এভিয়েশন

এশিয়াজুড়ে কেন হু হু করে বাড়ছে বিমানভাড়া?

নিজস্ব প্রতিবেদক

নিজস্ব প্রতিবেদক

সোমবার, ২৭ মার্চ, ২০২৩
এশিয়াজুড়ে কেন হু হু করে বাড়ছে বিমানভাড়া?
সম্প্রতি এশিয়া জুড়েই বিমান ভ্রমণে বেড়েছে উড়োজাহাজের ভাড়া। গত কয়েক বছরের ডাটা বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, মহামারির পর থেকে এশিয়ার প্রতিটি এয়ারলাইন্সের বিমানেই ভাড়া বেড়েছে গড়ে ৩৩ শতাংশ। 


হুট করেই বিমানপথের এসব ফ্লাইটের ভাড়া বাড়ার কারণ কি? 

মহামারির সময় উড়োজাহাজ চলাচল ব্যবস্থা সীমিত থাকলেও মহামারির পর বিমান ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ায় স্বাভাবিক হয়ে আসে পুরো বিমান নেটওয়ার্ক। তবে আগের চেয়ে ফ্লাইটের ভাড়ার পরিমাণ বেড়ে যায় প্রায় প্রতিটি রুটেই। 

বিশেষ করে এশিয়ার সব ফ্লাইটেই ২০১৯ সালের তুলনায় চলতি বছরে ৩৩ শতাংশ করে ভাড়া বৃদ্ধি পেয়েছে। একই সময়ে ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকার ফ্লাইটগুলোতে ভাড়া বেড়েছে যথাক্রমে ১২ ও ১৭ শতাংশ। 

American Express Global Business Travels বলছে, ২০১৯ সালে যেখানে প্যারিস থেকে চীনের সাংহাইয়ের বিজনেসক্লাস টিকেটের দাম ছিল সর্বোচ্চ ৫ হাজার ৬৫০ মার্কিন ডলার, সেই টিকিটের মূল্য বেড়ে এখন পৌঁছেছে ১১ হাজার ৫০০ ডলারে। 

আর সিঙ্গাপুর থেকে সাংহাইয়ের বিজনেসক্লাস টিকিটের দাম তো ২০১৯ এর তুলনায় দ্বিগুণই হয়ে গেছে। পুরো বিশ্বেই আকাশপথের ভ্রমনের খরচ বাড়লেও এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে টিকিটের দাম বেড়েছে গলা কাটা হারে। 

American Express Global Business Travels আরো জানিয়েছে, এ বছর উত্তর আমেরিকা ও ইউরোপ থেকে এশিয়াগামী সব বিমানের ইকোনোমি ক্লাসের বিমানভাড়াও ৯ থেকে ১০ শতাংশ হারে বাড়তে পারে। 
পুরো এশিয়াজুড়ে বিমান ভাড়া বৃদ্ধির কারণ হিসেবে বিশেষজ্ঞরা শ্রমিক সংকট, জ্বালানি তেলের  মূল্য বৃদ্ধিকে দুষছেন। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে আকাশসীমায় অবরোধ থাকায় বিমানগুলোকে অন্য রুট ব্যবহার করতে হচ্ছে। 

ফলে স্বাভাবিকভাবেই বিমানের জ্বালানি খরচ বাড়ছে। সেই সাথে বাড়ছে Transit Cost ও। আর যুদ্ধের প্রকোপে জ্বালানি তেলের দাম ২০১৯ সালের তুলনায় ৬৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে বিমানের ভাড়া না বাড়িয়ে আর কোনো উপায় দেখছে না এয়ারলাইন্স গুলো। 

আকাশ সীমায় নিষেধাজ্ঞা থাকায় টোকিও থেকে লন্ডনগামী একটি ফ্লাইটকে এখন আগের রুট বদলে উত্তর প্রশান্ত মহাসাগর, আলাস্কা, কানাডা এবং গ্রিনল্যান্ডের উপর দিয়ে ঘুরে যেতে হচ্ছে। এতে প্রতি ফ্লাইটে প্রায় ৩ ঘণ্টা বাড়তি বেশি সময় ব্যয় হচ্ছে। সেই সাথে  আরও ৫ হাজার ৬০০ গ্যালন বাড়তি জ্বালানি খরচ হচ্ছে, যা স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় ২০ শতাংশ বেশি। আর এই বাড়তি খরচ পুষিয়ে নিতেই বলির পাঠা হচ্ছেন সাধারণ যাত্রীরা। 

বিমান ভাড়া বৃদ্ধির আরো একটি কারণ হিসেবে মহামারির বিধিনিষেধকে দায়ী করছেন অনেক বিশেষজ্ঞরা। তাঁরা বলছেন, অনেক এশীয় দেশই মহামারির পরও এখনো নানা বিধিনিষেধ থেকে বের হয়ে আসতে পারেন নি। 

উত্তর আমেরিকা ও ইউরোপের দেশগুলো অনেক আগেই তাঁদের সীমান্ত বিধিনিষেধগুলো অনেকটা সহজ করলেও দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানের মতো এশিয়ার অন্যতম প্রধান গন্তব্যগুলো মাত্র ২০২২ সাল থেকে বিদেশি যাত্রীদের জন্য সীমান্ত খুলতে শুরু করেছে।ফলে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে বিমানের ভাড়া স্বাভাবিকভাবেই বেড়েছে। 

এছাড়াও এই অঞ্চলে যাত্রী চাহিদা থাকলেও এয়ারলাইন্সগুলো নতুন বিমান তাঁদের বহরে যুক্ত করতে পারছে না। কারণ, নতুন রুটে বিমান পরিচালনা করতে হলে Ground Stuff থেকে শুরু করে Position Crew সীমিত থাকায় এটি সম্ভব হয়ে উঠছে  না। সেই সাথে বিমানবন্দরের সাথে সমন্বয় এর অভাবে অন্য রুট থেকে সরিয়ে আনা বিমানকে এসব রুটে দিতে দীর্ঘ সময় লাগছে। 
তবে এতোকিছুর পরও যাত্রী চাহিদা কমছে না। বরং বিশেষজ্ঞরা বলছেন পুরো ২০২৩ সাল জুড়ে  আকাশপথে ভ্রমণের উল্লেখযোগ্য চাহিদা দেখা যাচ্ছে। এটি চলতে থাকলে বিমানের পুরো নেটওয়ার্কই এ বছরের শেষ নাগাদই স্বাভাবিক হয়ে যাবে।