এভিয়েশন

উড়োজাহাজের ইঞ্জিন কিভাবে কাজ করে?

নিজস্ব প্রতিবেদক

নিজস্ব প্রতিবেদক

রবিবার, ৪ সেপ্টেম্বর, ২০২২
উড়োজাহাজের ইঞ্জিন কিভাবে কাজ করে?

উড়োজাহাজ বা প্লেন চালানো হয় জেট ইঞ্জিনের সাহায্যে, যেগুলোকে গ্যাস টার্বাইন ইঞ্জিন নামে ও ডাকা হয়।

স্থলপথে চালিত যানবাহন গুলো চাকা ঘুরানোর সাহায্যে একস্থান থেকে অন্য স্থানে যায়। কিন্তু উড়োজাহাড়ের সেই সুযোগ নেই।

উড়োজাহাজের প্রপেলার বা ইঞ্জিন বাতাসের বিপরীতে প্রচন্ড থ্রাস্ট বা ধাক্কা দেয়ার মাধ্যমে সেগুলোকে উড়িয়ে নিয়ে যায়।

বর্তমান বিশ্বের সবচাইতে বড় যাত্রীবাহী বিমান হলো এয়ারবাস A-380। টেকঅফ করার সময় যার ওজন হয় প্রায় পাচশো টনের ও বেশি।

একে আকাশে উড়াতে চারটি জেট ইঞ্জিনের প্রয়োজন হয়। যেগুলো একত্রে তিন লক্ষ পাউন্ড  থ্রাস্ট উৎপন্ন করে।

সাধারণত উড়োজাহাড়ের ইঞ্জিন গুলোর সামনের অংশ প্রচুর পরিমানে বাতাস চুষে নেয় এবং সেগুলোকে প্রচন্ড গতিতে পিছন দিক দিয়ে বের করে দেয়।

এর সাহায্যে প্রচন্ড পরিমানে থ্রাস্ট উৎপন্ন হয়। যা উড়োজাহাজকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যায়।

জেট ইঞ্জিনের সাধারণত চারটি পার্ট থাকে। যে গুলো হলো ইনটেক ফ্যান, কম্প্রেসার, কম্বাশন চেম্বার এবং এক্সহস্ট।

ইনটেক ফ্যান বায়ু মন্ডল থেকে প্রচুর পরিমানে বাতাস চুষে নিয়ে ইঞ্জিনের ভেতরে প্রবেশ করায়। এরপর সেগুলোকে পাঠানো হয় কম্প্রেসারের মধ্যে।

কম্প্রেসার বাতাসকে সংকুচিত করে এবং সেগুলোকে প্রচন্ড গতিতে কম্বাশন চেম্বারের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত করে।

কম্বাশন চেম্বারের মধ্যে ফুয়েল ইনজেক্ট করানোর পর যখন সেটা জ্বলতে থাকে, তখন কম্পেসার থেকে প্রচন্ড গতিতে প্রবাহিত হওয়া বাতাস ফুয়েল কে সম্পূর্ন ভাবে জ্বলতে সাহায্য করে।

এক্ষেত্রে কম্প্রেসার চেম্বারটি যদি না থাকতো তাহলে কম্বাশন চেম্বারের মধ্যে জ্বালানী খুব ধীরে জ্বলতো।

ফলে উড়োজাহাজ উড়ানোর মতো শক্তি উৎপাদন করা সম্ভব হতো না।

কম্বাশন চেম্বারে ফুয়েলকে বার্ন বা জ্বালানোর সময় এর তাপমাত্রা প্রায় দুই হাজার ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত হয়ে থাকে।

এসময় ইঞ্জিনে প্রবাহিত হওয়া বাতাস প্রচন্ড পরিমানে গরম হয়ে যায়। সেই সাথে উৎপন্ন হয় বিভিন্ন ধরনের গ্যাস।

যেগুলে অনেক বেশি উত্তপ্ত থাকে। তখন বাতাস গুলো সজোড়ে বেরিয়ে যেতে চায়।

কিন্তু সামনের দিক থেকে সেটা কোনো ভাবেই সম্ভব নয়। তাই সেগুলে পিছনের দিকে প্রচন্ড গতিতে বেরিয়ে যেতে থাকে, যাকে বলা হয় এক্সহস্ট।

তবে এক্ষেত্রে ইনটেক ফ্যানের মাধ্যমে যে পরিমান বাতাস ইঞ্জিনের ভিতর প্রবেশ করেছিলো তার মাত্র দশ থেকে পনেরো ভাগ ইঞ্জিনের কোর পার্ট দিয়ে প্রবাহিত হয়।

বাকি পঁচাশি থেকে নব্বই ভাগ বাতাসই ইঞ্জিনের বাইরে দিয়ে বাইপাস হয়ে যায়। যেটি ইঞ্জিনের ফুয়েল ইপিসিয়েন্সি বাড়ায় এবং ইঞ্জিনকে ঠান্ডা রাখে।


মূলত কম্বাশন চেম্বারে ফুয়েল বার্ন করার পর যে এক্সহস্ট গ্যাস বাইরের দিকে বেরিয়ে যায় ঠিক সেই জায়গায় একটা টার্বাইন যুক্ত থাকে।

যেটা গ্যাসে প্রেসারে ঘুরতে থাকে। টার্বাইনের সাথে যুক্ত থাকে ইনটেক ফ্যান। ফলে টার্বাইনের সাথে ইনটেক ফ্যান ও ঘুরতে থাকে।

তাহলে পুরো বিষয়টা যা দাঁড়ালো তা হল ইনটেক ফ্যানটা ঘুরলেই কাজ করবে কম্বাশন চেম্বার। আবার কম্বাশন চেম্বার কাজ করলে টার্বাইন ও কাজ করবে।

আর টার্বাইন কাজ করলে ইনটেক ফ্যান কাজ করবে। কিন্তু এই প্রক্রিয়া চলমান রাখতে হলে কোন না কোনো একটা অংশকে আগে কাজ করতে হবে।

এছাড়া পুরো প্রক্রিয়াটি চলতে পারবে না। আর এই কাজটি করে মূলত উড়োজাহাজের পিছনে লাগানো ছোট্ট একটি ইঞ্জিন।

এই ইঞ্জিন থেকে যে শক্তি উৎপন্ন হয় সেটা দিয়েই বড় ইঞ্জিনটিকে চালানো হয়। এক্ষেত্রে ছোটো ইঞ্জিনটা অল্পকিছু সময়ের জন্যই চলে।

বড় ইঞ্জিনটি চালু হলেই সেটাকে বন্ধ করে দেয়া হয়।