অবস্থান নিয়ে নতুন করে আলোচনার সৃষ্টি করেছে। ২০২৪ সালের ১৫ অক্টোবর, মাওলানা দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর ছেলে মাসুদ সাঈদী তাঁর ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে একটি পোস্ট শেয়ার করেন, যেখানে তিনি ট্রাইব্যুনালের পুনর্গঠন নিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন। পোস্টে তিনি লেখেন, “ট্রাইব্যুনাল ইজ রেডি, এবার আসো খেলা হবে!” তাঁর পোস্টে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের একটি প্রজ্ঞাপনের ছবি শেয়ার করা হয়, যেখানে নতুন ট্রাইব্যুনালের সদস্যদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।
মাসুদ সাঈদী পোস্টে আরও বলেন, “খুনি হাসিনার বানানো আইনে এবং তারই তৈরি ট্রাইব্যুনালে এবার হাসিনা ও তার সহযোগীদের বিচার হবে, ইনশাআল্লাহ। এই দিনটির জন্য আমি আল্লাহর কাছে বহুবার কান্না করেছি।” তিনি তাঁর পোস্টের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সরকার এবং শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেন এবং আসন্ন বিচার প্রক্রিয়ার অপেক্ষায় থাকার কথা উল্লেখ করেন।
নতুন গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদার। এর সাথে ট্রাইব্যুনালের অন্য দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ এবং অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী। এই ট্রাইব্যুনাল মূলত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে, ২০১০ সালে একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য গঠন করা হয়েছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক ছাত্র আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন করেছে। তাদের উদ্দেশ্য ছাত্র আন্দোলনের সময় সংঘটিত হত্যাকাণ্ডকে ‘গণহত্যা’ হিসেবে বিবেচনা করে নতুন বিচার প্রক্রিয়া শুরু করা।
আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল গত সোমবার এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে জানান, গত জুলাই ও আগস্ট মাসে ছাত্র আন্দোলনের সময় যেসব অভিযোগ উঠেছে, তা তদন্ত করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচার করা হবে। ছাত্র আন্দোলনের দমন-পীড়নকে কেন্দ্র করে নতুন তদন্ত শুরু হবে এবং যারা এতে সরাসরি জড়িত, তাদের বিচার করা হবে। এই পদক্ষেপ নিয়ে দেশব্যাপী ব্যাপক আলোচনা চলছে। অনেকেই মনে করছেন, এই ট্রাইব্যুনালের নতুন ভূমিকা সরকার বিরোধী আন্দোলনের অংশ হিসেবে কাজ করবে।
দেলোয়ার হোসেন সাঈদী, যিনি একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য আমৃত্যু কারাদণ্ডে দণ্ডিত হয়েছিলেন, ২০২৩ সালের ১৪ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে কারা হেফাজতে থাকা অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর মৃত্যুর পর থেকে সাঈদীর অনুসারীরা সরকারের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলে আসছেন। দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর চার ছেলের মধ্যে বড় ছেলে রাফিক বিন সাঈদী মারা গেছেন। অন্য দুই ছেলে শামীম সাঈদী আমেরিকায় এবং নাসিম সাঈদী যুক্তরাজ্যে বসবাস করছেন। বর্তমানে দেশে থাকা একমাত্র ছেলে হলেন মাসুদ সাঈদী, যিনি সরকারের সমালোচনায় নিয়মিত সক্রিয়।
মাসুদ সাঈদীর এই পোস্ট দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। তাঁর এই মন্তব্য ও পোস্টকে অনেকে প্রতিক্রিয়াশীল হিসেবে দেখছেন এবং তিনি কীভাবে ট্রাইব্যুনাল নিয়ে এমন বক্তব্য দিচ্ছেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। অন্যদিকে, সাঈদীর সমর্থকরা মনে করছেন, এটি তাঁদের দীর্ঘ প্রতীক্ষার একটি সূচনা মাত্র, যেখানে তাঁরা শেখ হাসিনা সরকার ও তার মিত্রদের বিচারের মুখোমুখি হতে দেখবেন।
এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের রাজনীতি ও বিচারিক প্রক্রিয়া নতুন এক মোড় নিতে যাচ্ছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের পুনর্গঠন এবং নতুন মামলার শুনানি দেশজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।