অন্যান্য

প্রথম সাবমেরিন যুদ্ধের ইতিহাস

নিজস্ব প্রতিবেদক

নিজস্ব প্রতিবেদক

রবিবার, ১৬ এপ্রিল, ২০২৩
প্রথম সাবমেরিন যুদ্ধের ইতিহাস
পানির উপরের যুদ্ধে সামরিক নৌবাহিনীর ব্যবহার অনেক আগে থেকেই ছিল । তবে বুদ্ধিমান মানুষ পানির উপরের যুদ্ধেই আটকে থাকেনি । আধুনিক যুদ্ধের কলাকৌশলকে নিয়ে গেছে পানির নিচ পর্যন্ত । তারই হাত ধরে এসেছে সাবমেরিন । 

আজকের দিনের পারমানবিক ,ইলেক্ট্রিক সাবমেরিন সহ নানা প্রকারের নানা আকারের সাবমেরিন থাকলেও ,আক্ষরিক অর্থে পানির নিচের যুদ্ধে সাবমেরিনের ব্যাবহার কিন্তু শুরু হয়েছিল আরো আগে । আজকে আমরা জানবো সেই সম্পর্কেই । 


বিশ্বের প্রথম মিলিটারি সাবমেরিন যিনি তৈরি করেছিলেন তার নাম ইয়াফিম নিকোনভ । তিনি রাশিয়ার জার  পিটারের সময়কার একজন নিরক্ষর নৌ যান নির্মান শ্রমিক ছিলেন । 

কাঠ দিয়ে বিশ্বের প্রথম সাবমেরিন তৈরি করেছিলেন তিনি । তার নির্মিত সাবমেরিনের নাম ছিল “”দ্যা মোরেল “ । ১৭২৪ সালে এর নির্মাণ কাজ শেষ হয় । এটি ছিল ২০ ফুট লম্বা এবং ৭ ফুট উচ্চতা বিশিষ্ট একটি স্টিলথ ভ্যাসেল । 

তবে ঠিক কি কারনে এটাকে স্টিলথ ভ্যাসেল বলা হতো তা এখনো জানা যায় না । একটা পরীক্ষা চালানোর সময় নদীর নিচে আটকে যায় সাবমেরিনটি । এরপর সেটাকে আর নদীর তলদেশ থেকে ফিরিয়ে আনা যায়নি । 

তবে দ্যা মোরেল নামক সাবমেরিনটি আলোর মুখ না দেখলেও ১৭৭৫ সালে আমেরিকা “”টার্টল “” নামে আরেকটি সাবমেরিন তৈরি করে । বলা হয়ে থাকে এই সাবমেরিনটি মিলিটারি সাবমেরিন হিসেবে প্রথম সফল ভাবে ব্যবহার হয়েছিল বৃটেনের সাথে আমেরিকার যুদ্ধে । এটা চালাতে প্রয়োজন হতো মাত্র একজন মানুষ । 

সাবমেরিনটি এমনভাবে ডিজাইন করা হয়েছিল যেন এটি বোমার ব্যাগ শত্রু জাহাজের হালে লাগিয়ে আসতে পারে । এটি নির্মাণ করেছিলেন ডেভিড বাশনেল নামে একজন ব্যাক্তি , যিনি একাধারে একজন শিক্ষক ,ডাক্তার এবং মিলিটারি ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন । 

তার এই সাবমেরিনটি দেখতে ছিল একটা গোল বাল্বের মতো । বাশনেলকে এই কাজে সাহায্য করেছিলেন আইজ্যাক ডোলিটল নামক একজন ঘড়ির মেকানিক ।

 বলাই বাহুল্য সাবমেরিনের মূল প্রপেলার তৈরি করেছিলেন এই মেকানিকই । সাবমেরিনের প্রোপেলার ছিল সামনের দিকে । প্রোপেলার চালানর জন্য ভেতর থেকে প্যাডেল করতে হতো ,অনেকটা সাইকেলের মতো । ভেতর  থেকে বাইরে দেখার জায়গা ছিল খুবই সীমিত । এছাড়া বাতাস চলাচলের জায়গাও পর্যাপ্ত ছিল না । 


১৭৭৬ সালে ৩ জন আমেরিকান সৈনিক এটি চালানোর জন্য প্রশিক্ষন দেয়া হয় । মাত্র দুই সপ্তাহ পরেই সাবমেরিনটিকে বৃটিশ যুদ্ধ জাহাজ এইচএমএস ঈগলকে ডুবিয়ে দেয়ার এসাইনমেন্ট দেয়া হয় । 

১৭৭৬ সালের সেপ্টেম্বরের ৬ তারিখ সকাল ১১ টায় সার্জেন্ট এজরা লী ,বৃটিশ জাহাজ উড়িয়ে দেয়ার জন্য সাবমেরিন নিয়ে সাগরে নামেন । যেহেতু প্যাডেল দিয়ে ড্রাইভ করতে হতো এবং ভেসেলটির ভেতরে মাত্র ২০ মিনিটের অক্সিজেন মজুত থাকতো ,তাই সার্জেন্ট এজরা লী পরে গেলেন দারুন ঝামেলায় । 

একই সাথে গন্তব্যে পৌঁছে দেখা গেলো বোমের যে ব্যাগটা সাবমেরিনের সাথে নিয়ে আসা হয়েছিল সেটি কোন ভাবেই বৃটিশ যুদ্ধ জাহাজের হালের সাথে লাগছে না । অগত্যা সার্জেন্ট এজরা লী ,ভেসেলটিকে সেই অবস্থায় ছেড়ে ফিরে এলেন নিজের জাহাজে । 

তার আশা ছিল ,বৃটিশরা হয়তো কৌতূহলী হয়ে জিনিসটা নাড়াচাড়া করবে এবং তখন মারাত্মক বিস্ফোরণ হয়ে জাহাজ ধ্বংস হবে । তবে সেরকম কিছু হয়েছিল বলে ইতিহাসে জানা যায় না । অথবা হলেও বৃটিশরা হয়তো তাদের লেখা ইতিহাসে সেটা এড়িয়ে গেছে । 

তবে ঘটনা যাই ঘটুক না কেন ,ইতিহাসের প্রথম সাবমেরিন অভিযান মানুষকে পরবর্তিকালে পানির নিচের যুদ্ধে আরো বেশি উৎসাহিত করেছিল , যার ফলে এসেছে নতুন নতুন সব টর্পেডো আর আধুনিক সমরাস্ত্র সজ্জিত উন্নত সব সাবমেরিন ।