মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প কর্তৃক রাশিয়া থেকে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল ক্রয়ের প্রেক্ষিতে ভারতের বিরুদ্ধে আরোপিত দণ্ডমূলক শুল্কসিদ্ধান্তকেও গুরুত্ব না দিয়ে, রাশিয়ার সঙ্গে কৌশলগত সহযোগিতার বন্ধনে আরও দৃঢ় হল ভারত। এই প্রেক্ষাপটে ওয়াশিংটনের কূটনৈতিক চাপ বা আর্থিক বিধিনিষেধকে তোয়াক্কা না করে দিল্লি স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিল—রাষ্ট্রীয় স্বার্থ যেখানে অগ্রাধিকার, সেখানে বাইরের হুমকি গুরুত্বহীন।
ভারতীয় পণ্যের উপর আমেরিকা সাম্প্রতিক সময়ে আমদানি শুল্ক ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়িয়েছে। একে কেন্দ্র করে ভারত কঠোর ভাষায় প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলে, এই ধরনের পদক্ষেপ একতরফা, বৈষম্যমূলক ও অগ্রহণযোগ্য। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে উল্লেখ করে—এই সিদ্ধান্ত আন্তর্জাতিক বাণিজ্যনীতির পরিপন্থী এবং তা ভারতের সার্বভৌম সিদ্ধান্ত গ্রহণে হস্তক্ষেপস্বরূপ।
এই উত্তপ্ত কূটনৈতিক পরিবেশে ৬ আগস্ট অনুষ্ঠিত ভারত-রাশিয়া আধুনিকীকরণ ও শিল্প সহযোগিতা সংক্রান্ত যৌথ কর্মপর্ষদের ১১তম অধিবেশনে, দুই দেশের মধ্যে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ খাতে সহযোগিতার লক্ষ্যে সমঝোতা স্মারক (MoU) স্বাক্ষরিত হয়। এই সমঝোতায় অ্যালুমিনিয়াম, সার, রেলপথ, খনিশিল্প এবং রেয়ার আর্থ উপাদানের মতো অত্যাবশ্যক খাতে যৌথ অগ্রগতির প্রত্যাশা প্রতিফলিত হয়েছে।
এদিকে, ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ স্পষ্ট ভাষায় জানিয়েছেন—রাশিয়া, ভারতের প্রতি ট্রাম্প প্রশাসনের চাপ প্রয়োগের কৌশলকে অবৈধ এবং অনৈতিক মনে করে। তিনি বলেন, “বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মঞ্চে আমরা যেসব হুমকিসদৃশ বার্তা শুনি, তা মূলত স্বাধীন রাষ্ট্রগুলিকে রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক ছিন্ন করতে বাধ্য করার অপচেষ্টা। আমরা এসবকে ঘোরতর প্রত্যাখ্যান করি।”
ভারতের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতেও এই প্রসঙ্গে সমালোচনার ঝড় ওঠে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ট্রাম্পের 'দ্বৈত মানদণ্ড' নীতিকে তুলোধুনো করে। চীন যে পরিমাণে রাশিয়া থেকে জ্বালানি আমদানি করে, তা ভারতের তুলনায় বহুগুণ বেশি হওয়া সত্ত্বেও, মার্কিন প্রশাসনের তা নিয়ে নীরবতা এবং ইউরোপীয় দেশগুলোর নিজেদের রাশিয়ার সঙ্গে বানিজ্য বজায় রাখা—এই সমস্ত কিছুই ভারতবিরোধী পক্ষপাতমূলক আচরণের ইঙ্গিত বহন করে।
দিল্লির পক্ষ থেকে পুনর্ব্যক্ত করা হয়েছে—জাতীয় স্বার্থ ও সার্বভৌমতা রক্ষার্থে ভারত প্রয়োজনে যেকোনো কঠোর অবস্থান গ্রহণে দ্বিধা করবে না। আন্তর্জাতিক চাপের কাছে মাথানত করার কোনও প্রশ্নই ওঠে না।