রাজনীতি

কাদের ‘ক্ষমতালোভী’ বললেন সমন্বয়ক আব্দুল কাদের?

উপ-সম্পাদক

উপ-সম্পাদক

শনিবার, ১৬ নভেম্বর, ২০২৪
কাদের ‘ক্ষমতালোভী’ বললেন সমন্বয়ক আব্দুল কাদের?
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আব্দুল কাদের ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাসের মাধ্যমে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে ক্ষমতার লোভ এবং এর ক্ষতিকর প্রভাব নিয়ে কঠোর সমালোচনা করেছেন। তার মতে, ক্ষমতার লোভ মানুষের হিতাহিত জ্ঞানশূন্য করে তোলে এবং এটি দল, মত ও আদর্শকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।
কাদের লিখেছেন, বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে অনেকেই নিজেদের মধ্যপন্থী বা মর্ডারেট হিসেবে পরিচিত করতে ব্যস্ত। কেউ আবার সরাসরি ফ্যাসিস্টদের সমালোচনা করতেও নারাজ। তার মতে, এই অবস্থার মধ্যেই চলছে একধরনের প্রতিযোগিতা—কে কার চেয়ে বেশি সুশীল হতে পারে। তিনি স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন, “কথা ছিল, এতো এতো রক্ত আর জীবনের পরে খুনিদের জন্য কোনো মায়াকান্না করা যাবে না, সুশীলতা দেখানো যাবে না। দলের চেয়ে রাষ্ট্রের স্বার্থ মূখ্য হবে। কিন্তু ক্ষমতার লোভ সবকিছু তছনছ করে দিচ্ছে।”
আব্দুল কাদের তার পোস্টে সাম্প্রতিককালে শীর্ষস্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের কিছু বিতর্কিত বক্তব্যের প্রতি ইঙ্গিত করেছেন। গত বুধবার লন্ডনে ব্রিটিশ বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (বিবিসিসিআই) নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান তার বক্তব্যে বলেন, “আমরা ইউনাইটেড বাংলাদেশ গড়তে চাই। আমি বারবার ফ্যাসিজম বা ফ্যাসিস্ট বলা পছন্দ করি না। কারণ এরাও তো আমাদের পরিবারের সদস্য, রাজনৈতিক পরিবারের সদস্য। আমি কোনো মৌলবাদী মুসলমান নই, আর মৌলবাদ খারাপ কিছু নয়।”
এই বক্তব্য রাজনৈতিক মহলে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। ডা. শফিকুর রহমানের বক্তব্য থেকে জামায়াতের ভাবমূর্তি পুনর্গঠনের চেষ্টা স্পষ্ট হলেও সমালোচকেরা এটিকে রাজনৈতিক ফায়দা তোলার কৌশল বলে অভিহিত করেছেন।
অন্যদিকে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী সম্প্রতি এক বক্তব্যে বলেন, বঙ্গভবন থেকে শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি নামানো উচিত হয়নি। তবে এই মন্তব্যের জন্য তিনি পরে দুঃখপ্রকাশ করেছেন। তার বক্তব্যও ক্ষমতার রাজনীতির প্রেক্ষাপটে নতুন করে আলোচনা জন্ম দিয়েছে।
আব্দুল কাদের তার স্ট্যাটাসে উল্লেখ করেছেন, অনেকেই রাজনৈতিক আদর্শের চেয়ে ক্ষমতার দিকে বেশি মনোযোগী হয়ে পড়েছেন। এমনকি যারা নিজেদের গণতন্ত্রপন্থী বা মানবাধিকারের দাবিদার বলে দাবি করেন, তারাও ফ্যাসিস্টদের প্রতি সহানুভূতি দেখাতে শুরু করেছেন। তিনি আরও লিখেছেন, “ফ্যাসিবাদের পিতার ছবি সরানো নিয়ে মায়াকান্না জুড়ে দেওয়া হচ্ছে। অথচ এর কোনো যৌক্তিকতা নেই। যারা রাষ্ট্রের স্বার্থকে দলের স্বার্থের নিচে নামিয়ে ফেলছে, তারা আসলে ক্ষমতার লোভে অন্ধ হয়ে পড়েছে।”
কাদেরের এই বক্তব্য বর্তমান রাজনৈতিক অঙ্গনে একটি বৃহত্তর চিত্র তুলে ধরে। ক্ষমতার রাজনীতি এখন দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সহযোগিতা বা ঐক্যের চেয়ে বিভেদ সৃষ্টি করছে। ক্ষমতার এই প্রতিযোগিতা শুধু রাজনৈতিক দলগুলোর আদর্শিক বিভক্তিকেই বাড়িয়ে তুলছে না, বরং এর ফলে সাধারণ মানুষের আস্থাও ক্রমশ কমছে।
আব্দুল কাদের সতর্ক করেছেন যে, যদি রাজনৈতিক নেতারা নিজেদের ক্ষমতার লোভ সংবরণ না করেন, তবে এটি শুধু রাজনীতিকেই নয়, পুরো দেশের ভবিষ্যতকেও অন্ধকারে ঠেলে দেবে। তিনি ক্ষমতার লোভকে একটি মারাত্মক ব্যাধি হিসেবে উল্লেখ করেছেন যা আদর্শ, নীতি এবং মূল্যবোধকে ধ্বংস করে দিতে সক্ষম।
তার এই স্ট্যাটাস সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা ও বিতর্ক সৃষ্টি করেছে। অনেকে তার বক্তব্যের সঙ্গে একমত পোষণ করেছেন, আবার কেউ কেউ এটিকে একপেশে দৃষ্টিভঙ্গি হিসেবে অভিহিত করেছেন। তবে তার সমালোচনার লক্ষ্য যেই হোক, এটি স্পষ্ট যে কাদের তার স্ট্যাটাসের মাধ্যমে ক্ষমতার রাজনীতির গভীর সংকট এবং এর নেতিবাচক প্রভাবকে সামনে নিয়ে এসেছেন।