বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ সম্প্রতি এক ফেসবুক পোস্টে দাবি করেছেন যে, বিডিআর হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের ফ্যাসিবাদী আচরণের যাত্রা শুরু হয়। রোববার নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে দেওয়া পোস্টে তিনি এ মন্তব্য করেন।
হাসনাত লেখেন, “বিডিআর হত্যাকাণ্ডের বিচারের ক্ষেত্রে যে গড়িমসি ও অস্পষ্টতা লক্ষ্য করা গেছে, তা আমি গভীর সন্দেহের চোখে দেখি। এমনকি এই হত্যাকাণ্ডের পরে যে পরিবর্তনগুলো ঘটেছে, তা নিয়েও প্রশ্ন তোলা উচিত।”
২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকার পিলখানায় অবস্থিত বিডিআর সদর দফতরে ঘটে যাওয়া বিদ্রোহে ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তাসহ মোট ৭৪ জন নির্মমভাবে নিহত হন। নিহতদের মধ্যে ছিলেন তৎকালীন বিডিআর প্রধান মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদ।
বিদ্রোহের ঘটনাটি দেশের ইতিহাসে এক গভীর শোকাবহ অধ্যায় হিসেবে চিহ্নিত। ঘটনার পর থেকেই এটি ঘিরে রয়েছে নানা বিতর্ক। বিদ্রোহের পেছনের কারণ, পরিকল্পনা এবং এর সমাধানে নেওয়া উদ্যোগ নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠে আসছে প্রায় দেড় দশক ধরে।
পিলখানা হত্যাকাণ্ডের পর সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিডিআরের নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। শুধু নাম নয়, তাদের পোশাকেও আনা হয় পরিবর্তন। সরকারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, এই পরিবর্তন বাহিনীর মনোবল পুনরুদ্ধার এবং আভ্যন্তরীণ সংস্কারের জন্য। তবে এই পরিবর্তন নিয়েও রয়েছে ভিন্নমত।
ফেসবুক পোস্টে হাসনাত বলেন, “বিডিআর হত্যাকাণ্ডের বিচার ও এর পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহে আওয়ামী লীগ সরকার যে ভূমিকা পালন করেছে, তা কোনোভাবেই দায়মুক্তি পেতে পারে না। বরং এটি তাদের ফ্যাসিস্ট মানসিকতার প্রকাশ ঘটিয়েছে।”
তিনি আরও উল্লেখ করেন যে, বিদ্রোহের বিচার প্রক্রিয়ায় দীর্ঘসূত্রিতা এবং স্বচ্ছতার অভাব একটি বড় প্রশ্নচিহ্ন রেখে দিয়েছে। তার মতে, এই ঘটনাই প্রমাণ করে, সরকার তখন নিজেদের ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করার পথে হাঁটছিল।
বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় দেশের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় বিচারিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। বিদ্রোহের অভিযোগে হাজারের বেশি ব্যক্তিকে দোষী সাব্যস্ত করা হয় এবং অনেকে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত হন। তবে বিচার প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন মানবাধিকার সংস্থাগুলোসহ বিভিন্ন মহল।
অনেকেই মনে করেন, বিদ্রোহের প্রকৃত কারণ ও পেছনের কুশীলবদের চিহ্নিত করা হয়নি। মানবাধিকার সংগঠনগুলো এ ঘটনায় গণবিচার এবং স্বচ্ছতার অভাব নিয়ে বারবার উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
পিলখানা হত্যাকাণ্ড শুধু একটি বিদ্রোহের ঘটনা ছিল না; এটি সেনাবাহিনী এবং সরকারের মধ্যে সম্পর্কেও এক প্রভাব ফেলেছিল। সীমান্তরক্ষী বাহিনীর ভেতর আস্থা এবং মনোবলের সংকট দেখা দেয়। একইসঙ্গে রাজনীতিক মহলে এটিকে ক্ষমতার পুনর্বিন্যাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হিসেবে দেখা হয়।