রাজনীতি

বিএনপি ছাড়া সব দলই নতুন নির্বাচন পদ্ধতির পক্ষে!

উপ-সম্পাদক

উপ-সম্পাদক

রবিবার, ২০ অক্টোবর, ২০২৪
বিএনপি ছাড়া সব দলই নতুন নির্বাচন পদ্ধতির পক্ষে!
নির্বাচন ব্যবস্থার সংস্কার নিয়ে সাম্প্রতিক আলোচনায় বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন প্রস্তাব উঠে এসেছে, যার মধ্যে সংখ্যানুপাতিক নির্বাচনী পদ্ধতি একটি বিশেষ জায়গা দখল করেছে। এই পদ্ধতি দলীয় প্রতীকের ওপর ভিত্তি করে পরিচালিত হয়, এবং আসন ভাগ হয় দলগুলোর প্রাপ্ত ভোটের হারের ওপর। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই পদ্ধতিতে গণতন্ত্র সংহত হবে এবং সব দলের সমান সুযোগ থাকবে। তবে, বিএনপি ছাড়া প্রায় সব রাজনৈতিক দল এই নতুন পদ্ধতির পক্ষে মত দিয়েছে।
গত ১২ অক্টোবর এক ভার্চ্যুয়াল আলোচনায় রাষ্ট্র সংস্কার ও সংবিধান সংশোধনীর অংশ হিসেবে সংখ্যানুপাতিক নির্বাচনের প্রস্তাব উঠেছে। সেমিনারে বিএনপি, সিপিবি, জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় পার্টি, এবি পার্টি, গণসংহতি আন্দোলন ও গণ অধিকার পরিষদের প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন। এখানে জামায়াতে ইসলামী আনুপাতিক নির্বাচন ব্যবস্থার পক্ষে মত দিলেও বিএনপি এর পরিবর্তে দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদের প্রস্তাব দিয়েছে।
জামায়াতে ইসলামীর প্রচার সম্পাদক মতিউর রহমান আকন্দের মতে, আনুপাতিক নির্বাচন পদ্ধতি জনগণের প্রকৃত মতামতের প্রতিফলন ঘটাবে, যা প্রচলিত পদ্ধতিতে সম্ভব হয় না। তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, বর্তমান পদ্ধতিতে কোনো দল ১২ শতাংশ ভোট পেলেও সংসদে তাদের কোনো প্রতিনিধি না থাকার সম্ভাবনা থাকে। অপরদিকে, ৩০ শতাংশ ভোট পাওয়া দল সরকার গঠন করতে পারে, যা গণতন্ত্রের জন্য ক্ষতিকর। আনুপাতিক পদ্ধতি চালু হলে সবার প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত হবে এবং ক্ষমতার ভারসাম্য রক্ষা হবে।
জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, প্রচলিত নির্বাচনী পদ্ধতিতে বেশিরভাগ ভোটার উপেক্ষিত হন। তিনি তার নিজ নির্বাচনী এলাকার একটি উদাহরণ টেনে বলেন, যেখানে তিনি এবং আরেক প্রার্থী প্রায় সমান ভোট পেয়েছিলেন, কিন্তু বিএনপির প্রার্থী সামান্য বেশি ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। এটি দেখায়, কীভাবে প্রচলিত পদ্ধতিতে অধিকাংশ মানুষের মতামত অবহেলিত হয়। তার মতে, আনুপাতিক নির্বাচন পদ্ধতি চালু হলে এই ধরনের বৈষম্য দূর হবে এবং নির্বাচন প্রক্রিয়া আরও সুষ্ঠু হবে।
অন্যদিকে, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ড. আসাদুজ্জামান রিপন এই পদ্ধতির বিরোধিতা করেন। তার মতে, ভোটাররা প্রার্থী দেখতে চায়, দল বা প্রতীক নয়। আনুপাতিক পদ্ধতিতে ভোটাররা তাদের পছন্দের প্রার্থী বাছাইয়ের সুযোগ হারাবে। তিনি আরো মনে করেন, এই পদ্ধতিতে দলগুলো মনোনয়ন বাণিজ্য এবং দুর্নীতির সুযোগ পাবে, যা গণতন্ত্রের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
এই বিতর্কের প্রেক্ষিতে বলা যায়, রাজনৈতিক অঙ্গনে আনুপাতিক নির্বাচনী পদ্ধতি নিয়ে মতানৈক্য বিদ্যমান। একদিকে অধিকাংশ রাজনৈতিক দল গণতন্ত্রের শুদ্ধতার জন্য নতুন এই পদ্ধতির পক্ষে থাকলেও, বিএনপি মনে করে যে এটি তাদের রাজনৈতিক কৌশলের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। তবে, যে কোনো নতুন নির্বাচন পদ্ধতি চালুর আগে জনগণের মতামত এবং রাজনৈতিক সংহতির বিষয়টি বিবেচনা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।