আন্তর্জাতিক

ইসরাইলের অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করল জাতিসংঘ

উপ-সম্পাদক

উপ-সম্পাদক

শনিবার, ৫ অক্টোবর, ২০২৪
ইসরাইলের অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করল জাতিসংঘ
লেবাননের সীমান্তে শান্তিরক্ষীদের সরানোর জন্য ইসরাইলের অনুরোধ সরাসরি নাকচ করে দিয়েছে জাতিসংঘ। ইসরাইল লেবাননে স্থল অভিযান শুরুর আগে ব্লু লাইন থেকে কিছু শান্তিরক্ষী সরিয়ে নিতে জাতিসংঘকে অনুরোধ করেছিল। তবে, ইসরাইলের সেই অনুরোধের বিপরীতে জাতিসংঘ সাফ জানিয়ে দিয়েছে যে, তারা এ ধরনের সিদ্ধান্তে সম্মতি দেবে না। বিষয়টি সম্পর্কে সিএনএন-এর এক প্রতিবেদনে বিস্তারিত বলা হয়েছে।
জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশন ইউএনআইএফআইএল (ইউনাইটেড নেশনস ইন্টারিম ফোর্স ইন লেবানন)-এর দায়িত্বে থাকা সেক্রেটারি জেনারেল জ্যঁ পিয়েরে লাক্রোয়া সিএনএনকে জানিয়েছেন, ইসরাইল তাদের অনুরোধ জানিয়েছিল যাতে সীমান্তের কয়েকটি নির্দিষ্ট অবস্থান থেকে শান্তিরক্ষী বাহিনী সরিয়ে নেওয়া হয়। ইসরাইলের অভিযোগ ছিল যে, লেবাননে স্থল অভিযান শুরু হলে এই শান্তিরক্ষীদের জন্য তা বিপজ্জনক হতে পারে।
তবে, জাতিসংঘ তাদের অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করে। কারণ, জাতিসংঘের মতে, শান্তিরক্ষীদের সরিয়ে নেওয়া হলে সীমান্ত পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে উঠতে পারে। জাতিসংঘ আগে থেকেই অনুমান করেছিল যে, লেবাননে ইসরাইলের অভিযান হতে পারে, এবং সেই সম্ভাবনার প্রেক্ষাপটে তারা শান্তিরক্ষীদের নিরাপত্তা বিবেচনায় রেখেই পরিকল্পনা করেছিল।
ব্লু লাইন হলো জাতিসংঘের বেঁধে দেওয়া একটি সীমারেখা, যা লেবাননকে ইসরাইল ও ইসরাইল অধিকৃত গোলান মালভূমি থেকে পৃথক করেছে। এই রেখা বরাবর জাতিসংঘের শান্তিরক্ষীরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে নিয়োজিত রয়েছেন। ব্লু লাইন ২০০০ সালে ইসরাইলি বাহিনী দক্ষিণ লেবানন থেকে সরে যাওয়ার সময় নির্ধারিত হয়। তবে, এই সীমারেখা অতিক্রম করা হলে তা জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের ১৭০১ প্রস্তাবের লঙ্ঘন হিসেবে ধরা হয়।
ইসরাইলের দক্ষিণ লেবানন আক্রমণের পর ১৯৭৮ সালে জাতিসংঘের উদ্যোগে শান্তিরক্ষী বাহিনী ইউএনআইএফআইএল মোতায়েন করা হয়। এই বাহিনীর মূল দায়িত্ব ছিল ব্লু লাইনের আশপাশে নিরাপত্তা বজায় রাখা এবং লেবাননের স্থিতিশীলতা রক্ষা করা। প্রতি বছর জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের ১৫ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি বাহিনীর কার্যক্রমের মেয়াদ পুনর্নির্ধারণ করে।
২০০৬ সালে ইসরাইল ও লেবাননের হিজবুল্লাহর মধ্যে মাসব্যাপী যুদ্ধের পর জাতিসংঘের ১৭০১ প্রস্তাব গৃহীত হয়, যা ইউএনআইএফআইএল-এর দায়িত্ব আরও বিস্তৃত করে। এই প্রস্তাবের অধীনে, ইউএনআইএফআইএল লেবানন-ইসরাইল সীমান্তে শান্তি রক্ষায় আরও কার্যকর ভূমিকা পালন করতে শুরু করে। বর্তমানে, এই বাহিনী সেই অঞ্চলে নিরাপত্তা ও শান্তি বজায় রাখার গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে কাজ করছে।
ইসরাইলের সাম্প্রতিক আক্রমণাত্মক মনোভাব ও সামরিক প্রস্তুতি দেখে জাতিসংঘ ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক মহল উদ্বিগ্ন। লেবাননের বিরুদ্ধে সম্ভাব্য সামরিক অভিযান পরিচালনার আগেই ইসরাইল সীমান্ত থেকে শান্তিরক্ষী বাহিনী সরানোর অনুরোধ করেছিল। তবে, জাতিসংঘ মনে করছে যে, শান্তিরক্ষীদের সরিয়ে নিলে ইসরাইল আরও স্বাচ্ছন্দ্যে আক্রমণ চালাতে পারে, যা পরিস্থিতি আরও অবনতির দিকে নিয়ে যেতে পারে।
মধ্যপ্রাচ্যে সাম্প্রতিক সময়ে উত্তেজনা বেড়েই চলেছে। ইসরাইলের আক্রমণাত্মক নীতি এবং লেবানন ও সিরিয়ার পরিস্থিতি এই অঞ্চলের স্থিতিশীলতা নষ্ট করছে। সিরিয়ায় ইরানি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সফরও এই অঞ্চলের উত্তেজনা বাড়িয়ে তুলেছে। ইসরাইল-লেবাননের সীমান্তে যে কোন সংঘর্ষ আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে। জাতিসংঘের এই সিদ্ধান্তকে অনেকেই স্থিতিশীলতা বজায় রাখার প্রচেষ্টা হিসেবে দেখছেন।
ইসরাইলের অনুরোধ নাকচ করার মাধ্যমে জাতিসংঘ এই সংকটময় পরিস্থিতিতে শান্তিরক্ষী বাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা বজায় রাখার সংকল্প দেখিয়েছে। লেবানন ও ইসরাইলের সীমান্তে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষীরা থেকে যাওয়ায় সেখানে শান্তি বজায় রাখার প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে। তবে, পরিস্থিতি কোন দিকে মোড় নেয়, তা সময়ই বলে দেবে।