২০১৮ সালের ২৩ জানুয়ারী আদালত পাড়া থেকে তৈমূরকে গ্রেপ্তার করা হয়।
২০১৮ সালে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টার পদে ছিলেন তৈমূর আলম খন্দকার। আগের বছর ২০১৭ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত ছিলেন নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি। পরবর্তীতে ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারীতে গঠিত কমিটিতে ফের সভাপতি হন তৈমূর। মাঝের সময়ে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টার পদে থেকে ছিলেন সরব। খালেদা জিয়ার মামলার শুনানীতেও নিয়মিত যেতেন বকশিবাজারের বিশেষ আদালতে। কিন্তু তখনকার একটি মামলায় তাকে আসামী করা নিয়ে দেখা দিয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। অথচ যে তারিখে মামলার অভিযোগ তার এক মাস আগেই নারায়ণগঞ্জ থেকে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন তৈমূর।
ওয়ান এলেভেনের পর তারেক রহমানকে গ্রেপ্তারের পর প্রথম আদালতে ছুটে যান তৈমূর। তখন তাকে হুমকি দেওয়া হলেও তিনি নড়েনি। বরং সবকিছুকে উপেক্ষা করে তারেক রহমানের পক্ষে লড়েন।
গত ৯ নভেম্বর রাজধানীর হাতিরঝিল থানায় মামলাটি এজাহার হিসেবে রেকর্ড করা হয়। একই মামলার আসামী হলেন নারায়ণগঞ্জের তিন রাজনীতিবিদ। তাঁরা হলেন সাবেক বিএনপি নেতা তৈমূর আলম খন্দকার, নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সাবেক এমপি সেলিম ওসমান ও লিয়াকত হোসেন খোকা। মামলার বাদী বাংলাদেশ পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান মো. বাবুল সরদার চাখারী।
বাবুল সরদার চাখারী মামলার আরজিতে বলেন, ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি সকালে খালেদা জিয়া পুরান ঢাকার বকশীবাজারে অবস্থিত আদালতে যাওয়ার উদ্দেশ্যে গুলশানের বাসা থেকে রওনা দেন। এ সময় তিনিও ওই গাড়িবহরের সঙ্গে ছিলেন। গাড়িবহরটি মগবাজারে পৌঁছালে জি এম কাদেরসহ অন্য আসামিদের হুকুমে হামলা হয়। বহরের গাড়ি ভাঙচুর করা হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে ২০১৮ সালের ২১ জানুয়ারী নারায়ণগঞ্জ আদালতপাড়া থেকে গ্রেপ্তার হন তৈমূর। ৩০ জানুয়ারী ছিল আইনজীবী সমিতির নির্বাচন। তখন তিনি আদালতপাড়ায় এসে আইনজীবী সমিতিতে বিএনপি পন্থী প্যানেল জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য পরিষদের জন্য ভোট চাইতে আসেন। ঠাৎ বিপুল সংখ্যক পুলিশ দুদিকে থেকে দৌড়াদৌড়ি। বাঁশি ফুঁকে এক আতংকের পরিস্থিতি সৃষ্টি করে পিছন দিক থেকে ভোট প্রার্থনাকারী মধ্যমনি অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকারকে জাপটে ধরে পুলিশ। সিনিয়র এ আইনজীবীরাও তখন বুঝতে পারেনি কী ঘটছে। সবার ধারণা ছিল হয়তো দাগী কোন আসামী পালিয়ে যাচ্ছে তাকে ধরতে পুলিশের এ মহড়া। কিন্তু তৎক্ষণাত পুলিশ ধরলো তৈমূরকে। কোন ধরনের কথা ছাড়াই টেনে হিচড়ে তৈমূরকে ধরেন পুলিশের সদস্যরা। আর ফতুল্লার ওসি কামালউদ্দিন তো রীতিমত তৈমূরের গলা চেপে ধরলেন। তৈমূরের অবস্থা বেগতিক দেখে আইনজীবীরাও তৈমূরকে ছেড়ে দেন। এর আগে আইনজীবীরাও প্রাণান্তর চেষ্টা করেন তৈমূরকে বাঁচাতে কিন্তু অস্ত্রের সামনে কুলিয়ে উঠতে না পারলেও পুলিশের লাঠি আর বন্দুকের আঘাতে রক্তাক্ত হয়েছেন কয়েকজন আইনজীবী।’
তৈমুর আলম খন্দকার নারায়ণগঞ্জের তুখোড় রাজনীতিবিদ নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সভাপতি, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক, আহবায়ক ও সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। একসময় ছিলেন বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা। বিএনপির বিভিন্ন গুরুত্বপ‚র্ণ পদে থাকা অবস্থায় ধরাকে সরা জ্ঞান করতেন তিনি। কিন্তু দলের বিরুদ্ধে গিয়ে ২০২২ সালের ১৬ জানুয়ারি নাসিক নির্বাচনে মেয়র পদে অংশ নেওয়ায় তাকে উপদেষ্টা পদ থেকে প্রত্যাহার করা হয়। সেই সঙ্গে নির্বাচনের দুই দিন পর অর্থাৎ ১৮ জানুয়ারি বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবীর রিজভী স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে তাকে বিএনপি থেকে বহিষ্কার করা হয়। তা সত্ত্বেও বিএনপি রাজনীতি করে আসেন তিনি। তখন বিএনপির বিভিন্ন কর্মস‚চি ঘিরে তার শহরের মাসদাইর এলাকাস্থ ‘মজলুম নিবাসে’ বাড়িতে বিএনপির নেতাকর্মীদের নিয়মিত আনাগোনা ছিল। কিন্তু দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন সামনে আসতেই আওয়ামী লীগে যোগদান না করলেও কিংস পার্টি খ্যাত তৃণম‚ল বিএনপিতে যোগদান করেন তিনি। হয়ে যান তৃণম‚ল বিএনপির মহাসচিব। যা নিয়ে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েন তিনি। তবে সমালোচনা উপেক্ষা করেই সংসদ নির্বাচনে রূপগঞ্জ আসনে তৃণমূল বিএনপি থেকে নির্বাচনে অংশ নেন তিনি। লড়েন আওয়ামী লীগের প্রার্থী গোলাম দস্তগীর গাজীর সঙ্গে। সেখানে তার জামানত বাজেয়াপ্তের পাশাপাশি ভোট পান মাত্র ৩ হাজার। যা নিয়ে হাস্যরসে মেতে উঠেছেন বিএনপি ও আওয়ামী লীগের নেতারা।