এভিয়েশন

কেজি দরে বিক্রি হবে ১২ বিমান!

নিজস্ব প্রতিবেদক

নিজস্ব প্রতিবেদক

সোমবার, ২৭ ফেব্রুয়ারী, ২০২৩
কেজি দরে বিক্রি হবে ১২ বিমান!

ভাঙারি দোকানের লোহা লক্করের মতো, বিমান বিক্রি হবে কেজি দরে। কোন উপায় না পেয়ে শেষ পর্যন্ত এ পথেই হাটতে যাচ্ছে, বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ।

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে, বছরের পর বছর পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে অন্তত ১২টি উড়োজাহাজ।এক দশকের বেশি সময় পড়ে থাকা, এসব উড়োজাহাজের ফ্লাইট অপারেশন এখন পুরোপুরি বন্ধ।

বিভিন্ন বেসরকারি এয়ারলাইন্সের মালিকানায় রয়েছে বিমানগুলো।এর মধ্যে ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের আটটি, রিজেন্ট এয়ারওয়েজের দুটি, জিএমজি এয়ারলাইন্সের একটি এবং এভিয়েনা এয়ারলাইন্সের একটি বিমান রয়েছে।

এসব এয়ারলাইন্সের সবগুলোই এখন অচল। তাদের কোথাও এখন কোনো অফিস নেই। পার্কিং ও অন্যান্য চার্জ মিলিয়ে, এসব এয়ারলাইন্সের কাছে বকেয়া আছে, সর্বমোট সাড়ে আটশো কোটি টাকা। এর মধ্যে সর্বোচ্চ বকেয়া আছে জিএমজি এয়ারলাইন্সের কাছে। তাদের বকেয়ার পরিমাণ প্রায় ৩৬০ কোটি টাকা। 

২০১২ সালে শেষ বারের মতো উড্ডয়ন করেছিল জিএমজি এয়ারলাইন্স। এরপর তারা আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট স্থগিত করে। পরে আর কখনো উড়তে দেখা যায়নি এই এয়ারলাইন্সের বিমান। অন্যদিকে রিজেন্ট এয়ারওয়েজের কাছে বকেয়া টাকার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে, ২০০ কোটি টাকাতে।২০২০ সালের আগে, কয়েকটি রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করা বন্ধ করে দিয়েছিল এয়ারলাইন্সটি। পরে ঐ বছরের মার্চে করোনা শুরু হওয়ার সময় থেকেই, স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে যায়। 

ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের বকেয়া রয়েছে ১৯০ কোটি টাকা। ২০১৬ সাল থেকেই এয়ারলাইন্সটি পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। বিমানগুলোর রেজিস্ট্রেশন আগেই বাতিল করেছে, বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ। এরপর বিমানবন্দর থেকে বিমান সরিয়ে নিতে, দফায় দফায় নোটিশ দেওয়া হয়েছে। বছরখানেক আগে বকেয়া আদায় করার জন্য, বিমানগুলোকে নিলামে বিক্রির উদ্যোগও নেওয়া হয়েছিল। তখন কয়েকজন মালিক বকেয়া পরিশোধের জন্য ছয় মাস সময় চেয়েছিলেন। সময় পার হয়ে গেলেও তাদের দেখা মিলেনি। এজন্য আবার নিলামে তোলার সিদ্ধান্ত নিয়ে আলোচনা চলছে। শীঘ্রই এই নিলামের প্রস্তুতি নেওয়া হবে।"

পরিত্যক্ত ১২টি বিমান দিয়ে, এখন তেমন কোনো আয় করা সম্ভব হচ্ছে না। তাই এগুলো রাখার কারণে, রানওয়ের বেশ বড় আকারের জায়গা নষ্ট হচ্ছে। সেই সাথে বিমানবন্দরটি বিশাল এক ডাম্পিং স্টেশনে পরিণত হয়েছে। অন্যদিকে পরিত্যক্ত বিমানগুলোর জন্য, কার্গো-ভিলেজ এলাকায় ঘিঞ্জি পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। 

কর্তৃপক্ষের দাবি অনুযায়ী, এই জায়গায় কমপক্ষে সাতটি ,অপারেশনাল বিমান রেখে আয় করা সম্ভব হতো। তাছাড়া, কার্গো বিমানে মালামাল ওঠানামা করতেও সহজ হতো। তাই, বিমানগুলো এখন গলার কাটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এগুলো অপসারণের প্রধান উদ্দেশ্য হলো, রানওয়ের জায়গা সম্প্রসারণ করা। যাতে পরিত্যক্ত বিমান সরিয়ে সেখানে নতুন বিমান রাখা যায়। 
আরেকটি উদ্দেশ্য হলো, এয়ারলাইন্সগুলোর কাছে থাকা বকেয়া টাকা উদ্ধার করা। কিন্তু এগুলো নিলামে তুলে, বকেয়া প্রায় ৮০০ কোটি টাকার বেশিরভাগ উদ্ধার করা যাবে কিনা, সে বিষয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। 

যদি সেটা না যায়, তখন শেষ উপায় হিসেবে, বিমানগুলো কেজি দরে বিক্রি করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেবে কর্তৃপক্ষ।নিলামের প্রস্তুতির বিষয়ে, নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন কামরুল ইসলাম বলেন, "নিলামের প্রক্রিয়া নির্ধারণে কর্মপদ্ধতি ও সুপারিশমালা চূড়ান্ত করা হয়েছে। 

আইনি মতামত নিয়ে ধাপে ধাপে এগোচ্ছি। আশা করি, থার্ড টার্মিনাল চালু হওয়ার আগেই নিলাম সম্পন্ন করতে পারবো।"