আন্তর্জাতিক

বিশ্বের সব থেকে দরিদ্রতম ১০ দেশ

উপ-সম্পাদক

উপ-সম্পাদক

মঙ্গলবার, ৮ অক্টোবর, ২০২৪
বিশ্বের সব থেকে দরিদ্রতম ১০ দেশ
দারিদ্রতা  বিশ্বের একটি বড় সমস্যা, এবং বিশেষ করে কিছু দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা অত্যন্ত শোচনীয়। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ২০২৪ সালের ৬ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে ফোর্বস ইন্ডিয়া বিশ্বে মাথাপিছু জিডিপি (পিপিপি) অনুযায়ী সবচেয়ে দরিদ্র ১০টি দেশের তালিকা দিয়েছে। এই দেশগুলোর মধ্যে ৯টি আফ্রিকাতে অবস্থিত এবং ১টি পশ্চিম এশিয়ার। চলুন এই দেশগুলোর অর্থনৈতিক অবস্থা বিশ্লেষণ করি।
১. দক্ষিণ সুদান
দক্ষিণ সুদান বিশ্বের দরিদ্রতম দেশ, যার মাথাপিছু জিডিপি মাত্র ৪৫৫.১৬ মার্কিন ডলার। ২০১১ সালে স্বাধীনতা লাভ করার পর থেকে দেশটি নানা ধরনের রাজনৈতিক অস্থিরতা ও সশস্ত্র সংঘর্ষের মধ্যে পড়েছে। দেশের অর্থনীতি প্রধানত তেল রপ্তানির ওপর নির্ভরশীল, তবে দীর্ঘদিনের গৃহযুদ্ধ এবং রাজনৈতিক অস্থিরতা দেশটির উন্নয়নে বাধা সৃষ্টি করেছে। অবকাঠামোগত উন্নয়ন এবং স্বাস্থ্যসেবার অভাবের কারণে দেশটির মানুষের জীবনমান অত্যন্ত নিম্নমানের।
২. বুরুন্ডি
দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা বুরুন্ডির মাথাপিছু জিডিপি ৯১৫.৮৮ মার্কিন ডলার। এই পূর্ব আফ্রিকান দেশটি মূলত কৃষিনির্ভর, তবে রাজনৈতিক সংঘর্ষ, দুর্নীতি এবং অবকাঠামোর দুর্বলতা দেশটির উন্নয়নের পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বুরুন্ডির জনগণ প্রায়ই দারিদ্র্য এবং অপুষ্টির সঙ্গে লড়াই করে থাকে। সুশাসনের অভাব এবং দুর্বল অর্থনৈতিক নীতি দেশের আর্থিক প্রবৃদ্ধিতে বড় বাধা।
৩. মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্র
মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্র তৃতীয় দরিদ্রতম দেশ, যেখানে মাথাপিছু জিডিপি ১,২০০ মার্কিন ডলার। দেশটি সম্পদে ধনী হলেও রাজনৈতিক অস্থিরতা, বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর কার্যকলাপ এবং দুর্নীতির কারণে সম্পদগুলোর যথাযথ ব্যবহার হয় না। বিশেষ করে হীরা, সোনা ও ইউরেনিয়াম রপ্তানি দেশটির প্রধান আয়, তবে নিরাপত্তাহীনতা এবং প্রশাসনিক অদক্ষতা এই আয়কে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বাধাগ্রস্ত করে।
৪. গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্র
গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্রের মাথাপিছু জিডিপি ১,৫৫০ মার্কিন ডলার, যা বিশ্বের চতুর্থ দরিদ্রতম দেশ। দেশটি বিশাল খনিজ সম্পদের অধিকারী হলেও, রাজনৈতিক অস্থিরতা, সশস্ত্র সংঘর্ষ, দুর্নীতি এবং দুর্বল শাসনব্যবস্থার কারণে অর্থনৈতিক উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হয়েছে। খনিজ সম্পদের অবৈধ খনন এবং শোষণ দেশটির আয়ের বড় অংশ দখল করে। দেশটির স্থায়ী নিরাপত্তাহীনতা এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার অভাব দেশটির জনগণের জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে বড় বাধা।
৫. মোজাম্বিক
মোজাম্বিকের মাথাপিছু জিডিপি ১,৬৫০ মার্কিন ডলার। দেশটি কৃষিনির্ভর হলেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে প্রাকৃতিক গ্যাসের মজুত আবিষ্কারের কারণে কিছুটা অর্থনৈতিক উন্নয়ন হয়েছে। তবে দেশের বেশিরভাগ জনগণ দারিদ্র্য সীমার নিচে বসবাস করে। দুর্নীতি, দুর্বল অবকাঠামো এবং শিক্ষার অভাব দেশটির আর্থিক উন্নতির বড় বাধা।
৬. নাইজার
নাইজার বিশ্বের ষষ্ঠ দরিদ্রতম দেশ, যার মাথাপিছু জিডিপি ১,৬৭০ মার্কিন ডলার। এটি মূলত কৃষিপ্রধান দেশ, তবে বারবার খরা এবং রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা দেশটির উন্নয়নের জন্য বড় বাধা। এছাড়াও, নাইজারে শিক্ষার হার এবং স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা খুবই দুর্বল, যা মানুষের জীবনমানের নিম্নগতি বাড়াচ্ছে।
৭. মালাউই
মালাউইয়ের মাথাপিছু জিডিপি ১,৭১০ মার্কিন ডলার, এবং এটি সপ্তম দরিদ্রতম দেশ। কৃষিনির্ভর হলেও খাদ্য নিরাপত্তার সমস্যা এবং খরার কারণে দেশটির অর্থনীতি ভঙ্গুর। দুর্নীতি এবং দুর্বল প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনা দেশটির উন্নয়নের পথে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
৮. লাইবেরিয়া
লাইবেরিয়ার মাথাপিছু জিডিপি ১,৮৮০ মার্কিন ডলার। গৃহযুদ্ধ এবং রাজনৈতিক অস্থিরতার দীর্ঘ ইতিহাসের পর, দেশটি কিছুটা স্থিতিশীলতার পথে এগোচ্ছে। তবে, অর্থনৈতিক অবস্থা এখনো খুবই দুর্বল। স্বাস্থ্য, শিক্ষা, এবং অবকাঠামোর অভাব দেশটির জনগণের জীবনযাত্রাকে প্রভাবিত করছে।
৯. মাদাগাস্কার
মাদাগাস্কারের মাথাপিছু জিডিপি ১,৯৮০ মার্কিন ডলার। দেশটির অর্থনীতি কৃষি এবং পর্যটনের ওপর নির্ভরশীল। তবে দুর্বল অবকাঠামো, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা এবং জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে দেশটি দারিদ্র্য থেকে মুক্তি পাচ্ছে না। বিশেষ করে বারবার ঘূর্ণিঝড় এবং খরা দেশের উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত করে।
১০. ইয়েমেন
এই তালিকার একমাত্র অ-আফ্রিকান দেশ হলো ইয়েমেন, যার মাথাপিছু জিডিপি ২,০০০ মার্কিন ডলার। পশ্চিম এশিয়ার এই দেশটি গৃহযুদ্ধ, খাদ্য সংকট, এবং স্বাস্থ্য সংকটের মধ্যে পড়েছে। দেশটির অর্থনৈতিক অবস্থা অত্যন্ত শোচনীয়, এবং যুদ্ধ পরিস্থিতির কারণে দেশটির অবকাঠামো ও প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনা ভেঙে পড়েছে। তেল সম্পদ থাকা সত্ত্বেও, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা দেশটির অর্থনৈতিক উন্নয়নকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করছে।