এভিয়েশন

সম্প্রসারিত হতে যাচ্ছে বেসরকারি এয়ারলাইন্সের সেবা

নিজস্ব প্রতিবেদক

নিজস্ব প্রতিবেদক

সোমবার, ১০ অক্টোবর, ২০২২
সম্প্রসারিত হতে যাচ্ছে বেসরকারি এয়ারলাইন্সের সেবা

যাত্রী সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় সম্প্রসারিত হতে যাচ্ছে দেশের বেসরকারি এয়ারলাইন্সগুলোর সেবা। চলতি বছরেই ইউএস-বাংলা, নভোএয়ার ও এয়ার-অ্যাস্ট্রা- নতুন করে তাদের সংস্থায় আরও ১৩টি বিমান যুক্ত করতে যাচ্ছে।     


এর মধ্যে থাকছে এয়ারবাস ৩৩০, ড্যাশ ৩০০ এবং এয়ারবাস ৯০০। বর্তমানে এয়ারলাইনগুলোর বহরে ২২টি বিমান রয়েছে, নতুন করে যুক্ত হলে মোট সংখ্যা হবে ৩৫।


সম্প্রসারণ পরিকল্পনার পেছনে মূল কারণ যাত্রী সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়া। ২০২০ সাল থেকে করোনা মহামারীর দরুন বিমানের নিয়মিত ফ্লাইট বন্ধ থাকায়, যাত্রী সংখ্যা কমে গিয়েছিল। তবে ২০২২ সালে এসে বিমান সংস্থাগুলোর সুদিন আবার ফিরে এসেছে।        


ভ্রমণসহ নানা প্রয়োজনে বেড়ে গেছে বিদেশগামী যাত্রীর সংখ্যা। ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার বক্তব্য থেকে জানা যায়, বর্তমানে প্রতিদিন ৫ হাজার যাত্রী দেশের বেসরকারি এয়ারলাইনগুলোতে যাতায়াত করছে।


আগামী বছর এই সংখ্যা বেড়ে ৭ হাজার হতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে। শুধু দেশের অভ্যন্তরীণ নয়, এর মধ্যে একটি বড় অংশ আন্তর্জাতিক যাত্রী।     


ভ্রমণকারী বেড়ে যাওয়ায় ২ বছর পর আবারও মুনাফা লাভের সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে এয়ারলাইনগুলোর। ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স নতুন করে ১১ টি রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করতে যাচ্ছে। কিছুদিনের মধ্যে তারা ঢাকা-দিল্লি রুটেও ফ্লাইট চালু করবে।  


ফ্লাইট সংখ্যা বাড়াচ্ছে সংযুক্ত আরব আমিরাতের শারজাহ এবং সিঙ্গাপুর রুটে। এর ফলে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো সহ অন্যান্য প্রধান জনশক্তি রপ্তানিকারক স্থানগুলোতে উক্ত বিমানের যাত্রী সেবা সম্প্রসারিত হবে।  


বিমান সম্প্রসারণের উদ্যোগ নিয়েছে নভোএয়ারও। বর্তমানে তারা কেবল অভ্যন্তরীণ রুটে এবং ঢাকা-কলকাতা আন্তর্জাতিক রুটেই ফ্লাইট পরিচালনা করে।


তবে সম্প্রতি এয়ারবাস কোম্পানির থেকে ন্যারোবডি জেট এয়ারলাইনার এয়ারবাস ৩২০ ক্রয় করে নিজেদের বহরে যুক্ত করা পরিকল্পনা করেছে।


যাত্রা শুরু করতে যাওয়া এয়ার-অ্যাস্ট্রা আপাতত অভ্যন্তরীণ রুটেই উড্ডয়ন করবে। চলতি বছরের নভেম্বরের মধ্যে তাদের বহরে যুক্ত হবে চারটি বিমান। এতে তারা বরিশাল ছাড়া বাকি সবগুলো অভ্যন্তরীণ রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করতে পারবে।  


ঢাকা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এয়ার-অ্যাস্ট্রা একটি হ্যাঙ্গার পাওয়ারও চেষ্টা করছে, নতুবা বিমান পার্কিংয়ের জন্য সিলেট আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ব্যবহার করবে।    


