"মেসি আমার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ!" — কিছুদিন আগে একটি ভিডিও বার্তায় এভাবেই নিজের অনুভূতি প্রকাশ করেছিলেন এলেক্সিস ম্যাক আলিস্টার। তাঁর এই বক্তব্য যে কেবল এক ব্যক্তির উপলব্ধি নয়, বরং একটি গোটা জাতির মনের ভাষা—সেটা প্রমাণিত হলো এস্তাদিও মনুমেন্তালে, লিওনেল মেসির বিদায়ী ম্যাচে। মাঠে নামা প্রতিটি আর্জেন্টাইন ফুটবলারের পারফরম্যান্সে ফুটে উঠেছিল একটাই বার্তা—আমরা খেলছি আমাদের অধিনায়কের জন্য।
এই দলের কোনো স্টার সিস্টেম নেই। নেই সিনিয়র-জুনিয়রের বিভাজন। এটা একটা পরিবার। যার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন লিওনেল মেসি—ক্যাপ্টেন হিসেবে নয়, বরং একজন আইডল, একজন দিকনির্দেশক এবং একজন মানুষ হিসেবে, যাকে ঘিরেই আবর্তিত হয় গোটা দল। যেখানে গোলের চেয়ে বড় হয়ে ওঠে ভালোবাসা
ম্যাচের ৩৬তম মিনিটে প্রথম গোলটি করেন মেসি, তবে বাস্তবতা হলো—এই গোলটি তিনি পেতেও পারতেন না, যদি হুলিয়ান আলভারেজ না থাকতেন সেই মুহূর্তে একজন নিঃস্বার্থ সতীর্থ হয়ে। মাঝমাঠ থেকে প্যারাদেসের লম্বা পাসে বল পেয়ে যান আলভারেজ। বক্সের মধ্যে ছিলেন একেবারে আদর্শ জায়গায়—নিজেই নিতে পারতেন শট। একজন স্ট্রাইকার হিসেবে সুযোগটি অগ্রাহ্য করার কোনো কারণ ছিল না। কিন্তু আলভারেজ দেখলেন তার হিরো মেসি পাশে ফাঁকা। এক মুহূর্তের দ্বিধা না করে পাস বাড়িয়ে দিলেন মেসির দিকে। মেসি শট নিলেন, আর বল জড়াল জালে।
সেই মুহূর্তে গোলে যতটা আনন্দ ছিল, তার চেয়েও বেশি ছিল এক গভীর শ্রদ্ধা আর ভালোবাসার প্রকাশ।
❤️ আবারও সেই নিঃস্বার্থতা, এবার আলমাদা
মেসির দ্বিতীয় গোলেও দৃশ্যপট প্রায় একই রকম। থিয়াগো আলমাদা যখন বল পেয়েছিলেন, তখন গোলপোস্টের সামনে শুধু প্রতিপক্ষের গোলরক্ষক। শট নিলেই হতে পারত গোল, নিজের জন্য, ক্যারিয়ারের জন্য, পরিসংখ্যানের খাতায় নাম লেখানোর জন্য। কিন্তু বয়স ২৪ হলেও আলমাদা বুঝে গিয়েছেন, সব গোল সমান নয়।
এই ম্যাচ, এই মুহূর্ত, এই স্টেডিয়াম—সবকিছু ছিল মেসির জন্য। তাই বল ঠেলে দেন অনেক পেছনে থাকা লিওনেল মেসির দিকে। মেসি চিপ করে বল পাঠান জালে। ৩-০ গোলের জয় নিশ্চিত হয়, আর সেই সঙ্গে হৃদয়ে গেঁথে যায় আরেকটি আবেগঘন অধ্যায়।
এই ভালোবাসা মুখে বলে বোঝানো যায় না
এই দুটি মুহূর্তই প্রমাণ করে দেয়, মেসি শুধু একজন ফুটবলার নন, তিনি সতীর্থদের কাছে এক ভালোবাসার নাম। যে ভালোবাসা কখনও গোলের সুযোগ ছাড়তে দ্বিধা করে না, যে ভালোবাসা দেশের মাটিতে শেষ ম্যাচটিকে করে তোলে কিংবদন্তির জন্য উৎসর্গ করা উৎসবে পরিণত।