এভিয়েশন

অস্বাভাবিক বিমান ভাড়ায় বিপাকে মধ্যপ্রাচ্যের প্রবাসীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক

নিজস্ব প্রতিবেদক

রবিবার, ২ অক্টোবর, ২০২২
অস্বাভাবিক বিমান ভাড়ায় বিপাকে মধ্যপ্রাচ্যের প্রবাসীরা

বাংলাদেশ থেকে মধ্যপ্রাচ্যগামী এয়ারলাইন্সগুলোর ভাড়া অত্যাধিক মাত্রায় বৃদ্ধি পাওয়ায় বিপাকে পড়েছে প্রবাসী শ্রমিকরা। সম্প্রতি এমিরেটস এয়ারলাইন্স ও কাতার এয়ারলাইন্সসহ বেশ কয়েকটি বিমান সংস্থার ভাড়া আগের তুলনায় বেড়ে গেছে।


সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ওমান, বাহরাইন, কুয়েত, কাতারসহ মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশেই বিপুল পরিমাণ বাংলাদেশি শ্রমিক কর্মরত রয়েছে।  


বাংলাদেশ সরকারের জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, সৌদি আরব বর্তমানে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শ্রমবাজার। তালিকায় তারপর রয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের অন্য দেশগুলো। 


প্রবাসী শ্রমিকদের অধিকাংশেরই আর্থিক অবস্থা খুবই দুর্বল। অনেকেই অধিক উপার্জনের আশায় নিজেদের সামান্য সহায় সম্বলটুকুও বিক্রি করে কিংবা মোটা অংকের ঋণ নিয়ে বিদেশ পাড়ি জমায়।


উদ্দেশ্য কাজের মাধ্যমে নিজেরদের ভাগ্য ফেরানো। উপার্জনের সিংহাভাগই তারা পাঠিয়ে দেয় দেশে থাকা পরিবারকে। বছরে একবার ছুটি পেলে ছুটে আসে দেশে পরিবারের কাছে।


কিন্তু অতিমাত্রায় বিমান ভাড়া বেড়ে যাওয়ায় স্বল্প আয়ের এই শ্রমিক শ্রেণি আর্থিকভাবে দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে।        টিকিট মূল্য এতোটাই বেড়ে গেছে যে তাদের পক্ষে দেশে আসা যাওয়া করাটা এখন বেশ কষ্টসাধ্য হয়ে যাচ্ছে।


তাছাড়া, বিমানের টিকিট মূল্যে দেশভিত্তিক পার্থক্যও পরিলক্ষিত হচ্ছে। দুবাই থেকে বিমানের টিকিট কাটলে যে পরিমাণ খরচ পড়ে, ঢাকা থেকে কাটলে তার চেয়ে খরচ অনেক বেশি পড়ে।


ব্যাপক হারে বিমান ভাড়া বৃদ্ধির কারণে সবচেয়ে বেশী অসুবিধায় পড়তে হচ্ছে নতুন প্রবাসী শ্রমিকদের, যারা প্রথমবারের মত কাজের সন্ধানে মধ্যপ্রাচ্যে্র দেশগুলোতে যাচ্ছে।


ঋণ করে বিদেশ পাড়ি দেয়া এসব নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য বাড়তি টিকিট মূল্য একটি ভয়াবহ সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর্থিক সংকটের পাশাপাশি মানসিক চাপের শিকারও হতে হচ্ছে প্রবাসী শ্রমিকদের।


মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক এয়ারলাইন্সগুলো ছাড়াও বাংলাদেশের বেসরকারি বিমানসংস্থা ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্স উক্ত দেশগুলোতে যাতায়াত করে।


করোনা মহামারীর পর মধ্যপ্রাচ্যগামী ইউএস বাংলার বিমান ভাড়াও আগের তুলনায় বাড়ানো হয়েছিল প্রায় দ্বিগুণ। কারণ হিসেবে দায়ী করা হয় বিমানের জ্বালানী খরচ বৃদ্ধিকে। জেট ফুয়েলের দাম আগের তুলনায় বেড়েছে ১৫০ শতাংশ।   


বিমান পরিচালনার সাথে জ্বালানী মূল্যের নিবিড় সম্পর্ক থাকার কারণেই দাম বাড়লে, বিমানের টিকিট মূল্যও সমানুপাতিক হারে বেড়ে যায়।      


আরও একটি কারণ ওয়ান ওয়ে ট্রিপ। বিমান ভ্রমণের ক্ষেত্রে রাউনড ট্রিপ অর্থাৎ, যাওয়া এবং আসা দুইবারের টিকিট একবারে কেটে ফেললে, খরচ কিছুটা কম হয়।  


কিন্তু কোভিড পরবর্তী সময়ে বেড়েছে ওয়ান ওয়ের যাত্রী সংখ্যা। যাদের অধিকাংশই একবারে দেশে ফিরে আসার টিকিট কাটে না।


তাছাড়া শ্রমিকরা ওয়ান ওয়ে টিকিটই কেটে থাকে। তাই ফেরার সময় যাত্রী সংখ্যা কম থাকায়, ফ্লাইট পরিচালনার ব্যয়ে ভারসাম্য আনার জন্য টিকিট মূল্য বাড়িয়ে দেয়া হয়।


করোনা মহামারীর দরুন প্রায় দেড় বছর নিয়মিত ফ্লাইট বন্ধ থাকায়, এখন বিমান সংস্থাগুলো ভাড়া বাড়িয়ে সেই সময়ের লোকসান পূরণ করার চেষ্টা করছে।


বিভিন্ন ট্রাভেল এজেন্সির তরফ থেকে জানা যায় যে, বাংলাদেশ থেকে প্রবাসী শ্রমিকদের বিদেশ যাত্রার চাহিদা বেড়েছে। এটিকে কেন্দ্র করে বিমান সংস্থাগুলো অতিরিক্ত মুনাফা লাভের আশায় ভাড়া বাড়াচ্ছে।


আবার অনেকসময় ট্রাভেল এজেন্সিগুলোর অসাধু আচরণও এর পেছনে ভূমিকা রাখে। তারা সংঘবদ্ধ হয়ে এয়ারলাইন্সগুলো থেকে বিপুল পরিমাণে টিকিট বুকিং দিয়ে রাখে।


এতে একটি কৃত্রিম সংকট তৈরি হয়। প্রয়োজনের সময় অনেকেই পর্যাপ্ত টিকিট পায় না। ফলস্বরূপ বেড়ে যায় বিমানের ভাড়া।