আন্তর্জাতিক

হিযবুত তাহ্‌রীরকে নিষিদ্ধ করল ভারত

উপ-সম্পাদক

উপ-সম্পাদক

শুক্রবার, ১১ অক্টোবর, ২০২৪
হিযবুত তাহ্‌রীরকে নিষিদ্ধ করল ভারত
ভারত সরকার সন্ত্রাসী সংগঠন হিযবুত তাহ্‌রীরকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। বৃহস্পতিবার ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে এ ঘোষণা দেয়। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, হিযবুত তাহ্‌রীর একটি চরমপন্থী সংগঠন যা জিহাদ ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে ভারতসহ বিশ্বজুড়ে ইসলামি রাষ্ট্র ও খিলাফত প্রতিষ্ঠা করতে চায়। সংগঠনটি ভারতের অভ্যন্তরে ও বাইরে সন্ত্রাসবাদের বিস্তারে জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে।
ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাদের প্রজ্ঞাপনে আরও জানিয়েছে, হিযবুত তাহ্‌রীর তরুণ সমাজের সহজ-সরল সদস্যদের চরমপন্থার দিকে ধাবিত করছে। তারা তাদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে ব্যবহারের জন্য তরুণদের উদ্বুদ্ধ করছে এবং তাদের আইএস (ইসলামিক স্টেট)-এর মতো সন্ত্রাসী সংগঠনে যোগদানে উৎসাহিত করছে। সংগঠনটি সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনার জন্য আর্থিক তহবিল সংগ্রহেও জড়িত রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। এর ফলে দেশের নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়েছে, যা সরকারকে এই পদক্ষেপ নিতে বাধ্য করেছে।
এই নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এক্স (সাবেক টুইটার)-এ পোস্ট দিয়ে বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির 'সন্ত্রাসবাদের প্রতি শূন্য সহনশীলতা' নীতির ধারাবাহিকতায় হিযবুত তাহ্‌রীরকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ভারতের কঠোর অবস্থানের কারণে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, যা দেশের জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ।
হিযবুত তাহ্‌রীরকে নিষিদ্ধ করার ক্ষেত্রে ভারত একা নয়। এর আগে, ২০২৪ সালের ১৫ জানুয়ারি যুক্তরাজ্যও এই সংগঠনকে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হিসেবে ঘোষণা করে। এছাড়াও, বাংলাদেশ, রাশিয়া, তুরস্ক, মিসরসহ বেশ কিছু দেশ হিযবুত তাহ্‌রীরকে নিষিদ্ধ করেছে। এসব দেশ সংগঠনটির বিপজ্জনক কর্মকাণ্ড এবং সন্ত্রাসী কার্যকলাপকে বাধা দিতে কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে। প্রতিটি দেশ তাদের নিরাপত্তা বজায় রাখতে এবং জনসাধারণের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সংগঠনটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।
হিযবুত তাহ্‌রীর মূলত একটি রাজনৈতিক ও চরমপন্থী ইসলামি সংগঠন, যা ১৯৫৩ সালে জেরুজালেমে প্রতিষ্ঠিত হয়। এর প্রতিষ্ঠাতা তাকি উদিন নাবাহানি ছিলেন একজন ফিলিস্তিনি ধর্মীয় নেতা। সংগঠনটির মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে বিশ্বব্যাপী খিলাফত প্রতিষ্ঠা করা এবং ইসলামি শাসন ব্যবস্থা চালু করা। তবে, তাদের এই উদ্দেশ্য অর্জনের জন্য তারা সন্ত্রাস ও চরমপন্থার পথ বেছে নিয়েছে, যা বিভিন্ন দেশের সরকার ও নিরাপত্তা বাহিনীর নজরে এসেছে। তারা যুব সমাজকে নিজেদের দিকে আকৃষ্ট করে তাদের চরমপন্থার দিকে ধাবিত করে এবং সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত করে তুলছে।
ভারত সরকার হিযবুত তাহ্‌রীরের মতো চরমপন্থী সংগঠনের বিরুদ্ধে আগে থেকেই কঠোর অবস্থান নিয়ে আসছে। এ ধরনের সংগঠনগুলোর কার্যকলাপ পর্যবেক্ষণ এবং তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষেত্রে সরকার সক্রিয়ভাবে কাজ করছে। বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির শাসনামলে সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলার জন্য একাধিক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে সন্ত্রাসবাদের প্রতি 'শূন্য সহনশীলতা' নীতি, যা সন্ত্রাসী সংগঠন ও তাদের কার্যক্রমের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে সাহায্য করছে।
ভারত সরকারের এই নিষেধাজ্ঞা সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে একটি বড় পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। হিযবুত তাহ্‌রীরের মতো সংগঠনগুলোর কার্যকলাপ জনসাধারণের জন্য বিপজ্জনক এবং দেশের নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ। বিভিন্ন দেশে এই সংগঠন নিষিদ্ধ হওয়ায় আন্তর্জাতিক মহলেও এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ আলোচ্য বিষয় হিসেবে উঠে এসেছে। ভারতের এই পদক্ষেপ বিশ্বজুড়ে সন্ত্রাসবাদ বিরোধী প্রচেষ্টাকে আরও জোরালো করবে।