এভিয়েশন

পাইলটদের দুঃস্বপ্নের বিমানবন্দর ভূটানের পারো

নিজস্ব প্রতিবেদক

নিজস্ব প্রতিবেদক

মঙ্গলবার, ৭ মার্চ, ২০২৩
পাইলটদের দুঃস্বপ্নের বিমানবন্দর ভূটানের পারো

পাহাড়ের চূড়ার পাশ কাটিয়ে অবতরণ করছে বিমান। মনে হচ্ছে এই বুঝি পাহাড়ের উপরই আছড়ে পড়বে। শুনতে অবিশ্বাস্য মনে হলেও ভুটানের পারো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ কিংবা উড্ডয়নের সময় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। কখনও দুই চূড়ার ফাঁক গলে, কখনও উঁচুতে উঠে আবার কখনও নিচুতে নেমে পাহাড়ি আকাশ পাড়ি দেয় বিমান। 

এই বিমানবন্দরে বিমান অবতরণ করতে হয় এঁকেবেঁকে। অবতরণের পর প্রচন্ড গতিতে চলমান অবস্থায়ই বিমানকে বাঁক নিতে হয়।অনেক সময় অল্প জায়গায় বিমান ঘুরানো খুব কঠিন হয়ে পড়ে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এখানে বিমান ঘুরাতে বেগ পেতে হয়।যে কারণে বিমানবন্দর নিয়ে কাজ করা বিভিন্ন সংস্থার মতে এটি পৃথিবীর সবচেয়ে দুর্গম বিমানবন্দরের একটি।

হিমালয়ের কারণে আবহাওয়ার দ্রুত পরিবর্তন হওয়ায় বিমানবন্দরটিতে উড়োযান চলাচল প্রায় সময়ই বিঘ্নিত হয়। এখানে রাতে আকাশপথে চলাচল অত্যন্ত বিপজ্জনক বিধায় শুধু দিনের বেলায় বিমান উড্ডয়ন ও অবতরণের অনুমতি পাওয়া যায়।

দিনের পরিষ্কার আকাশে সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত বিমান উঠানামা করে। এসবের পাশাপাশি আছে ঘন কুয়াশা এবং মেঘের প্রভাব। ঘন কুয়াশায় উড়োজাহাজ অবতরণ বা উড্ডয়ন দুটোই বন্ধ থাকে পুরোপুরি। 

অনেক সময়ই ভারী মেঘের কারণে বিমান শিডিউল বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। মেঘ এসে রানওয়েতে কুয়াশাচ্ছন্ন করে তোলে বলে রানওয়েতে বিমান ওঠানো বা নামানো কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।বিমানবন্দরটি ভুটানের পারো জেলা থেকে ৬ কিলোমিটার দূরে ‘পারো ছু’ নদীর তীরে অবস্থিত।

১৯৮৩ সালে সামরিক হেলিপ্যাড থেকে বিমানবন্দরে রূপ নেয় পারো। কিন্তু ২০১১ সাল পর্যন্ত এখানে উড্ডয়ন এবং অবতরণের কাজ করতে পারতেন মাত্র ৮ জন বৈমানিক। বর্তমানে অবশ্য সে সংখ্যা বেড়েছে , তবে এখন পর্যন্ত রাষ্ট্রীয় বিমানসংস্থা দ্রুক এয়ারের বিমান ছাড়া অন্য কোন এয়ারলাইন্সের নিয়মিত ফ্লাইট নেই এখানে।

পারদর্শী বৈমানিক ছাড়া সেখানে উড়োজাহাজ পরিচালনা করা একেবারেই অসম্ভব।এই বিমানবন্দরে বিমান টেকঅফ এবং ল্যান্ডিং করার সময় পাইলটকে খুবই সজাগ থাকতে হয়। এখানে কোন ভুল করার জায়গা নেই। একটি ভুল ডেকে আনতে পারে মহা বিপদ। 

যে কারণে এখানে বিমান পরিচালনার জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণও গ্রহণ করতে হয় বৈমানিকদের। যারা বছরে প্রায় ৩০ হাজার যাত্রী পরিবহন করেন।ভূটানে চারটি বিমানবন্দর থাকলেও, পারোই একমাত্র আন্তর্জাতিক মানের বিমানবন্দর। 

৬ হাজার ৪৪৫ ফুট দৈর্ঘ্যরে রানওয়ের এ বিমানবন্দরে চলাচলের জন্য ব্যবহৃত হয় ছোট আকারের উড়োজাহাজ। কারন এত ছোট ও ঝুকিপূর্ণ  রানওয়েতে বড় আকারের বিমান উড্ডয়ন এবং অবতরন করা পুরোপুরি অসম্ভব ব্যাপার। 

বিমানবন্দরটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে দেড় মাইল উপরে অবস্থিত, যার চারপাশে ছড়িয়ে রয়েছে পাহাড়। এখানকার আশপাশের পাহাড়গুলোর উচ্চতা ১৮ হাজার ফুট পর্যন্ত। তাই এই রানওয়েতে অবতরণের সময় যাত্রীদের স্নায়ুর উপর অনেক বেশিই চাপ পড়ে। 

বিমান দুর্ঘটনার জন্য যতরকম কারণ থাকতে পারে, তার সবই রয়েছে এই বিমানবন্দরটিতে। তাই এটিকে বিশ্বের অন্যতম ঝুঁকিপূর্ণ বিমানবন্দর মনে করা হয়। প্রায়ই জ্বালানি সমস্যা ছাড়াও কারিগরি ত্রুটি সারাতে এই এয়ারপোর্টে কর্তৃপক্ষকে ভুগতে হয়। 

এতকিছুর পরও অ্যাডভেঞ্জার প্রিয়দের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু এই বিমানবন্দর।