রাজনীতি

সরকার পতনের পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের হাত ছিল না— সিএনএন–নিউজ এইটিনকে শেখ হাসিনা

ডেস্ক রিপোর্ট

ডেস্ক রিপোর্ট

শনিবার, ১৫ নভেম্বর, ২০২৫
সরকার পতনের পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের হাত ছিল না— সিএনএন–নিউজ এইটিনকে শেখ হাসিনা
কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের প্রধান ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকার থেকে অপসারণের প্রায় ১৫ মাস পর ভিন্ন অবস্থান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, গত বছরের জুলাইয়ে সংঘটিত গণ–অভ্যুত্থান ও তাঁর সরকারের পতনের পেছনে যুক্তরাষ্ট্র বা কোনো পশ্চিমা শক্তির সরাসরি ভূমিকা ছিল বলে তিনি মনে করেন না।

শুক্রবার (১৪ নভেম্বর) সিএনএন–নিউজ এইটিনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে শেখ হাসিনা বলেন, দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের ‘ভালো ও স্থিতিশীল সম্পর্ক’ রয়েছে। তাই ওয়াশিংটন বা অন্য কোনো বিদেশি শক্তি বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় সরাসরি হস্তক্ষেপ করেছে—এমন ধারণা বিশ্বাসযোগ্য নয়।

তবে তিনি মন্তব্য করেন, সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ও বর্তমান প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস পশ্চিমা বিশ্বের প্রভাবশালী মহলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি করেছেন, যা অনেকেই ভুলভাবে গণতান্ত্রিক যোগ্যতার প্রতিফলন হিসেবে দেখেছেন।

 শেখ হাসিনা জানান, যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গেও তাঁর সম্পর্ক ‘ভালো’ ছিল।

গত বছরের জুলাইয়ে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন শুরু করলেও পরবর্তীতে সহিংসতা বিস্তৃত হয়। আন্দোলনকারীরা অভিযোগ করেন, আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন ও সশস্ত্র ক্যাডারদের হামলার পর পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। রাস্তায় রক্তপাত ছড়িয়ে পড়লে গণ–অভ্যুত্থানের দাবিতে জনরোষ বাড়তে থাকে।
 এ পরিস্থিতিতে চাপের মুখে শেখ হাসিনা দেশত্যাগ করতে বাধ্য হন।

জাতিসংঘের মানবাধিকার হাইকমিশনারের (ওএইচসিএইচআর) প্রতিবেদন উদ্ধৃত করে বিভিন্ন গণমাধ্যম জানায়, জুলাই–আগস্টে সংঘটিত সহিংসতায় এক হাজারের বেশি মানুষ নিহত হন এবং অধিকাংশই নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে মারা যান।

 ঘটনাগুলো নিয়ে দেশ–বিদেশে একাধিক তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। বিবিসির অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে ফাঁস হওয়া একটি অডিওর বরাত দিয়ে বলা হয়, বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে প্রাণঘাতী শক্তি ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছিলেন শেখ হাসিনা—যদিও তিনি এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

জুলাই–আগস্টের ঘটনার প্রেক্ষিতে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মামলা চলছে। একই মামলায় তাঁর সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালসহ আরও তিনজনের বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডের আবেদন করা হয়েছে। রায় ঘোষণার তারিখ নির্ধারিত হয়েছে আগামী ১৭ নভেম্বর।

অন্যদিকে বিবিসিকে দেওয়া আলাদা এক সাক্ষাৎকারে শেখ হাসিনা এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, মামলা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং এটি ‘ক্যাঙ্গারু কোর্টের সাজানো প্রহসন’।

তিনি দাবি করেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলেও তিনি কখনোই নিরাপত্তা বাহিনীকে নিরস্ত্র বেসামরিক নাগরিকের ওপর গুলি চালাতে নির্দেশ দেননি। তাঁর বক্তব্য, অভিযোগ প্রমাণ করতে হলে তা রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত ও সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে করতে হবে।

সূত্র: সিএনএন–নিউজ এইটিন, বিবিসি