রাজনীতি

নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কারে ৯ দফা প্রস্তাবনা জামায়াতের

উপ-সম্পাদক

উপ-সম্পাদক

শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর, ২০২৪
নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কারে ৯ দফা প্রস্তাবনা জামায়াতের
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী সম্প্রতি 'রাষ্ট্র সংস্কার প্রস্তাবনায়' জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বমূলক ব্যবস্থা চালুর পাশাপাশি নির্বাচন ব্যবস্থার সংস্কার নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে ৯ দফা প্রস্তাব উত্থাপন করেছে। জামায়াতের প্রস্তাবগুলো সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ নির্বাচন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে গঠিত হয়েছে, যার প্রধান উদ্দেশ্য হলো দেশের নির্বাচন প্রক্রিয়ায় গ্রহণযোগ্যতা ও অংশগ্রহণমূলক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা।
প্রথমত, প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে যে, জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বমূলক ব্যবস্থা (Proportional Representation-PR) চালু করতে হবে। এই ব্যবস্থায় বিভিন্ন দলের প্রাপ্ত ভোটের অনুপাত অনুযায়ী সংসদে আসন বরাদ্দ হবে, যা নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী দলগুলোর ন্যায্য প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করবে।
দ্বিতীয় প্রস্তাবে সংবিধানে কেয়ারটেকার সরকারব্যবস্থা স্থায়ীভাবে অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানানো হয়েছে। জামায়াতের মতে, একটি কেয়ারটেকার সরকার ছাড়া সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। তারা আরও বলেছে, নির্বাচন ব্যবস্থায় ইভিএম (ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন) প্রত্যাখ্যান করতে হবে, কারণ এটি সঠিক ভোট গণনার পরিবর্তে ভুল ও জালিয়াতি সৃষ্টির ঝুঁকি তৈরি করে।
তৃতীয়ত, প্রস্তাব করা হয়েছে যে, কোনো সরকারি চাকরিজীবী তার চাকরি ছাড়ার পর অন্তত ৩ বছর কোনো নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন না। এই শর্তটি প্রস্তাবিত হয়েছে নির্বাচনে ক্ষমতাসীনদের প্রভাবমুক্ত রাখতে এবং নির্বাচনী প্রক্রিয়া স্বচ্ছ রাখার জন্য।
প্রস্তাবনার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো স্থানীয় সরকার নির্বাচন নির্দলীয়ভাবে আয়োজন করার ব্যবস্থা। এর মাধ্যমে নির্বাচনে দলীয় প্রভাব ও দুর্নীতির সুযোগ কমবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের পরিবেশ নিশ্চিত করার জন্য জামায়াত রাজনৈতিক দলগুলোর নিবন্ধন প্রথা বাতিলের দাবি জানিয়েছে। ২০০৮ সালে প্রবর্তিত এই নিবন্ধন প্রথাকে সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হিসেবে উল্লেখ করে দলটি বলেছে, এই প্রথা রাজনৈতিক দলের স্বতন্ত্র অবস্থান ক্ষুণ্ণ করে।
নির্বাচন কমিশনারসহ অন্যান্য কমিশনার নিয়োগের জন্য জামায়াত একটি নিরপেক্ষ সার্চ কমিটি গঠনের প্রস্তাব করেছে। এই কমিটিতে প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেতা এবং প্রধান বিচারপতির সমন্বয় থাকতে হবে।
নির্বাচনের স্বচ্ছতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে জামায়াত জাতীয় সংসদ নির্বাচন একাধিক দিনে করার ব্যবস্থার প্রস্তাব দিয়েছে। এটি বিশেষ করে প্রান্তিক অঞ্চলে ভোটারদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি করবে এবং সহিংসতা এড়াতে সহায়তা করবে।
অন্যদিকে, জামায়াত এনআইডি ব্যবস্থাপনা নির্বাচন কমিশনের অধীনে রাখার প্রস্তাব করেছে। বর্তমানে এটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে রয়েছে, কিন্তু নির্বাচন কমিশনের অধীনে থাকলে ভোটার তালিকা ও ভোটার শনাক্তকরণের ক্ষেত্রে আরও স্বচ্ছতা নিশ্চিত হবে বলে তাদের ধারণা।
এই ৯ দফা প্রস্তাবনার মূল উদ্দেশ্য হলো দেশের নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারের মাধ্যমে একটি গ্রহণযোগ্য, স্বচ্ছ এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজন করা, যেখানে জনগণের প্রকৃত মতামত প্রতিফলিত হবে।