নব্বইয়ের দশকে বাংলা চলচ্চিত্রে অভিনয় করে দর্শকের মন জয় করা নায়িকা বনশ্রী আর নেই। দীর্ঘদিন রোগভোগ ও নিঃসঙ্গতার সঙ্গে লড়াই শেষে গত মঙ্গলবার সকাল ১০টায় মাদারীপুরের শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। বয়স হয়েছিল ৫৩ বছর।
রোগশোকে জর্জরিত এই অভিনেত্রীর মৃত্যুর সময় পাশে ছিলেন তাঁর একমাত্র ছেলে মেহেদী হাসান ও ছোট ভাই হারুন শিকদার। পরে বনশ্রীর মরদেহ কুমিরপাড়ায় নিয়ে যাওয়া হয় এবং সন্ধ্যায় পারিবারিক কবরস্থানে তাঁকে সমাহিত করা হয়।
হারুন শিকদার জানান, বেশ কয়েক মাস ধরে কিডনি, মস্তিষ্ক ও হৃদ্রোগসহ নানা সমস্যায় ভুগছিলেন বনশ্রী। ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসার পর দুই মাস আগে তিনি নিজ গ্রাম শিবচরে চলে যান। পাঁচ দিন আগে অসুস্থ হয়ে পড়লে তিনি নিজে থেকেই শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হন। সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়।
নব্বইয়ের দশকে বনশ্রী ছিলেন দর্শকের প্রিয় মুখ। ১৯৯৪ সালে ‘সোহরাব-রুস্তম’ সিনেমার মাধ্যমে রুপালি পর্দায় তাঁর অভিষেক ঘটে। নায়ক ইলিয়াস কাঞ্চনের বিপরীতে অভিনীত সেই ছবিটি বাণিজ্যিকভাবে সফল হয়। এরপর নায়ক মান্না, রুবেল ও আমিন খানের সঙ্গে একাধিক চলচ্চিত্রে অভিনয় করে তিনি জনপ্রিয়তা পান। তবে একসময় চলচ্চিত্র ছেড়ে দিলে জীবনে নেমে আসে আর্থিক অনটন।
২০১৪ সালে এক সাক্ষাৎকারে বনশ্রী জানিয়েছিলেন, সংসার চালাতে তাঁকে ফুল বিক্রি ও বাসে বাসে হকারি করতে হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে শিবচরে সরকারের আশ্রয়ণ প্রকল্পের একটি ঘরে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন তিনি। সরকারি অনুদানের ওপরই তখন নির্ভরশীল হয়ে ওঠেন একসময়ের আলোচিত এই চিত্রনায়িকা।
১৯৭২ সালে মাদারীপুরের শিবচরের মাদবরের চর ইউনিয়নের শিকদারকান্দি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন বনশ্রী। বাবা মজিবুর রহমান মজনু শিকদার ও মা সবুরজান রীনা বেগমের তিন সন্তানের মধ্যে তিনি ছিলেন সবার বড়। শৈশবে পরিবারসহ ঢাকায় বসবাস শুরু করলেও জীবনের শেষ অধ্যায়ে ফিরে যান গ্রামের বাড়িতে।
আলো, ক্যামেরা আর করতালির ঝলক পেছনে ফেলে জীবনের শেষ দৃশ্যে নিঃসঙ্গতা ও অভাব-অনটনই ছিল বনশ্রীর সঙ্গী। রুপালি পর্দার এই প্রাক্তন নায়িকার বিদায় দর্শকদের মনে করিয়ে দিলো, খ্যাতি ও জনপ্রিয়তার আড়ালেও শিল্পীদের জীবন কতটা অনিশ্চিত হতে পারে।