কোভিডের পর এয়ারলাইন্সগুলোর চিত্র অনেকটাই বদলে গেছে। শ্রমিক সংকট একটি সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেই সাথে বেড়েছে জ্বালানীর দাম। যার ফলে সমস্ত অভ্যন্তরীণ রুটে বিমান ভাড়ায় বেড়ে গেছে।  


সাধারণত এয়ারলাইনগুলোর মোট ব্যয়ের প্রায় ৩৩ শতাংশই চলে যায় জেট ফুয়েলের পেছনে। কিন্তু জ্বালানীর দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় বছরখানেক ধরে মোট ব্যয়ের ৫০ শতাংশ খরচ হচ্ছে বলে জানা যায়।    


এভিয়েশন অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ থেকে জানা যায়, বিমান চালনা বাবদ তাদের প্রচুর করও পরিশোধ করতে হয়।


সব মিলিয়ে এমন অবস্থায় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ধীর গতিসম্পন্ন হলেও, বিমানযাত্রী বেড়ে যাওয়ায় নতুন করে আশার আলো দেখছে এয়ারলাইন্সগুলো।     


২০২৪ সালের মধ্যে বিশ্বব্যাপী বিমানে ভ্রমণের হার সামগ্রিকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে আশা করছেন তারা। এ বছরই এয়ার কার্গোর পরিমাণও ৬৮.৪ মিলিয়ন টনে পৌঁছবে বলে ধারণা করা যাচ্ছে।


২০২৩ সালের মধ্যে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণ বেসরকারি সংস্থাগুলোর এই সম্প্রসারণ পদক্ষেপকে আরও উৎসাহ দিয়েছে।         


তৃতীয় টার্মিনাল চালু হয়ে গেলে যাত্রী ও কার্গো বহন ক্ষমতা তিনগুণ বেড়ে যাবে।  বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে ঢাকা বিমানবন্দরের ২ টি টার্মিনাল দিয়ে বছরে ৭০ থেকে ৮০ লাখ যাত্রী চলাচল করে।  


আরেকটি টার্মিনাল হলে প্রতি বছর প্রায় ২ কোটি ২০ লাখ যাত্রীকে সেবা দেয়া যাবে। বর্তমানে শাহজালাল বিমানবন্দরের কার্গো হ্যান্ডেলিং ক্ষমতা ২ লাখ টন। নতুন টার্মিনাল হলে বেড়ে দাঁড়াবে ৫ লাখ টনে।        


কাতার, এমিরেটস, এয়ার অ্যারাবিয়া, ইন্ডিগোসহ বর্তমানে বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট পরিচালনা করছে মোট ২৮টি বিমানসংস্থা। বিদেশি সংস্থাগুলোও ভবিষ্যতে এখানে ফ্লাইটের সংখ্যা বাড়াতে পারে।


বেসরকারি এয়ারলাইন্সের দেখাদেখি এখন ব্যবসা সম্প্রসারণ করতে আগ্রহী জাতীয় পতাকাবাহী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সও। তারা যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন নতুন আন্তর্জাতিক রুটে ফ্লাইট সম্প্রসারণ করার পরিকল্পনা করেছে।  


বিমান সংখ্যা বাড়ানোর পাশাপাশি ভবিষ্যতে দেশে বাড়তে পারে হেলিকপ্টারের সংখ্যাও। কারণ ব্যবসায়িক কারণে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে হেলিকপ্টারের চাহিদা উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে।


ব্যবসা ছাড়াও অনেকে চিত্তবিনোদন ও জরুরি চিকিৎসার প্রয়োজনে হেলিকপ্টারে ভ্রমণ করতে চান। প্রতি মাসে হেলিকপ্টারে এখন ৩৫০ টি ফ্লাইট পরিচালিত হয়। ২০৩০ সাল নাগাদ এ সংখ্যা বেড়ে প্রতি মাসে ৬০০ এর বেশি হবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।  


বর্তমানে দেশে ৯ টি প্রতিষ্ঠান ৩২টি হেলিকপ্টার নিয়ে সেবা দিচ্ছে। আরও একটি কোম্পানি বাজারে আসতে যাচ্ছে, ফলে এই খাতেও বাড়তে পারে যাত্রী সেবা।