এক সময় বাংলাদেশের পেসাররা শুধু বল হাতে নিজেদের প্রমাণ করার চেষ্টায় থাকতেন। কিন্তু সময় বদলেছে। এখনকার পেসাররা শুধু উইকেট শিকারেই সীমাবদ্ধ নন, ব্যাট হাতেও দারুণ অবদান রাখছেন। তেমনই একজন উদীয়মান তারকা তানজিম হাসান সাকিব। এক সময় যিনি ছিলেন শুধুই ‘পিওর বোলার’, এখন ধীরে ধীরে হয়ে উঠছেন এক সম্ভাবনাময় অলরাউন্ডার।
সাম্প্রতিক ওয়ানডে ম্যাচে ব্যাটিং গড় দাঁড়িয়েছে ২৪-এর ঘরে। পাকিস্তানের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টিতে ঝড়ো ফিফটি করে তাক লাগিয়ে দেন সবাইকে। আট-নয় নম্বরে ব্যাটিং করতে নামা সাকিব চার-ছক্কার ফুলঝুরি ছড়িয়ে নিয়মিত রান যোগ করছেন দলের স্কোরবোর্ডে। এই দৃশ্য অনেকের মনে করিয়ে দেয় মাশরাফি বিন মুর্তজার কথা—যিনি ছিলেন পেসার, কিন্তু ব্যাট হাতেও দলকে উদ্ধার করতেন বারবার।
তানজিমের ব্যাটিং দৃঢ়তা এখন চোখে পড়ার মতো। মাত্র একটি টেস্ট খেললেও সেখানে করেছেন ৪১ রান। ওয়ানডেতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে করেছিলেন ৩০-এর বেশি রান, সঙ্গে চারটি বাউন্ডারি। বল হাতে যেমন আগ্রাসী, ব্যাট হাতেও তার জবাব নেই।
তানজিমের ক্রিকেট যাত্রা শুরু হয় সহজ পথে নয়। বাবা-মা চেয়েছিলেন তিনি পড়াশোনায় মনোযোগী থাকুক, কিন্তু ক্রিকেটের প্রতি ভালোবাসাই জয়ী হয়। পাড়ার খেলা থেকে চট্টগ্রামের ক্যাম্প, সেখান থেকে বিকেএসপি—তানজিমের সংগ্রামী গল্প শুরু হয়েছিল ছোটবেলায়। তাকে অনুপ্রাণিত করেছিলেন তার আত্মীয় ও জাতীয় দলের ক্রিকেটার জাকির হাসান।
২০২০ সালের অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে বাংলাদেশের ঐতিহাসিক শিরোপা জয়ে বড় অবদান ছিল তানজিমের। এরপর ২০২২ বিপিএলে সিলেট স্ট্রাইকার্সের হয়ে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স করেন মাশরাফির অধীনে। ধীরে ধীরে জায়গা করে নেন জাতীয় দলের রাডারে। ২০২৩ সালে এশিয়া কাপে ভারতের বিপক্ষে অভিষেকে জয়—তানজিমের জন্য ছিল রূপকথার শুরু।
দুই বছর পার করে এখন জাতীয় দলে অন্যতম নির্ভরযোগ্য পেসার তিনি। রোহিত শর্মার মতো ব্যাটারকে আউট করে নিজের আগ্রাসী বোলিংয়ের জানান দিয়েছেন। এখন তার ব্যাটিং সামর্থ্যও দেশের ক্রিকেটে নতুন আশার আলো দেখাচ্ছে।