বাংলা সিনেমা জগতের জনপ্রিয় মুখ চিত্রনায়িকা মৌসুমী। সম্প্রতি তিনি চেয়েছেন, তার মৃত্যুর পর তার মৃতদেহ যেন কেউ না দেখে। এছাড়া জনপ্রিয় এই অভিনেত্রীর আরও চেয়েছেন, মৃত্যুর পর তার সব সিনেমাগুলো যেন সরিয়ে ফেলা হয়। আর তার সিনেমা যেসব ভক্তের ডিভাইসে আছে তা যেন ডিলিট করে ফেলেন। এমনকি টিভি চ্যানেলেও যেন ‘ধুমধাড়াক্কা’ কোনও সিনেমা দেখানো না হয়। এমন চাওয়ার কারণ এই সময়ে এসে ক্যারিয়ারের চেয়ে পরকালের ভাবনা। পরকালের ভাবনার সাথে সাথে মৌসুমিকে এখন দেখা যায় পরিবার ও ব্যক্তিজীবন নিয়েই বেশি ব্যস্ত থাকতে।
প্রায় ৩০ বছর ধরে বাংলা সিনেমার সাথে সংশ্লিষ্ট জনপ্রিয় এই অভিনেত্রী। তিন দশকের ক্যারিয়ারে অসংখ্য সিনেমা উপহার দিয়েছেন ঢাকাই সিনেমার নন্দিত চিত্রনায়িকা মৌসুমী। দু হাত ভরে কুড়িয়েছেন ভক্তদের ভালোবাসা। তবে এখন পর্দায় আর নিয়মিত দেখা যায়না তাকে। এই সময়ে এসে ক্যারিয়ারের চেয়ে পরকাল ভাবনাই বেশি ফুটে উঠেছে অভিনেত্রীর কণ্ঠে।কিছুদিন আগে, অভিনেতা ও সঞ্চালক শাহরিয়ার নাজিম জয়ের ১৩টি প্রশ্নের মুখোমুখি হন এ অভিনেত্রী। সেখানে মৌসুমী তার জীবনের শেষ কিছু ইচ্ছে ও ভাবনার কথা জানিয়েছেন
বলেছেন, ‘আমি যদি মরে যাই, আমার সব ভুলের জন্য ক্ষমা চাই সবার কাছে। ক্ষমা করে দেবেন আমাকে। আমার কয়েকটি ইচ্ছে আছে। ইচ্ছে গুলো হলো, আমি মারা যাবার পর, আমার লাশ যেন কাউকে দেখতে দেওয়া না হয়। অবশ্যই খুব গোপনে যেন কবর দেওয়া হয়। জানাজা হবে, কিন্তু আমি চাই না কেউ আমাকে আর জানাজার পর দেখুক। আর মারা যাওয়ার আগে বড় হজ করার ইচ্ছেও রয়েছে। আপনারা দোয়া করবেন আমার জন্য। আমার নিজের চেষ্টা তো রয়েছেই, সবার দোয়াও প্রয়োজন। এছাড়াও মৌসুমী অনুরোধ করেন, মৃত্যুর পর তার সিনেমাগুলো যেন সবার মোবাইল থেকে ডিলিট দেওয়া হয়। এমনকি টিভি চ্যানেলেও যেন ‘ধুমধাড়াক্কা’ কোনও সিনেমা দেখানো না হয়।
তার মতে, তার সিনেমা যদি সংরক্ষণ করতে হয়, তাহলে অবশ্যই “মৌসুমী আর্কাইভে” আলাদাভাবে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। কারোর কাছে সিনেমা থাকলে সেখানে সংরক্ষণের জন্য জমা দিয়ে দেওয়ার কথা বলেছেন। যদি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য তার কোনও কাজ মনে হয় যে আর্কাইভে রাখলে ভালো হবে, গবেষণার জন্য প্রয়োজন আছে, তাহলে সে উদ্দেশ্যেই শুধুমাত্র সিনেমাগুলো সংরক্ষিত হবে। সেখানেও অবশ্যই বাছাইকৃত সিনেমাগুলো আর্কাইভে রাখা হবে, ভালো উদ্দেশ্যে। এছাড়া অন্যসব সিনেমাগুলি ডিলিট করে দিলে ভালো হয়।’
সবশেষে ভক্তদের কাছে আরও একটি অনুরোধ জানান মৌসুমী। তার যে দাতব্য প্রতিষ্ঠান রয়েছে, সেটির কাজ যেন ভক্তরা সচল রাখেন।'কেয়ামত থেকে কেয়ামত' সিনেমা দিয়ে ঢালিউডে অভিষেক তার। 'দোলা', 'অন্তরে অন্তরে', 'দেনমোহর' ও 'স্নেহ' চলচ্চিত্রে অভিনয় করে দর্শকমহলে জনপ্রিয়তা লাভ করেন। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি এ অভিনেত্রীকে। মৌসুমী এখন পর্যন্ত অভিনয় করেছেন শতাধিক সিনেমায়।
শোবিজের ঝলমলে জীবন ছেড়ে অনেকেই আড়াল জীবন বেছে নেন। ওপার বাংলার সুচিত্রা সেন থেকে ঢালিউডের শাবানা, এই তালিকায় অনেকেই আছেন। ভবিষ্যতে হয়তো তাদের নামের পাশে মৌসুমীর নামও লিপিবদ্ধ হবে।প্রসঙ্গত, মৌসুমীকে সর্বশেষ বড় পর্দায় দেখা গেছে গেলো বছরের ১১ নভেম্বরে। ওই দিন তার অভিনীত দুটি ছবি একসঙ্গে মুক্তি পেয়েছিল। এগুলো হলো ‘ভাঙন’ ও ‘দেশান্তর’। বর্তমানে মৌসুমীর অভিনয়ে ‘সোনার চর’ নামের একটি ছবি নির্মাণাধীন রয়েছে। যেখানে তার সঙ্গে আছেন জায়েদ খান ও ওমর সানী।