একটা কথা প্রায়ই অকপটে বলে ফেলেন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো—“আমি আর মেসি এই স্টেজ ভাগাভাগি করেছি ১৫ বছর ধরে।” কিন্তু এ বক্তব্য আসলে বড় এক মিথ্যা। কারণ ফুটবলের ইতিহাসে তারা শুধু ১৫ বছর নয়, বরং পুরো ২০ বছর ধরে একই আলোয় আলোচিত। সময়ের পর সময় কেটে গেলেও থামার কোনো নামগন্ধ নেই এই দুই মহাতারকার। এখনও সবচেয়ে আলোকিত দুই নাম লিওনেল মেসি ও ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো, আর এই দ্বৈরথ চলবে অবসরের আগ পর্যন্তই।
গত শুক্রবার এস্তাদিও মনুমেন্তালে ছিল লিওনেল মেসির এক বিশেষ রাত। খেললেন তার শেষ বিশ্বকাপ বাছাইপর্ব ও ঘরের মাঠের ম্যাচ, প্রতিপক্ষ ভেনেজুয়েলা। প্রত্যাশিতভাবেই আর্জেন্টাইন ক্ষুদে জাদুকর ম্যাচটিকে করে নিলেন নিজের। আক্রমণভাগে দাপটের পাশাপাশি করলেন জোড়া গোল। নান্দনিক ফিনিশিং, খেলার নিয়ন্ত্রণ আর উপস্থিতির জাদুতে দর্শকরা দাঁড়িয়ে করতালি দিলেন বারবার। যেন বোঝাতে চাইলেন—মেসির আলো নিভে যায়নি, বরং এখনও আগের মতোই দীপ্ত।
মেসির ঝলমলে পারফরম্যান্সের দুদিন না যেতেই ইউরোপে শিরোনামে উঠে আসেন রোনালদো। সৌদি ক্লাব ফুটবলের পাশাপাশি জাতীয় দলেও তার প্রভাব অটুট। ম্যাচটিতে করলেন দুই গোল, যার একটি ছিল একেবারে অবিশ্বাস্য। শারীরিক সক্ষমতা, পজিশন সেন্স ও নিখুঁত ফিনিশিং—সব মিলিয়ে বোঝালেন, বয়স কেবল সংখ্যার খেলা।
বিশেষ করে যখন রোনালদোর বয়স প্রায় ৪০—তখনও এভাবে দৌড়ানো, ডিফেন্ডারদের ছিটকে দেওয়া আর গোলের পর গোল করা সত্যিই বিস্ময়কর।
রেকর্ড ভাঙা-গড়ার লড়াই
ভেনেজুয়েলার বিপক্ষে জোড়া গোল করে মেসি ছাড়িয়ে যান রোনালদোকে। এতদিন রোনালদোর বিশ্বকাপ বাছাইয়ের গোল ছিল ৩৬, আর মেসির গোল দাঁড়ায় ৩৭-এ। কিন্তু মাত্র একদিন পরই মাঠে নেমে রোনালদো ফিরিয়ে নেন রেকর্ড। আরও দুই গোল করে তার সংগ্রহ এখন ৩৮, আর মেসি নেমে গেছেন তার নিচে।
নস্টালজিয়ার ঝড়
একজনের বয়স ৩৮, অন্যজনের ৪০। এই বয়সে এসেও একে অপরকে ছাড়িয়ে যাওয়ার লড়াই হয়তো অনেকের মাঝেই নস্টালজিয়ার ঢেউ তুলছে। কারণ, রোনালদো যখন স্পেনে খেলতেন, তখন বারবার এমন দৃশ্য দেখা যেত—আজ মেসি এগিয়ে, কাল রোনালদো। ২০২৫ সালেও ছবিটা বদলায়নি।
কে সেরা—এই বিতর্কে চায়ের কাপে ঝড় উঠবেই। তবে একটা জায়গায় সবার ঐক্যমত থাকবে—মেসি-রোনালদোর মতো দ্বৈরথ ইতিহাস আর দেখেনি। ভাগ্যিস, ফুটবল ভক্তরা জন্মেছে এই যুগে, তাদের অসাধারণ প্রতিদ্বন্দ্বিতার সাক্ষী হতে পেরেছে।