রাজনীতি

স্বাস্থ্য উপদেষ্টা সক্রিয়ভাবে কাজ না করায় ক্ষোভ সারজিস আলমের

উপ-সম্পাদক

উপ-সম্পাদক

মঙ্গলবার, ১৫ অক্টোবর, ২০২৪
স্বাস্থ্য উপদেষ্টা সক্রিয়ভাবে কাজ না করায় ক্ষোভ সারজিস আলমের
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলম মঙ্গলবার সাভারের সিআরপি (পুনর্বাসন কেন্দ্র) পরিদর্শন করে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কাজে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। সিআরপিতে আহত ছাত্রদের সেবা এবং পুনর্বাসন সংক্রান্ত অব্যবস্থাপনা দেখে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন তিনি। সারজিস আলম মনে করেন, স্বাস্থ্য উপদেষ্টা এবং মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের আরও সক্রিয়ভাবে কাজ করা উচিত ছিল।
সাভারে সিআরপি পরিদর্শনের সময় সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে সারজিস আলম বলেন, “সবচেয়ে সক্রিয় হওয়া উচিত ছিল স্বাস্থ্য উপদেষ্টার। তার উচিত ছিল সব হাসপাতালে ঘুরে ঘুরে অফিস করা, নিশ্চিত করা যে সব রোগী সঠিক চিকিৎসা পাচ্ছে।” তিনি আরও উল্লেখ করেন, “আমরা ছাত্র, আমাদের আর্থিক সংকট আছে। আমরা সব সময় গাড়ি বা টাকা সহজে ব্যবস্থা করতে পারি না। অথচ আমাদের স্বেচ্ছাসেবকরা পরিবার ছেড়ে, দিন-রাত পরিশ্রম করছে। তাদের কাছে সরকারের সাহায্য পাওয়ার দাবি থাকা উচিত, কিন্তু তারা সেটাও পাচ্ছে না।”
সারজিস আলম সরাসরি অভিযোগ তোলেন যে, সরকারি কর্মকর্তারা এবং স্বাস্থ্য উপদেষ্টা তাদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করছেন না। তিনি বলেন, “স্বাস্থ্য উপদেষ্টাসহ সংশ্লিষ্টদের উচিত ছিল দৌড়ে বেড়ানো, যেন কোনো আহত বা অসুস্থ ছাত্র প্রয়োজনীয় সহায়তা থেকে বঞ্চিত না হয়। অথচ তাদের কোনো ধরনের কার্যকর উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না।”
পরিদর্শন শেষে সারজিস আলম ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, “দুই-আড়াই মাস ধরে কেন সরকারের পক্ষ থেকে কেউ বলছে না যে তারা আর্থিক সহযোগিতা পেয়েছে? একজন আহত ছাত্রকে যদি এক লাখ টাকা সাহায্য দেওয়া হয়, তাহলে কি ১০০ কোটি টাকা লাগবে? কিন্তু সরকার সেই সামান্য টাকাও দিতে পারছে না, কেন আমার আহত ভাইয়েরা এই ধরনের অভিযোগ তুলবে?” তিনি আরও যোগ করেন, “একটা রাষ্ট্রের জন্য ১০০ কোটি টাকা খুব বড় কিছু নয়, কিন্তু সেই সহায়তাটুকু পেতে আমরা ব্যর্থ হচ্ছি।”
সিআরপি পরিদর্শনের সময় সারজিস আলম সেখানে নানা অব্যবস্থাপনা দেখতে পান। সিআরপির বিরুদ্ধে অভিযোগের মধ্যে ছিল রোগীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার, নোংরা পরিবেশ, এবং সঠিক চিকিৎসার অভাব। তিনি উল্লেখ করেন, “আহত প্রায় অর্ধশতাধিক ছাত্র সিআরপিতে চিকিৎসা নিচ্ছে, অথচ তারা নানান ধরনের অভিযোগ করেছেন। তাদের অভিযোগগুলো সরকার বা কর্তৃপক্ষের কানে পৌঁছানো দরকার, কিন্তু আমরা সেটি দেখতে পাচ্ছি না।”
সারজিস আলম এবং তার দল সেখানে রোগীদের কথা শোনেন এবং তাদের সমস্যাগুলো নোট করেন। তিনি বলেন, “যে ছাত্ররা হাসপাতালে শুয়ে আছে, তারা নিজেরা তো সরকারের কাছে সাহায্য চাইতে যেতে পারবে না। তাই সরকারেরই উচিত তাদের কাছে যাওয়া, তাদের সমস্যাগুলো দ্রুত সমাধান করা।”
সারজিস আলম স্বাস্থ্য উপদেষ্টার দায়িত্বহীনতার বিষয়ে কড়া ভাষায় কথা বলেন এবং দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, “আমাদের দাবি, যত দ্রুত সম্ভব সংশ্লিষ্ট সবাইকে সক্রিয়ভাবে কাজ করতে হবে। যেখানে যেখানে আহত ছাত্ররা আছেন, সেখানে গিয়ে তাদের খোঁজ নিতে হবে। দ্রুত তাদের কাছে আর্থিক সহায়তা পৌঁছে দিতে হবে।” তিনি আরও বলেন, “আমাদের জনগণের প্রতি দায়বদ্ধতা রয়েছে। আমরা যতটুকু পেরেছি, সবখানে গিয়েছি এবং সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে যারা যেতে পারিনি তাদের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছি। এখন সরকারের উচিত তাদের জায়গা থেকে সক্রিয় ভূমিকা পালন করা।”
গত কয়েক মাস ধরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সহিংসতা ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। আন্দোলনে অংশ নেওয়া ছাত্রদের মধ্যে অনেকেই গুরুতরভাবে আহত হয়েছেন এবং তাদের পুনর্বাসনের জন্য সরকারি উদ্যোগের প্রয়োজন। তবে সারজিস আলমের মতে, সরকার তাদের যথাযথভাবে সহায়তা করছে না।
এই পরিস্থিতিতে সারজিস আলমের নেতৃত্বে ছাত্রদের একটি দল সিআরপিতে গিয়ে পরিস্থিতি সরেজমিনে দেখেন এবং সেখান থেকে সরকারের দায়িত্বহীনতার বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি জোর দিয়ে বলেন যে, যত দ্রুত সম্ভব সরকারের পক্ষ থেকে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া না হলে, ছাত্রদের এই ক্ষোভ আরও বাড়তে পারে।