রাজনীতি

বন্যার কারণে সৃষ্ট দুর্ভোগ নিরসনে সরকারের তৎপরতা নেই: রিজভী

উপ-সম্পাদক

উপ-সম্পাদক

রবিবার, ২০ অক্টোবর, ২০২৪
বন্যার কারণে সৃষ্ট দুর্ভোগ নিরসনে সরকারের তৎপরতা নেই: রিজভী
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী সরকারের প্রতি তীব্র সমালোচনা করে বলেছেন, বন্যার কারণে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সৃষ্ট দুর্ভোগ নিরসনে সরকারের কার্যকরী তৎপরতা নেই। রোববার রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি দাবি করেন, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের দুর্দশা নিরসনে সরকারের উদাসীনতা জনগণের ভোগান্তিকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে।
রিজভী বলেন, শেরপুর, নেত্রকোণা, ময়মনসিংহসহ উত্তরাঞ্চলীয় জেলাগুলো বন্যায় ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রবল বর্ষণের ফলে কুষ্টিয়া, যশোর, খুলনার মতো জেলাগুলোতেও জলাবদ্ধতার কারণে জনগণ চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। কৃষক এবং খামারিরা বন্যার কারণে তাদের ফসল এবং সম্পদ হারিয়েছেন, কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে তাদের পুনর্বাসনে কোনো উদ্যোগ চোখে পড়ছে না।
তিনি আরও উল্লেখ করেন, পূর্বাঞ্চলে যখন বন্যা হয়েছিল, তখন সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে ব্যাপক তৎপরতা দেখা গিয়েছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক বন্যায় সেই ধরনের তৎপরতা অনুপস্থিত। তিনি দাবি করেন, এই বন্যায় কৃষক এবং খামারিদের পুনর্বাসন না করলে তাদের জীবনযাত্রা স্বাভাবিক রাখা কঠিন হবে। বিশেষ করে রোপা আমন ও সবজি চাষিরা ভয়াবহ ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন।
রিজভী বলেন, বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন শেরপুর ও নেত্রকোণার রোপা আমন এবং সবজি চাষিরা। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, শুধুমাত্র নেত্রকোণা জেলার পাঁচ উপজেলায় ২০ হাজার ৯০৯ হেক্টর জমির রোপা আমন ক্ষেত সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়েছে, যার ফলে ৭০ হাজারেরও বেশি কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। ক্ষতির আর্থিক মূল্য প্রায় ৪০০ কোটি টাকা। এছাড়াও সবজি চাষে ১৬০ হেক্টর জমির ক্ষতি হয়েছে, যার আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ১৩ কোটি টাকা। শেরপুর জেলাতেও ১ লাখ ৭৭ হাজার কৃষক বন্যার ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, যেখানে ৩৭ হাজার হেক্টর জমির ফসল ধ্বংস হয়েছে।
এছাড়া, মৎস্য খামার ও গবাদি পশুর খামারগুলোতেও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। প্রায় ১৭৩০টি পুকুর এবং মৎস্য খামার বন্যার পানিতে ডুবে গেছে, যার আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৮ কোটি টাকা।
সরকারের প্রতি দাবিসমূহ
রুহুল কবির রিজভী বিএনপির পক্ষ থেকে সরকারের প্রতি একাধিক দাবি উত্থাপন করেন। তিনি বলেন, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক ও খামারিদের সহায়তা করতে হবে এবং তাদের জন্য দ্রুত পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে। তার দাবিগুলো হলো:
১. বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের জন্য ত্রাণ সহায়তা: যাদের জমির ফসল বিনষ্ট হয়েছে, তাদের সঠিক তালিকা প্রণয়ন করে আগামী ফসল ওঠা পর্যন্ত সর্বাত্মক ত্রাণ সহায়তা প্রদান করতে হবে।
২. সুদমুক্ত কৃষি ঋণ প্রদান: আগামী ফসলের জন্য সুদমুক্ত কৃষি ঋণ প্রদান করতে হবে এবং বিনামূল্যে সার, বীজ, কীটনাশক ও সেচের তেলের ব্যবস্থা করতে হবে।
৩. রবি শস্যের বীজ প্রদান: আগামী ফসলের আগে রবি শস্য উৎপাদনের জন্য ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের মধ্যে রবি শস্যের বীজ বিনামূল্যে বিতরণ করতে হবে।
৪. ক্ষতিগ্রস্ত খামারিদের সহায়তা: যেসব মৎস্য, হাঁস-মুরগি ও গবাদি পশুর খামার ধ্বংস হয়েছে, তাদের পুনরায় প্রতিষ্ঠার জন্য সুদমুক্ত ঋণসহ অন্যান্য সহায়তা প্রদান করতে হবে।
৫. আবাসন পুনর্গঠন: বন্যায় যাদের বাড়িঘর আংশিক বা সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়েছে, তাদের তালিকা তৈরি করে ঘর-বাড়ি পুনঃনির্মাণে সহায়তা করতে হবে।
৬. বাঁধ ও অবকাঠামো পুনর্গঠন: নদীর বাঁধ ভেঙে যেসব গ্রাম বিলীন হয়েছে, সেইসব এলাকায় বসবাসকারীদের সরকারি খাস জমিতে পুনর্বাসন করতে হবে। ভেঙে যাওয়া বাঁধ, রাস্তা, মসজিদ, মন্দিরসহ অন্যান্য ধর্মীয় ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পুনঃনির্মাণ করতে হবে।
৭. শিক্ষাসামগ্রী বিতরণ: বন্যার পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষা সামগ্রী ও সরকারি সহায়তা প্রদান করতে হবে।
৮. স্বাস্থ্যসেবা: বন্যার পরে রোগ-বালাই থেকে মুক্তি পেতে পর্যাপ্ত ওষুধ সরবরাহ এবং বিনামূল্যে চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। প্রয়োজনে মেডিকেল ক্যাম্প স্থাপন করে চিকিৎসা প্রদান করতে হবে।