এভিয়েশন

ভারতে যাত্রা শুরু করবে পৃথিবীর বৃহত্তম যাত্রীবাহী বিমান

নিজস্ব প্রতিবেদক

নিজস্ব প্রতিবেদক

মঙ্গলবার, ২৩ আগস্ট, ২০২২
ভারতে যাত্রা শুরু করবে পৃথিবীর বৃহত্তম যাত্রীবাহী বিমান

সংযুক্ত আরব আমিরাতের অন্যতম ধনী শহর দুবাই এবং ভারতের কর্ণাটকের রাজধানী বেঙ্গালুরুর মধ্যে চালু হতে যাচ্ছে পৃথিবীর বৃহত্তম যাত্রীবাহী বিমান এয়ারবাস A-380 এর পরিষেবা।        


চলতি বছরের ৩০ অক্টোবর দুই দেশের মধ্যে শুরু হতে যাচ্ছে প্রথম ফ্লাইট। এতদিন পর্যন্ত  ভারতের মধ্যে কেবল মহারাষ্ট্র প্রদেশের রাজধানী মুম্বাই থেকেই চলাচল করতো এই বিমান।     


এখন থেকে দেশটির দ্বিতীয় শহর হিসাবে বেঙ্গালুরু থেকেও এয়ারবাস A-380 তে চড়তে পারবেন যাত্রীরা। 


তবে ভারতীয় কোন এয়ারলাইন্স নয়, বেঙ্গালুরু থেকে এই বিমানের ফ্লাইট পরিচালনা করবে সংযুক্ত আরব আমিরাত ভিত্তিক বিমান সংস্থা এমিরেটস এয়ারলাইন্স।   


বর্তমানে এমিরেটস এয়ারলাইন্সের অধীনে থাকা এয়ারবাস এ-৩৮০ বিমানের সংখ্যা ১১৮ টি। 


এর মাধ্যমে ফ্লাইটের দীর্ঘতম রুটটি পরিচালনা করা হয় দুবাই থেকে নিউজিল্যান্ডের অকল্যান্ড পর্যন্ত। যাত্রাপথটির মোট দৈর্ঘ্য প্রায় ১৪,১৯৩ কিলোমিটার।   


বিশ্বজুড়ে সর্বাধিক জনপ্রিয় বিমান সংস্থা হল এয়ারবাস। একই সাথে ফ্রান্সের এই সংস্থাটি বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বড় বিমান প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানও।    


এয়ারবাসের জনপ্রিয় কিছু বিমানের মধ্যে এ-৩২০, এ-৩৫০ এবং এ-৩৮০ উল্লেখযোগ্য। তবে এদের মধ্যে এয়ারবাস এ-৩৮০ই এখন বিশ্বের সর্ববৃহৎ যাত্রীবাহী বিমান হিসেবে পরিচিত।     


২০০৫ সালে প্রথম যাত্রী নিয়ে যাত্রা শুরু করে এটি। তবে ২০০৭ সালে সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সের মাধ্যমে এর প্রথম বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু হয়।   


শুরুর দিকে এয়ারবাসের এই মডেলের বিমানের নাম রাখা হয়েছিল এয়ারবাস এ-থ্রি.এক্স.এক্স। পরবর্তীতে নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় এ-৩৮০।  


সাধারণত সিঙ্গাপুর এয়ারলাইনস, এমিরেটস এয়ারলাইনস, ইউনাইটেড এয়ারলাইনসের মতো বড় বড় বিমানসংস্থাগুলোর মালিকানায় রয়েছে এয়ারবাস এ-৩৮০ এর উড়ানগুলো। তাদের মধ্যে প্রায় অর্ধেকই রয়েছে এমিরেটস এয়ারের অধীনে।   


এই বিমানের ওজন ৫১০ থেকে ৫৭৫ টনের মধ্যে। আর সর্বোচ্চ ধারণ ক্ষমতা ৫৬০ টন। প্রায় ৭৩ মিটার দৈর্ঘ্য বিশিষ্ট এয়ারবাস এ-৩৮০ এর উচ্চতা ২৪ মিটার।    


লম্বায় এটি দুইটি নীল তিমির সমান। আর উচ্চতা কয়েকটি জিরাফের থেকেও বেশি। দ্বিতলবিশিষ্ট এই সুপ্রশস্ত বিমান মাটি থেকে প্রায় ৪৩ হাজার ১০০ ফুট উপর দিয়ে উড়ে যেতে পারে।  


এয়ারবাসের আগে বৃহৎ আকারের বিমান হিসেবে আধিপত্য ছিল বোয়িং - ৭৪৭ এর।  পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম বিমান বোয়িং ৭৪৭ এর তুলনায় এয়ারবাসের এই মডেলে ৪৯ শতাংশ জায়াগা বেশী থাকে।        


সর্ববৃহৎ এই জেট বিমানের সাথে সংযুক্ত থাকে ৪ টি ইঞ্জিন। প্রতিটি পাখার দৈর্ঘ্য ৮০ মিটার। সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৯০০ কি মি।  


কোন প্রকার বিরতি ছাড়া একটানা ১৫, ৪০০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে পারে এটি। যা আমেরিকার নিউ ইয়র্ক থেকে হংকং পর্যন্ত ওড়ার জন্য যথেষ্ট।   


বাইরে থেকে যেমন দৃষ্টিনন্দন ফ্লাইটের ভেতরটাও তেমনি জাঁকজমকপূর্ণ। এয়ারবাস এ-৩৮০ ফ্লাইটে যাত্রী ধারণ ক্ষমতা সাধারণ বিমানগুলোর চাইতে অনেক বেশী। 


এগুলোতে ফার্স্ট ক্লাস, বিজনেস ক্লাস এবং ইকোনমি ক্লাস -এই ৩ তিন প্যাসেঞ্জার শ্রেণির জন্য আলাদা আলাদা আসন বিন্যাসের ব্যবস্থা রয়েছে। খাবারের স্বাদ ও মানও অন্য কোন ফ্লাইটের চেয়ে উন্নত পর্যায়ের।    


ডাবল ডেকার এই বিমানটিতে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের বিলাসবহুল পরিষেবা। যাত্রীদের বিনামূল্যে প্রদান করা হয় ইন্টারনেট সার্ভিস। রয়েছে শোয়ার ব্যবস্থা, স্নানের জন্য আলাদা জায়গা ও ম্যাসেজ বা স্পায়ের ব্যবস্থা।


ফার্স্ট ক্লাসের পাশে থাকে দোতলায় ওঠার সিঁড়ি। সিঙ্গেল ক্লাসে যাত্রী ধারণ ক্ষমতা ৮৫৩ জন। আর দ্বিতীয় তলায় রয়েছে ৬৪৪ টি আসন। অর্থাৎ, সর্বমোট ১৫০০ যাত্রী বহন করতে সক্ষম বিমানটি।     


ধারণক্ষমতা বেশী হলেও এই বিমানগুলোর উড্ডয়ন বেশ সহজ। একে এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যাতে চালানোর সময় ছোট আকারের বিমানের মতই মনে হয়।