আন্তর্জাতিক

৩০ সেকেন্ডে ৯৭টি ক্লিপ বিশ্ব রেকর্ড

উপ-সম্পাদক

উপ-সম্পাদক

মঙ্গলবার, ৮ অক্টোবর, ২০২৪
৩০ সেকেন্ডে  ৯৭টি ক্লিপ বিশ্ব রেকর্ড
রিয়ার লাগোস শহরের হেলেন উইলিয়ামস, যিনি পরচুলা বানানোর কাজে নতুন এক উচ্চতায় পৌঁছে গেছেন, সম্প্রতি নতুন একটি গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ড গড়েছেন। মাত্র ৩০ সেকেন্ডে ৯৭টি চুলের ক্লিপ পরিয়ে তিনি নতুন রেকর্ড স্থাপন করেন। এটি ছিল তাঁর চতুর্থ বিশ্ব রেকর্ড, এবং প্রতিটি রেকর্ডই পরচুলার সঙ্গে সম্পর্কিত। পরচুলা বানানোর এই জগতে হেলেন নিজেকে যেমন প্রমাণ করেছেন, তেমনি নিজের কর্মদক্ষতা ও সৃজনশীলতার মাধ্যমে বিশ্ববাসীকে অবাক করে দিয়েছেন।
হেলেন উইলিয়ামসের পরচুলা বানানোর যাত্রা শুরু হয় কয়েক বছর আগে। নিজের দেশ নাইজেরিয়ায় লাগোস শহরে পরচুলা ব্যবসার মাধ্যমে তিনি ভাগ্য বদলাতে শুরু করেন। ব্যবসায়িক সাফল্য তাঁর ব্যক্তিগত এবং পেশাগত জীবনে একটি উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন নিয়ে আসে। পরচুলার বাজারে তাঁর ব্যবসা যেমন সফলতা পেয়েছে, তেমনি তিনি নিজের নৈপুণ্যের মাধ্যমে একের পর এক বিশ্ব রেকর্ড গড়েছেন।
হেলেনের প্রথম বিশ্ব রেকর্ডটি আসে ২০২৩ সালের জুলাই মাসে। সেই সময় তিনি ৩৫১.২৮ মিটার বা ১,১৫২ ফুট ৫ ইঞ্চি দৈর্ঘ্যের একটি পরচুলা বানান। এই বিশাল পরচুলাটি তাঁকে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসের স্বীকৃতি এনে দেয়, এবং এটি বিশ্বের সবচেয়ে লম্বা হাতে তৈরি পরচুলা হিসেবে পরিচিতি পায়। এটি কেবল একটি পরচুলা নয়, বরং তাঁর ধৈর্য, নিষ্ঠা এবং দক্ষতার প্রতীক। এত বড় একটি পরচুলা বানাতে অনেক সময় এবং পরিশ্রমের প্রয়োজন হয়েছিল, কিন্তু হেলেনের কঠোর পরিশ্রম তাঁকে এই অসাধারণ কৃতিত্ব অর্জন করতে সাহায্য করেছে।
পরবর্তী বছর, ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে হেলেন আবারো একটি নতুন রেকর্ড গড়েন। এবার তিনি বানান সবচেয়ে চওড়া পরচুলা, যার প্রস্থ ছিল ৩.৬৫ মিটার বা ১১ ফুট ১১ ইঞ্চি। এই বিশাল চওড়া পরচুলাটিও গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসের স্বীকৃতি লাভ করে। হেলেনের সৃজনশীলতা এবং দক্ষতার কারণে তিনি পরচুলার দুনিয়ায় নিজেকে অনন্যভাবে উপস্থাপন করতে পেরেছেন।
পরচুলা বানানোর ক্ষেত্রে হেলেনের প্রতিভা এখানেই থেমে থাকেনি। ২০২৪ সালের জুলাই মাসে তিনি তৃতীয় বিশ্ব রেকর্ড গড়েন, যখন তিনি ৩০ সেকেন্ডে একটি পরচুলা পরা মাথায় ৯৪টি চুলের ক্লিপ পরান। এটি একটি দ্রুত এবং অত্যন্ত দক্ষতার প্রয়োজনীয় কাজ ছিল। এর কয়েক মাস পর, আগস্ট মাসে হেলেন নিজেই তাঁর এই রেকর্ড ভেঙে ফেলেন, যখন তিনি ৩০ সেকেন্ডে ৯৭টি ক্লিপ পরিয়ে নতুন আরেকটি বিশ্ব রেকর্ড স্থাপন করেন।
এই রেকর্ডটি গড়তে তিনি চুলের ক্লিপগুলো দ্রুত ও সঠিকভাবে পরিয়েছিলেন, যা সময়ের নিরিখে খুবই চ্যালেঞ্জিং। হেলেনের এই দ্রুত কাজ এবং দক্ষতা তাঁকে পরচুলা বানানোর জগতে অনন্য এক ব্যক্তিত্ব হিসেবে তুলে ধরেছে।
লাগোসে হেলেনের ব্যবসা বেশ সফল। তাঁর দল প্রতিদিন প্রায় ৫০টি পরচুলা তৈরি করে। যদিও সব পরচুলাই রেকর্ড ভাঙার মতো নয়, তবুও তাঁর কাজের পরিশ্রম এবং দক্ষতার প্রশংসা সর্বত্র। হেলেন নিজের ব্যবসায় পরিশ্রমী হিসেবে পরিচিত, এবং তিনি তাঁর কাজের মাধ্যমে অনেকের কাছে অনুপ্রেরণা হয়ে উঠেছেন। বিশেষ করে সবচেয়ে লম্বা পরচুলা বানানোর সময় তিনি টানা ১১ দিন ধরে কাজ করেছিলেন, যা তাঁর প্রতিশ্রুতি এবং কাজের প্রতি নিবেদনকে প্রতিফলিত করে।
হেলেন উইলিয়ামসের স্বপ্ন কেবল এখানেই শেষ নয়। তিনি তাঁর কাজের মাধ্যমে বিশ্বের সবচেয়ে বড় পরচুলা বানানোর প্রতিষ্ঠান গড়ার স্বপ্ন দেখেন। যদিও এটি দীর্ঘমেয়াদী একটি লক্ষ্য, তবুও তিনি আশা করছেন যে একদিন তিনি এই স্বপ্ন বাস্তবায়িত করতে পারবেন। তবে তাঁর সাম্প্রতিক লক্ষ্য হলো বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু পরচুলা তৈরি করা, যা তাঁকে আরেকটি বিশ্ব রেকর্ড অর্জনে সহায়তা করতে পারে।
হেলেন তাঁর সাফল্যের পেছনে পরিবারের সমর্থনকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেন। তিনি জানান যে তাঁর পরিবারের সদস্য এবং বন্ধুরা তাঁর কঠিন সময়ে সব সময় পাশে ছিলেন। তাঁদের সমর্থন ছাড়া তিনি এতদূর আসতে পারতেন না।
হেলেন উইলিয়ামস, একজন সৃজনশীল এবং পরিশ্রমী নারী, যিনি পরচুলার মাধ্যমে নিজের প্রতিভাকে বিশ্বব্যাপী পরিচিত করেছেন। তাঁর অর্জিত চারটি বিশ্ব রেকর্ড কেবল তাঁর দক্ষতার পরিচয়ই নয়, বরং তাঁর অধ্যবসায় এবং সৃষ্টিশীলতারও প্রতিফলন। হেলেনের গল্প আমাদের সকলকে দেখায় যে, সমর্থন এবং কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে যেকোনো ব্যক্তি সাফল্য অর্জন করতে পারে।