সিমেন্ট ছাড়াই নির্মিত হয়েছে বিশ্বের অন্যতম আশ্চর্য স্থাপনা তাজমহল। কারণ আধুনিক সিমেন্ট আবিস্কার হয়েছে তাজমহল নির্মানের আরো ২০০ বছর পর।
বর্তমানে সিমেন্ট ছাড়া সাধারন কোন বিল্ডিং নির্মানের কথা ভাবাও যায় না। অথচ আধুনিক সিমেন্টের ব্যবহার ছাড়া নির্মিত তাজমহল টিকে আছে প্রায় ৪০০ বছর ধরে।
এ সময়ের মধ্যে বয়ে গেছে শত শত ঝড়, হয়েছে প্রলয়ঙ্করী ভুমিকম্প। কিন্তু সিমেন্ট ছাড়া নির্মিত তাজমহল এখনো টিকে আছে সগৌরবে।
তাহলে কিভাবে তৈরি হলো বিশ্বের অন্যতম সুন্দর এই স্থাপনা? পাথরের উপর পাথর সাজিয়ে গড়ে উঠা এই প্রাসাদের পাথর গুলো জোড়া লাগানো হলো কিভাবে?
কী এমন জিনিস ব্যবহার করা হয়েছিলো সিমেন্টের পরিবর্তে, যার ফলে শত শত বছর টিকে থাকার মতো এতোটা মজবুত স্থাপনায় পরিনত হয়েছে তাজমহল?
এরকম প্রশ্ন মাথায় আসা খুব স্বাভাবিক। এ বিষয় নিয়েই সাজানো হয়েছে আজকের প্রতিবেদন।
পৃথিবীর সপ্ত আশ্চর্জের অন্যতম স্থাপনা- তাজমহলের নির্মান কাজ শুরু হয়েছিলো ১৬৩২ সালে। প্রায় বিশ হাজার শ্রমিক ২২ বছর সময় ধরে নির্মান করেছিলেন আশ্চর্য এই নিদর্শন।
শাহজাহানের স্বপ্নের এই প্রাসাদ নির্মাণে ব্যবহৃত হয়েছিলো বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আমদানি করা দামি দামি উপাদান। আর এসব কাজ তদারকি করেছিলেন পৃথিবীর সেরা সেরা স্থপতিবৃন্দ।
তাজমহলের জন্য প্রায় ২৮ ধরণের রত্ন পাথর আমদানি করা হয়েছিলো বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে। এসব জিনিসপত্র আমদানি করতে ব্যবহার করা হয়েছিলো ১ হাজার হাতির বিশাল বহর।
সবচেয়ে অবাক করা ব্যাপার হলো, এতোসব মূল্যবান পাথর দিয়ে নির্মিত তাজমহলে সিমেন্টের ব্যবহার হয়নি। কারণ তখন পর্যন্ত আধুনিক সিমেন্ট সম্পর্কে মানুষের জানা ছিলো না।
তাজমহল নির্মানের আরো প্রায় ২০০ বছর পর আবিস্কার হয় আধুনিক সিমেন্ট। যা বর্তমানে নির্মান কাজের অন্যতম প্রধান উপাদান। ছোট বড় যেকোন স্থাপনার নির্মান কাজ সিমেন্ট ছাড়া ভাবাও যায় না।
তবে সে সময় তাজমহল নির্মিত হয়েছিলো সিমেন্ট ছাড়াই। এবং এমন এক কৌশলে নির্মান করা হয়েছিলো তাজমহলের কাঠামো, যার স্থায়িত্ব হয়তো হাজার বছর ছাড়িয়ে যাবে।
ইন্টারনেটের বিভিন্ন আর্টিকেল ঘেটে জানা গেছে, তাজমহলের সময় সিমেন্ট না থাকলেও বিকল্প কৌশল ব্যবহার করেছিলেন স্থপতিরা।
তারা সিমেন্টের পরিবর্তে ব্যবহার করেছিলেন বিশেষ এক ধরণের পেস্ট। যা সিমেন্টের চেয়েও অধিক মজবুত।
সরোজ নামের এই পেস্ট তৈরি করা হয় লাইমস্টোন এবং কাদামাটি দিয়ে। এতে আরো মেশানো হতো গুড়-বাতাসা, বেলের জুস, ডাল, চিনি, রজন, আঠা সহ নানা ধরণের আজব আজব পদার্থ।
এতোকিছু দিয়ে তৈরি বিশেষ এই মিশ্রণের মাধ্যমে তৈরি হয়েছে তাজমহলের কাঠামো। যা টিকে আছে চারশো বছর ধরে।
এতো দীর্ঘ সময়ে রোদ ঝড় বৃষ্টি বয়ে যাচ্ছে তাজমহলের উপর দিয়ে। এমনকি অনেক বার ভয়ংকর ভুমিকম্পেরও শিকার হয়েছে এই অঞ্চল।
তবুও এখনো তাজমহল টিকে আছে সগৌরবে। স্থাপত্যবিদদের ধারণা, আরো কয়েকশ বছর অক্ষত থাকবে আশ্চর্য এই স্থাপনা।
সম্রাট শাহজাহানের ভালোবাসার এই নিদর্শন পুর্ণতা পেয়েছিলো ১৬৫৩ সালে। তৎকালীন সময়ে এর আনুমানিক নির্মান ব্যয় ছিলো প্রায় ৩২ মিলিয়নের কাছাকাছি।
তবে মুদ্রাস্ফীতি হিসাব করে বর্তমানে এই স্থপনার খরচ ধরা হয় এক বিলিয়ন ডলারের বেশি। যা দিয়ে অনায়াসে তৈরি করা যাবে বুর্জ খলিফার মতো বিশ্বের সর্বোচ্চ ভবন।