অন্যান্য

বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা।

নিজস্ব প্রতিবেদক

নিজস্ব প্রতিবেদক

বৃহস্পতিবার, ১ সেপ্টেম্বর, ২০২২
বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা।

হংকং এর কোওলুন ওয়াল সিটিকে বলা হয় বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা। বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আবাসন ব্যবস্থায় আধুনিকতার ছোয়া লাগলেও এ শহরটি পুরোপুরি ব্যাতিক্রম। 

ব্যাপক ঘিঞ্জি আর আলোবাতাস হীন জায়গায় দিনের পর দিন মানবেতর জীবনযাপন করছেন কোওলুনের অধিবাসীরা।

অনেকটা শহুরে বস্তির মতই অতি অল্প জায়গায় অসংখ্য মানুষ একসাথে বসবাস করেন এখানে।
এখন পর্যন্ত এ শহরের সর্বোচ্চ রেকর্ডকৃত জনসংখ্যার ঘনত্ব ছিলো প্রতি বর্গ মাইলে ৩.২ মিলিয়ন।

কথিত রয়েছে, অন্ধকার ঘনবসতিপূর্ণ জায়গাটিকে সাধারণ মানুষের পাশাপাশি হংকং এর পুলিশেরাও বেশ ভয় পায়। বাহির থেকে আগত কিংবা বিদেশি কোনো মানুষ এ শহরে ভুলেও প্রবেশ করে না।

 কারণ এখানকার অধিবাসীরা রাষ্ট্রীয় আইন কানুন বা সামাজিক নিয়ম নীতির কোনো তোয়াক্কা করেনা। অহরহ বিভিন্ন ধরনের সামাজিক অপরাধ সংঘটিত হতে থাকে এখানে।

অধিবাসীরা নিরাপত্তা কোড উপেক্ষা করে নিজেদের ইচ্ছেমতো দালান নির্মাণ করে বসবাস করছেন। একজনের নির্মিত দালানের সাথে আরেকজনের দালান লেগে গিয়ে তৈরি হয় বিশালাকার সাম্রাজ্য। 

দেখে মনে হয় সবগুলো মিলে একটাই দালান, যার অনেকগুলো শাখাপ্রশাখা জন্মেছে।
প্রত্যেকের পরিবারের জন্য একটি শয়ন কক্ষ, একটি রান্নাঘর এবং একটি শৌচাগারের বেশি কোনো জায়গা নেই।

এখানকার পরিবেশ পুরোপুরিই অস্বাস্থ্যকর। বায়ু চলাচলের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না থাকার ফলে দালানের ভেতর বিরাজ করে বস্তির মতো পরিবেশ।

শহরের ভিতরের দিকের এলাকা গুলোর অবস্থা আরো শোচনীয়। কারণ, সেখানে পর্যাপ্ত আলো না থাকার কারণে সবসময়ই অন্ধকার বিরাজ করে। 

ভ্যাপসা গন্ধ, স্যাঁতসেঁতে আবাসস্থল গুলোকে দেখতে একেবারেই মৃত্যু পুরীর মতো মনে হয়।

এ শহরে ভালো কোনো স্কুল,কলেজ বা ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান নেই। ছোটোখাটো কোনো জায়গার উপর নামমাত্র কিছু ছেলেমেয়েকে জড় করে শিক্ষা দেওয়া হয়। 

শিশুদের খেলাধুলা কিংবা বয়স্কদের বিনোদনের জন্যও কোনো ব্যবস্থা নেই। কেবলমাত্র শহরের মাঝখানে একটি সবুজ পার্ক রয়েছে।

ঘিঞ্জি শহরের একঘেঁয়েমিপূর্ণ জীবন থেকে নিস্তার পেয়ে, কিছুটা সময় নীরবতা ও শান্তি উপভোগ করতে বাসিন্দারা এখানে আসেন।

দারিদ্রতা এ শহরের মানুষকে গ্রাস করে রেখেছে। স্বচ্ছলতার সামান্য ছিটেফোঁটাও দেখা যায়না কোনো পরিবারে। 

বিখ্যাত ফটোগ্রাফার গ্রেগ জিরার্ড এখানে বেশ কিছুদিন থেকেছিলেন। তিনি এশহরকে নিয়ে একটি ডকুমেন্টারি তৈরি করেন। 

যেখানে বলেছেন, তিনি যখন প্রথমবার এটি দেখেছিলেন তখন বেশ অবাক হয়ে গিয়েছেন। তার ভাষায় এটি দেখতে প্রকাণ্ড আকৃতির ভৌতিক একটি দালান। 

মূলত কোওলুন ওয়াল সিটি ছিল একটি ঐতিহাসিক দুর্ঘটনা। বহুকাল আগে এটি একটি চীনা সামরিক দুর্গ ছিল। সাবেক চীনা রাজাদের বসবাস ছিলো এ দুর্গে। 

চীন যখন যুক্তরাজ্যকে হংকং এলাকাটি ইজারা দিয়েছিলো তখন এটি একটি ছিটমহলে পরিণত হয়েছে। এরপর, জাপানের হংকং দখলের সময় এ শহরের জনসংখ্যা নাটকীয় ভাবে বৃদ্ধি পেতে থাকে।

সে সময় কোওলুনে পতিতাবৃত্তি, জুয়া ও মাদকাসক্তির মত অপরাধগুলোর হার অত্যন্ত বেড়ে গিয়েছিলো। ১৯৯৫ সালের দিকে কোওলুন প্রাচীর বেষ্টিত শহর উদ্যান নামে এটিকে উদ্বোধন করা হয়।