জাতীয় পার্টির (জাপা) কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনার নিন্দা জানিয়েছে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ)। শনিবার জাসদের দপ্তর সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। এই বিবৃতিতে জাসদ এ ধরনের আক্রমণকে রাজনৈতিক সহাবস্থানের জন্য হুমকি ও দেশের আইনশৃঙ্খলার প্রতি চ্যালেঞ্জ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। জাসদের মতে, রাজনৈতিক দলের কার্যালয়ে এই ধরণের হামলা-ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ কেবলমাত্র রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে দমনের অপচেষ্টা নয়; বরং তা দেশের গণতান্ত্রিক পরিবেশ ও ভবিষ্যৎ নির্বাচনী ব্যবস্থার ওপর সরাসরি আঘাত।
বিবৃতিতে বলা হয়, এই ঘটনা দেশের আইন এবং সংবিধানের পরিপন্থী। শুধু রাজনৈতিক দলের কার্যালয়ই নয়, যে কোনো স্থাপনায় হামলা-ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা সুস্পষ্ট ফৌজদারি অপরাধ। তারা মনে করে, নির্বাচনের আগমুহূর্তে প্রকাশ্যে এ ধরনের সহিংস আক্রমণ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রশাসনিক দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতার প্রতিফলন এবং গণতান্ত্রিক পরিবেশকে অস্থিতিশীল করার গভীর ষড়যন্ত্র। জাসদ বিশেষভাবে উল্লেখ করে যে, এই হামলা নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের মধ্য দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনী পরিবেশ তৈরির প্রচেষ্টাকে ব্যাহত করছে।
জাসদের মতে, এই ধরনের ঘটনা রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ভয় দেখিয়ে কোণঠাসা করার কৌশলের অংশ। তারা এই আক্রমণকে বিরাজনীতিকরণের ষড়যন্ত্র হিসেবে উল্লেখ করে বলেছে, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ভ্রাতৃত্বপূর্ণ সম্পর্ক নষ্ট করার মাধ্যমে দেশকে আরও বিভক্ত ও অস্থিতিশীল করার চেষ্টা চালানো হচ্ছে। জাসদ মনে করে, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ভিন্নমত থাকা স্বাভাবিক; তবে সেই মতবিরোধ কখনোই সহিংসতার মাধ্যমে প্রকাশ করা উচিত নয়।
এ ঘটনায় জাসদ আরও মন্তব্য করে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নাকের ডগায় জাতীয় পার্টির কার্যালয়ে এই ধরনের হামলার ঘটনার মাধ্যমে প্রমাণিত হচ্ছে যে, দেশের রাজনৈতিক দলগুলোকে নিরাপত্তা দিতে সরকার ব্যর্থ হচ্ছে। এই হামলা শুধু জাতীয় পার্টির ওপর নয়, বরং সকল রাজনৈতিক শক্তির ওপর আঘাত হিসেবে দেখা হচ্ছে, যা সামগ্রিকভাবে গণতান্ত্রিক পরিবেশের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। জাসদ দাবি জানায়, হামলার ঘটনায় যারা জড়িত তাদের দ্রুত চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে হবে এবং এ ধরনের সহিংসতার পুনরাবৃত্তি রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
জাসদের বিবৃতিতে আরও বলা হয়, রাজনৈতিক শক্তিকে দমিয়ে রাখার মাধ্যমে বিরাজনীতিকরণের এই গভীর ষড়যন্ত্রের পেছনে কারা আছে তা খুঁজে বের করতে হবে। দলটির মতে, দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনের দায়িত্ব হলো এ ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড বন্ধ করা এবং রাজনৈতিক দলগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। জাসদ উল্লেখ করে, রাজনৈতিক দলের কার্যালয়ে হামলার ঘটনা নির্বাচনী প্রস্তুতি গ্রহণ ও নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে সুষ্ঠু শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টার প্রতি হুমকি।
বিবৃতিতে, জাসদ দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সকল দলকে সংযমী আচরণের আহ্বান জানিয়েছে। দলটি আরও বলেছে, দেশের জনগণ শান্তিপূর্ণ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা দেখতে চায়। এ ধরনের হামলা সেই প্রত্যাশার পরিপন্থী এবং দেশের গণতান্ত্রিক ভবিষ্যতের জন্য ক্ষতিকর।
এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানিয়ে জাসদ দেশের সব রাজনৈতিক দলকে আহ্বান জানিয়েছে, তারা যেন এ ধরনের সহিংসতা থেকে নিজেদের বিরত রাখে এবং গণতন্ত্রের স্বার্থে রাজনৈতিক সহাবস্থানের পথ বজায় রাখে।