বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু গত তিন মাসে দেশের মানুষের প্রত্যাশা পূরণ হয়নি বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি জানান, শেখ হাসিনা ও তার মন্ত্রিসভা ৫ আগস্ট দেশ ছাড়ার পর ড. মুহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বে একটি উপদেষ্টা পরিষদ গঠিত হয়, যা ৮ আগস্ট কার্যক্রম শুরু করে। তবে, তিন মাস অতিক্রম করলেও মানুষের অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি, যা মানুষ আশা করেছিল। দুদু বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে গড়ে ওঠা দ্রব্যমূল্যের সিন্ডিকেট ভাঙার প্রত্যাশা ছিল; কিন্তু দ্রব্যমূল্যের পরিস্থিতি এখনো সহনীয় পর্যায়ে আসেনি।
শুক্রবার সন্ধ্যায় চুয়াডাঙ্গায় নিজ বাসভবনে সংবাদকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এসব মন্তব্য করেন। দুদু বলেন, দেশের মানুষ তাদের ভোটাধিকার পুনরুদ্ধারের আশায় ছিল এবং নিজেদের পছন্দের প্রার্থীকে নির্বাচিত করার সুযোগ চেয়েছিল। কিন্তু এ পর্যন্ত সুষ্ঠু নির্বাচনের কোনো সুনির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণা করা হয়নি। তিনি জানান, নির্বাচনের জন্য একটি উপযুক্ত পরিবেশ তৈরির পাশাপাশি নির্ধারিত তারিখ ঘোষণা করা হলে জনগণ আরও উৎফুল্ল হবে। এখন পর্যন্ত সরকারের পক্ষ থেকে নির্বাচন নিয়ে উদ্যোগী হওয়ার ইঙ্গিত দেওয়া হলেও তা জনগণের আশা পূরণে যথেষ্ট নয় বলে মনে করেন তিনি।
এবি পার্টির চট্টগ্রামের এক নেতার ‘নির্বাচনী সংস্কার’ প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে দুদু বলেন, বিএনপির নির্বাচনী প্রস্তুতির অভাব নেই, কারণ তারা গত ১৬ থেকে ১৮ বছর ধরেই প্রস্তুতি নিচ্ছে। তিনি দাবি করেন, বিএনপি দেশের যেকোনো সিটে একাধিক প্রার্থী দিতে সক্ষম এবং নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত। বিএনপি দেশের সর্বত্র নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত থাকায় খুব অল্প সময়ের নোটিশেও তারা প্রার্থী দিতে পারবে।
আগামী নির্বাচনে চুয়াডাঙ্গা-১ আসনে প্রার্থী হিসেবে অংশগ্রহণ করবেন কি না, এ প্রশ্নের উত্তরে দুদু বলেন, তিনি চুয়াডাঙ্গার মানুষ এবং এখানে একাধিকবার সংসদ সদস্য ছিলেন। বিএনপির প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ আসনে তিনি একমাত্র জীবিত সাবেক সংসদ সদস্য। তবে জাতীয় ভিত্তিক নেতা হিসেবে তার অবস্থান সারাদেশে ছড়িয়ে রয়েছে। তিনি দীর্ঘ সময় কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সভাপতি, কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক ও আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি এ অঞ্চলের জনগণের সঙ্গে সবসময় যুক্ত থেকেছেন এবং ভবিষ্যতেও থাকবেন বলে জানান।
দলীয় সিদ্ধান্তের ওপর আস্থা রেখে তিনি বলেন, বিএনপি যেকোনো সময় আন্দোলন, সংস্কার ও নির্বাচনের প্রস্তুতি নেয়ার জন্য তার ওপর যে সিদ্ধান্ত নেয়, সেটি তিনি মেনে নেন। চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুর-কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহসহ এ অঞ্চল বিএনপির শক্ত ঘাঁটি উল্লেখ করে তিনি বলেন, জনগণ স্বাধীনভাবে ভোট দিতে পারলে বিএনপি জয়ী হবে।
দুদু আরও বলেন, আগামীতে যদি সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় এবং মানুষ নির্দ্বিধায় ভোট দিতে পারে, তবে চুয়াডাঙ্গা-১ আসনে বিএনপির বিজয় নিশ্চিত হবে। আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনকাল নিয়ে কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, মানুষ যে সামাজিক এবং অর্থনৈতিক নিরাপত্তা আশা করেছিল, তা পূরণ হয়নি। মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণের জন্য অবাধ নির্বাচন, সুষ্ঠু বিচারব্যবস্থা এবং সুষ্ঠু প্রশাসন প্রয়োজন, যেটি বিএনপি সরকারে থাকাকালে প্রণয়ন করতে চায়।