৩৬ বছরের অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে আর্জেন্টিনাকে বিশ্বকাপ ট্রফি এনে দেওয়া নায়কের নাম লিওনেল মেসি। তিন যুগের আরাধ্য স্বপ্নকে সত্যি করে দেয়া মেসি এখন আর্জেন্টিনার মানুষের কাছে জাতীয় বীর।
সেই বীরের বীরত্বেই আর্জেন্টিনা জুড়ে চলছে জয়োৎসব। যার হাত ধরে এই সোনালি দিনের আগমন সেই মেসিকে অন্যরকমভাবে সম্মানিত করতে যাচ্ছে লাতিন আমেরিকার দেশটি।
সম্মান জানাতে এবার আর্জেন্টিনার মুদ্রায় লিওনেল মেসির প্রতিকৃতি রাখার প্রস্তাব দিয়েছে দেশটির অর্থমন্ত্রণালয়।
এল এম টেনের অর্জনের প্রতি সম্মান ও কৃতজ্ঞতা জানাতে এ প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। এমনটাই জানাচ্ছে আর্জেন্টিনার সংবাদপত্র ‘এল ফিনান্সিয়েরো’
বলা হচ্ছে সাম্ভাব্য নোটটিরর সামনের পৃষ্ঠায় থাকবে মেসির প্রতিকৃতি, সাথে অপর পৃষ্ঠায় থাকতে পারে মার্টিনেজ আলভারেজদের বিশ্বকাপ জয় উদযাপনের ছবি।
মুদ্রাতে আর্জেন্টিনার খেলোয়াড়দের উদযাপনের ছবি রাখার পাশাপাশি আলবিসেলেস্তেদের বিশ্বকাপ জয়ের নৈপথ্যের কারিগর কোচ স্কালোনির নাম রাখার প্রস্তাবও করা হয়েছে।
লিওনেল স্কালনির অধীনেই ২০২১ সালের কোপা আমেরিকার শিরোপা এবং ওয়েম্বলিতে ইউরো চ্যাম্পিয়ন ইতালিকে হারিয়ে প্রথম ফাইনালিসিমা জেতে আর্জেন্টিনা।
অবশেষে বিশ্বকাপ ট্রফিটাও এসেছে এই গ্রেট গাইডলাইনারের হাত ধরেই। তাই তাকেও সম্মান জানানোর কথা ভাবছে অর্থমন্ত্রনালয়ের কর্মকর্তারা।
ফুটবলের বিস্ময়বালক মেসির ফুটবল জীবনে সাতবারের ব্যালন ডি’অর, ক্লাব ফুটবলে অনেকবার চ্যাম্পিয়ন হবার গৌরব, কোপা জয়ের কীর্তির মত সব অর্জনের পরও একমাত্র অপ্রাপ্তিই তাকে পোড়াচ্ছিলো বহু বছর। তা হলো আর্জেন্টিনার হয়ে একটি বিশ্বকাপ জয় করতে না পারার আক্ষেপ।
মেসি যখন নিজের পঞ্চম বিশ্বকাপে এসে বিশ্বজয়ের স্বপ্নকে ছুঁয়ে ফেললেন, তখন আর্জেন্টিনাও ৩৬ বছর পেরিয়ে হাতে পেলো চ্যাম্পিয়ন ট্রফি।
দেশের এমন অবিস্মরণীয় অর্জনের খুশিতে এল এম টেনকে এরকম সম্মাননা তাই জানানোই যায়। কারণ আর্জেন্টিনার সফলতার মূল নায়ক এই ফুটবল জাদুকরই।
যদিও দেশটির অর্থ মন্ত্রণালয় বলছে শুধু বিশ্বকাপ জয়ই নয়, মেসির সামগ্রিক আর্জনকে সম্মান জানিয়েই এমন প্রস্তাবনা তাদের।
আর্জেন্টিনার সংবাদপত্র ‘এল ফিনান্সিয়েরো’ জানিয়েছে, আলভারেজ, মেসি, মার্টিনেজ, ডি মারিয়াদের জয়ের আনন্দে বিশেষ সভার আয়জোন করেছিল সেন্ট্রাল ব্যাংক অফ আর্জেন্টিনা।
ব্যাংকের একাধিক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের করা সেই সভাতে এক হাজার পেসোতে মেসির ছবি ছাপানো নিয়েও আলোচনা হয়।
অবশ্য, এর আগেও একবার ১৯৭৮ সালে আর্জেন্টিনার প্রথম বিশ্বকাপ জয়ের পর বাণিজ্যিকভাবে বাজারে বিশেষ মুদ্রা ছাড়ে দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সেবার ড্যানিয়েল পাসারেলার নেতৃত্বে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয়েছিল আর্জেন্টিনা।
আরেকবার আর্জেন্টিনার প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট হুয়ান ডোমিনগো পেরোনের স্ত্রী ইভা পেরোনের ৫০-তম মৃত্যুবার্ষিকীতেও এরকমই কয়েন প্রকাশিত হয়েছিল ম্যারাডোনার দেশে।
এবার আর্জেন্টাইন ফুটবল দলের বিশ্ব জয়ের অর্জনে পেসোতে মেসি এবং পুরোদলের উদযাপনের প্রতিকৃতি ছাপানোর প্রস্তাব করা হয়েছে, যা এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষিত হয়নি।
বিশ্বকাপ জয়ের আনন্দে মেতে থাকা সে দেশের মানুষও এই বিষয়ে সমর্থন জানাচ্ছেন। তাঁরাও চান তাঁদের মহাতারকা মেসির মুখচ্ছবি দেশের মুদ্রায় ছাপা হোক।
আর্জেন্টিনার সেন্ট্রাল ব্যাংকের পরিচালক ডিরেক্টর লিসান্দ্রো ক্লেরি এ ব্যাপারে বলেছেন, ‘ব্যাংকের বোর্ডের সদস্যরা মজা করেই এই প্রস্তাব দিয়েছি। জানি না, তা সত্যি হবে কিনা। তবে বাস্তবায়িত হলে আর্জেন্টিনার বাসিন্দারা এতে আরও উদ্বুদ্ধ হবেন।'
ইতোমধ্যে সাম্ভাব্য এই নোটের নানা ডিজাইনও ছড়িয়ে পড়েছে নেট দুনিয়ায়। যদিও এই প্রস্তাব আসলেই বাস্তবায়িত হবে কিনা কিংবা কবে নাগাদ এটি বাজারে আসবে, তার কিছুই জানানো হয়নি।
মেসিরা এবার বিশ্বকাপ জিতেছেন ৩৬ বছর পর। এমন একটা সময়ে যখন দেশটা অর্থনৈতিকভাবে দেশটা খুব একটা ভালো নেই।
এমন সময়ে বিশ্বকাপ জয় আর্জেন্টাইনদের সামাজিক ও অর্থনৈতিক জীবনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে আশা করা হচ্ছে।