এভিয়েশন

পাইলটরা কত টাকা বেতন পান?

নিজস্ব প্রতিবেদক

নিজস্ব প্রতিবেদক

রবিবার, ৯ এপ্রিল, ২০২৩
পাইলটরা কত টাকা বেতন পান?
আকাশে উড়ে উড়ে অর্থ উপার্জনের দারুণ এক পেশা পাইলট। এই চাকরিকে পৃথিবীর অন্যতম রোমাঞ্চকর পেশা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এই পেশায় মোটা অঙ্কের অর্থ উপার্জনের পাশাপাশি রয়েছে অত্যন্ত আকর্ষণীয় সুযোগ সুবিধা। 

বর্তমানে উচ্চ বেতন এবং সুযোগ সুবিধা এই পেশাকে আকর্ষণীয় করে তুলেছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পেশাটির বাড়ছে চাহিদা এবং জৌলুস।  

শুরুর দিকে পাইলটের বেতন হয়ে থাকে দেড় থেকে দুই লাখ টাকা। প্রতিবছরই বেতন বৃদ্ধি পায়। বিদেশি এয়ারলাইন্সগুলো আরও বেশি বেতন ও সুযোগ-সুবিধা দিয়ে থাকে। 

এরমধ্যে চাকরির বয়স যাদের ৫ বছরের মধ্যে, তারা ৩ লাখ ৮২ হাজার টাকা পর্যন্ত পেয়ে থাকেন। আবার সিনিয়র পাইলটরা ৮ লাখ ৬১ হাজার টাকা পর্যন্তও পেয়ে থাকেন। 

এছাড়া বিদেশি বিভিন্ন বিমান সংস্থায়ও পাইলটরা কাজের সুযোগ পান। 

ভারতের স্পাইসজেটের একজন পাইলটের সর্বোচ্চ বেতন ৯ লাখ ৩৫ হাজার টাকা, ইন্দোনেশিয়ার গারুদা এয়ারলাইন্সের পাইলটের বেতন ৫ লাখ ৫২ হাজার টাকা, উইংস এয়ারের পাইলটের বেতন ৭ লাখ ৬০ হাজার টাকা। 

বিশ্বের অন্যতম দু’টি বৃহৎ এয়ারলাইন্স প্রতিষ্ঠান ইতিহাদ এবং তার্কিশ এয়ারলাইন্সের পাইলটদের বেতনও বিমানের পাইলটদের সর্বোচ্চ বেতনের কম। স্বাভাবিক সময় ইতিহাদ তাদের পাইলটদের সর্বোচ্চ ৮ লাখ ৮১ হাজার এবং তার্কিশ এয়ার ১১ লাখ টাকা বেতন দেয়। 

বেসিক বেতন ছাড়াও পাইলটরা ফ্লাইং ঘণ্টার হিসাব অনুযায়ী ওভারসিজ অ্যালাউন্স পেয়ে থাকেন। 

সাধারণত পাইলট হতে চাইলে প্রাথমিকভাবে কিছু বেসিক কোর্স করতে হয়। বর্তমানে এই কোর্সটি বাংলাদেশের বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান করিয়ে থাকে। তবে এ কোর্সে ভর্তি হওয়ার জন্য প্রাথমিকভাবে কিছু যোগ্যতার প্রয়োজন। 

এরমধ্যে অন্যতম মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক বিজ্ঞান বিভাগ থেকে পাস করতে হবে। ইতিমধ্যে যারা স্নাতক পাশ করেছেন তারাও পারবেন পাইলট কোর্সে আবেদন করতে। এক্ষেত্রে বয়স কমপক্ষে ১৬ বছর হতে হবে। শারীরিক ভাবে ফিট ও ইংরেজি ভাষায় দক্ষ হতে হবে। 

অনেকের মধ্যেই একটি ভুল ধারণা রয়েছে, চাইলেই পাইলট কোর্স করা সম্ভব। কিন্তু এ কোর্সটি করতে চাইলে আগে সংশ্লিষ্ট একাডেমীতে পাইলট কোর্সের জন্য ভর্তি পরীক্ষা দিতে হবে। পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেই মিলবে পাইলট কোর্সের সুযোগ। 

সাধারণত ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া হয় তিনটি ধাপে। প্রথমে দিতে হয় লিখিত পরীক্ষা। এতে উত্তীর্ণ হলে মৌখিক এবং চূড়ান্ত বাছাইয়ের আগে দিতে হয় স্বাস্থ্য পরীক্ষাও। 

সাম্প্রতিক সময়ে বেশকিছু একাডেমি এসবের সঙ্গে কম্পিউটার বিষয়ক দক্ষতাও পরখ করে দেখে। 

পাইলট কোর্সে ভর্তির সুযোগ পেলেই শুরু হয় মূল প্রশিক্ষণ। কোর্সটিকে তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। গ্রাউন্ড কোর্স, প্রাইভেট পাইলট লাইসেন্স ও কমার্শিয়াল পাইলট লাইসেন্স। 

পুরো কোর্সটি শেষ করতে সর্বোচ্চ তিন বছর সময় লাগে। জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি ও জুলাই-আগস্ট দুটি সেশনে বৈমানিক কোর্সে ভর্তি হওয়া যায়। গ্রাউন্ড কোর্সে সাধারণত থিউরি শেখানো হয়। 

এসময় বিমানের কারিগরি, এয়ার ল, এয়ারক্রাফট জেনারেল নলেজ, ফ্লাইট পারফরম্যান্স অ্যান্ড প্লানিং, হিউম্যান পারফরম্যান্স অ্যান্ড লিমিটেশন, ন্যাভিগেশন, অপারেশনাল প্রসিডিউর ও প্রিন্সিপাল অব ফ্লাইট সম্পর্কে ধারণা দেওয়া হয়। 

এরপর সিভিল অ্যাভিয়েশনে স্টুডেন্ট পাইলট লাইসেন্সের আবেদন করতে হয়। আবেদনের পর সিভিল অ্যাভিয়েশন অথরিটি পরীক্ষা নেয়। পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেই কেবল এসপিএল দেয়া হয়।

এ লাইসেন্স দিয়ে ৪০ থেকে ৫০ ঘণ্টা বিমান চালনার অনুমতি মেলে। এরপরই পিপিএল বা প্রাইভেট পাইলট লাইসেন্সের জন্য আবেদন করতে হয়। এসময় এক জেলা থেকে অন্য জেলায় বিমান চালিয়ে নেওয়ার অভিজ্ঞতা অর্জন করতে হয়। 

তারপর মেলে প্রাইভেট পাইলট লাইসেন্স। যদিও এ লাইসেন্স দিয়ে বাণিজ্যিক বিমান চালানো যাবে না। বাণিজ্যিক বিমান চালানোর জন্য দরকার সিপিএল বা কমার্শিয়াল পাইলট লাইসেন্স।

এটি থাকলে পাইলট হিসেবে যেকোন এয়ারলাইন্সে চাকরি করা যাবে। এ লাইসেন্স পেতে কমপক্ষে দেড়শ থেকে দু’শ ঘন্টা বিমান চালানোর অভিজ্ঞতা থাকতে হয়।

দেশী প্রতিষ্ঠানগুলোতে পাইলট কোর্সটি করার জন্য ৩০ থেকে ৩৫ লাখ টাকা খরচ করতে হয়। তবে টাকার পরিমাণ প্রতিষ্ঠান ভেদে বাড়তে বা কমতেও পারে।