আন্তর্জাতিক

আবার সুসম্পর্কে চীন-অস্ট্রেলিয়া: সি চিন পিং

স্টাফ রিপোর্টার

স্টাফ রিপোর্টার

মঙ্গলবার, ১৫ জুলাই, ২০২৫
আবার সুসম্পর্কে চীন-অস্ট্রেলিয়া: সি চিন পিং
চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং মন্তব্য করেছেন যে, অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে তাঁর দেশের সম্পর্ক অতীতের টানাপোড়েন কাটিয়ে এখন আবার ইতিবাচক পথে ফিরে এসেছে। আজ মঙ্গলবার বেইজিংয়ে অবস্থিত গ্রেট হলে অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজের সঙ্গে বৈঠককালে তিনি এই কথা বলেন। বৈশ্বিক অস্থিরতা ও বাণিজ্যিক টানাপোড়েনের সময়েও উভয় দেশ পারস্পরিক সংলাপ ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখার পথ অনুসন্ধান করছে বলে তিনি ইঙ্গিত দেন। এই খবরটি প্রথম জানায় আল জাজিরা।
প্রধানমন্ত্রী আলবানিজ ছয় দিনের সফরে চীন অবস্থান করছেন। এই সফরের মূল উদ্দেশ্য হলো চীনের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরও গভীর করা। এটি তাঁর প্রধানমন্ত্রিত্বকালে দ্বিতীয়বার চীন সফর। চীন বর্তমানে অস্ট্রেলিয়ার সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক অংশীদার।
সি চিন পিং আরও বলেন, ‘বিশ্ব রাজনীতির গতিপথ যেমনই হোক না কেন, চীন ও অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে দীর্ঘমেয়াদি সহযোগিতার ভিত্তি মজবুত রাখা উচিত।’ তিনি স্বীকার করেন যে, দুই দেশের সম্পর্ক এখন আগের জটিলতা পেরিয়ে নতুনভাবে গড়ে উঠছে।
গত দশ বছরে চীন ও অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে সম্পর্ক নানা চড়াই-উতরাইয়ের মধ্য দিয়ে গেছে। নিরাপত্তা এবং ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে প্রভাব বিস্তার নিয়ে দ্বন্দ্ব প্রায়শই সামনে এসেছে। তবে ২০২৩ সালের শেষ দিকে পরিস্থিতির উন্নতি ঘটে, যখন চীন অস্ট্রেলিয়ান রক লবস্টারের ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নেয়। এই পদক্ষেপটি দুই দেশের মধ্যে চলমান বাণিজ্যিক উত্তেজনার অবসানের অন্যতম বড় নিদর্শন ছিল।
অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী জানান, তিনি চীনের সঙ্গে তাঁর দেশের দৃষ্টিভঙ্গি এবং স্বার্থ স্পষ্টভাবে তুলে ধরার সুযোগকে ইতিবাচকভাবে নিয়েছেন। তিনি বলেন, দুই দেশের সম্পর্কের কেন্দ্রে পারস্পরিক সংলাপ থাকা উচিত। তাঁর মতে, চীনের সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ার সম্পর্ক শান্তিপূর্ণ এবং ধারাবাহিক থাকবে, যা জাতীয় স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিয়ে পরিচালিত হবে।
আলবানিজ বলেন, “এই ধরনের সরাসরি আলোচনা আমাদের অঞ্চলের নিরাপত্তা ও উন্নয়নের জন্য অপরিহার্য। আপনি ও আমি পূর্বে যে বিষয়ের ওপর একমত হয়েছিলাম, তা হলো—দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে কথোপকথন থাকা দরকার।”
এই বৈঠক এমন এক সময়ে হলো, যখন চীন যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বাণিজ্য নীতিকে ঘিরে উদ্ভূত পরিস্থিতিকে কাজে লাগিয়ে নিজেদের একটি নির্ভরযোগ্য অংশীদার হিসেবে উপস্থাপন করতে চায়। যদিও অস্ট্রেলিয়া যুক্তরাষ্ট্রকে তার প্রধান নিরাপত্তা সহযোগী হিসেবে দেখে, আলবানিজ প্রশাসন চীনের বিষয়ে একধরনের ভারসাম্যপূর্ণ নীতি অনুসরণ করছে—যেখানে একদিকে সহযোগিতা, অন্যদিকে প্রয়োজন হলে বিরোধিতাও করা হয়।
চীনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তারা এক দশক আগে স্বাক্ষরিত মুক্ত বাণিজ্য চুক্তিকে আরও বিস্তৃত করতে চায় এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মতো প্রযুক্তিখাতে অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী। সি চিন পিং জানান, দুদেশের মধ্যে সম্পর্ক আরও এগিয়ে নেওয়ার জন্য চীন প্রস্তুত।
চায়না ডেইলি নামের চীনা সরকারি সংবাদমাধ্যম আজ আলবানিজের সফরকে ইতিবাচক হিসেবে আখ্যায়িত করে মন্তব্য প্রকাশ করেছে। সেখানে বলা হয়, রাজনৈতিক ব্যবস্থায় ভিন্নতা থাকলেও পারস্পরিক সহযোগিতা সম্ভব। তবে অগ্রগতির পথে এখনো কিছু প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। যেমন—চীনের সামরিক সম্প্রসারণ নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার উদ্বেগ, অস্ট্রেলিয়ান লেখক ইয়াং হেংজুনের কারাবন্দি থাকা এবং তাঁর বিরুদ্ধে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে দেওয়া শাস্তি নিয়ে উৎকণ্ঠা।
চীন আরও অভিযোগ করেছে যে, অস্ট্রেলিয়া তাদের দেশে চীনা বিনিয়োগের উপর অতিরিক্ত নজরদারি চালাচ্ছে এবং চীনের লিজে থাকা একটি বন্দরকে আবার নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সেটিও সমালোচনার যোগ্য।