অন্যান্য

ম্যাকডোনাল্ডস কেন বাংলাদেশে আসেনি?

নিজস্ব প্রতিবেদক

নিজস্ব প্রতিবেদক

বৃহস্পতিবার, ২১ জুলাই, ২০২২
ম্যাকডোনাল্ডস কেন বাংলাদেশে আসেনি?

বিশ্বের ১২০ টি দেশে ম্যাকডোনাল্ডসের রেস্টুরেন্ট থাকলেও বাংলাদেশে এর কোনো শাখা নেই।


আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারত, পাকিস্তান সহ বেশ কয়েকটি এশিয়ান দেশে ম্যাকডোনাল্ডস এর রেস্টুরেন্ট আছে।


কিন্তু এই বিখ্যাত ফাস্টফুড চেইন বাংলাদেশে তাদের কোনো কার্যক্রম চালু করেনি।


ম্যাকডোনাল্ডস হলো একটি বার্গার বিক্রয়কারী রেস্টুরেন্ট। এটি ১৯৪০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। 


বর্তমানে এটি বিশ্বের সবচেয়ে বিখ্যাত ফাস্টফুড চেইন। ১২০ টি দেশে ৩৯ হাজারের মতো রেস্টুরেন্ট আছে ম্যাকডোনাল্ডসের।


বাংলাদেশ একটি দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির দেশ। পিজ্জা হাট, নানদোস, কেএফসি সহ বিভিন্ন বিদেশি রেস্টুরেন্ট এদেশে তাদের আউটলেট চালু করেছে।


তাই অনেকেই প্রশ্ন করেন, বিশ্বের অন্যতম সেরা ফাস্টফুড চেইন ম্যাকডোনাল্ডস কেন এদেশে আসেনি।


ম্যাকডোনাল্ডস কতৃপক্ষের মতে তারা এখন কোনো দেশে নতুন আউটলেট চালু করবে না। বরং যে সকল দেশে তাদের আউটলেট আছে সেগুলোতে মনযোগ দিবে।


কিন্তু বাংলাদেশে ম্যাকডোনাল্ডস না আসার পেছনে আরো কিছু কারন আছে।


এমন জায়গায় তাদের রেস্টুরেন্ট স্থাপন করে যেখান থেকে দুইটি মেইন রোডে প্রবেশ করা যায়। তাদের রেস্টুরেন্টগুলো ৫০ হাজার স্কয়ারফিটের হয়।


যার মাঝে ৪৫ হাজার স্কয়ারফিটে রেস্টুরেন্ট এবং বাকিটুকুতে পার্কিং এর জায়গা থাকে। এরকম সুবিধাজনক জায়গা বাংলাদেশের শহর গুলোতে পাওয়া অত্যন্ত কঠিন।


তাছাড় তাদের ফ্র্যাঞ্চাইজি কেনার জন্য অনেকগুলো কঠিন শর্ত মানতে হয়। 


যার মধ্যে রয়েছে, উচ্চ বিনিয়োগ ব্যয়, নির্মাণ খরচের ৪০ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট, ফ্র্যাঞ্চাইজিং ফি হিসেবে ৪৫ হাজার মার্কিন ডলার, ও রয়্যালটি ফি বাবদ মাসিক বিক্রয় আয়ের ৪ শতাংশ দিতে হবে ম্যাকডোনাল্ডসকে।


তাছড়া ম্যাকডোনাল্ডসের কোথাও ব্যবসা শুরু করতে সাধারণত ১২ লাখ থেকে থেকে ২২ লাখ ডলারের মতো বিনিয়োগের প্রয়োজন হয়। 


কঠিন শর্ত ও এতো অর্থ বিনিয়োগ করে বাংলাদেশের কোনো ব্যবসায়ী ম্যাকডোনাল্ডসের ফ্র্যাঞ্চাইজি কিনতে আগ্রহী হয় না।


প্রতিষ্ঠানটি তাদের খাবার তৈরির কাঁচামাল নিজেরা সংগ্রহ করে। এমনকি কাঁচামাল যোগান দাতা কৃষকদের সাথে সরাসরি যোগাযোগ, ট্রেনিং দিয়ে থাকে।


প্রত্যেক উপকরণের সেফটি, হাইজিন ঠিকমতো যাচাই করে। লোকাল সাপ্লায়ারদের থেকে ফ্রেশ উপকরণ সংগ্রহ করে তারা। 


আমাদের দেশে এই কাজগুলো করা অনেকটাই অসম্ভব এবং ব্যয়বহুল। এছাড়া কাস্টমসের কর অনেক বেশি হওয়ায় বাইরে থেকে কাঁচামাল আমদানি করাও কষ্টকর। 


সঠিকভাবে খাবার প্রস্তুত করতে এক্ষেত্রে ম্যাকডোনাল্ডসকে অনেক বেশি খরচ করতে হবে। ফলে রিজনেবল দামে কাস্টমারকে খাবার প্রদান করা সম্ভব হয়ে উঠবে না।


তাছাড়া তারা তাদের রেস্টুরেন্ট গুলোতে নিজস্ব রেফ্রিজারেটর এবং চিলার রুম রাখে।


বাংলাদেশে কোল্ড স্টোরেজের পরিমাণ কম। তাই ম্যাকডোনাল্ডসের পক্ষে এখানে ব্যবসা করা কঠিন। 


ম্যাকডোনাল্ডস অত্যন্ত কঠোর। তারা কাঁচামাল উৎপন্ন করা থেকে শুরু করে বার্গার তৈরি করা পর্যন্ত, প্রতিটি ধাপে কোল্ড চেইনের মাধ্যমে পুরো প্রক্রিয়ার ট্রেসেবিলিটি নিশ্চিত করে থাকে। 


এসবের জন্য বাংলাদেশে প্রয়োজনীয় কোল্ড চেইন অবকাঠামো নেই।


বাংলাদেশে ম্যাকডোনাল্ডস চালু করতে গেলে একজন বিনিয়োগকারীকে কারিগরি সহায়তার জন্য ২০০ থেকে ৩০০ কোটি টাকা অতিরিক্ত বিনিয়োগও করতে হবে। 


তারা সবচেয়ে বেশি লাভ করে রিয়েল এস্টেট থেকে। কোম্পানিটি তাদের রেস্টুরেন্টে গুলোর ৪৫% জমির এবং ৭০ % ভবনের মালিক। 


বাংলাদেশের রিয়েল এস্টেট ব্যবসা অনেক অস্থিতিশীল। তাই ম্যাকডোনাল্ডস এখানে তাদের কার্যক্রম চালু করতে খুব একটা আগ্রহী হয় না।


এসকল কারনে ম্যাকডোনাল্ডস বাংলাদেশে আসেনি। আর বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরাও কোম্পানিটির ফ্র্যাঞ্চাইজি আনতে আগ্রহী হয়নি।