অন্যান্য

পুরুষ পাখিরা বেশী সুন্দর হয় কেন

নিজস্ব প্রতিবেদক

নিজস্ব প্রতিবেদক

বুধবার, ২৪ আগস্ট, ২০২২
পুরুষ পাখিরা বেশী সুন্দর হয় কেন

মানুষের মধ্যে ছেলেদের তুলনায় মেয়েরা বেশী সুন্দরী হলেও পাখিদের ক্ষেত্রে বিষয়টি ঠিক উলটো। পুরুষ পাখি স্ত্রী পাখির তুলনায় অধিক সৌন্দর্যের অধিকারী হয়ে থাকে। 


পুরুষদের পালকগুলো মেয়েদের থেকে অধিক উজ্জ্বল ও বৈচিত্র্যপূর্ণ। বাহারি রঙের পেখম আর পালকের জন্য ময়ূর যেমন মুগ্ধতা ছড়ায়, ময়ূরী সেই তুলনায় মোটেও আকর্ষণীয় নয়, গায়ের রঙও অনুজ্জ্বল।   


ঝলমলে পালক ও লম্বা লেজ বিশিষ্ট পাখিদের মধ্যে বার্ডস অফ প্যারাডাইস বিখ্যাত। অনিন্দ্য সুন্দর এই পাখির পুরুষরা দারুণ নাচ করতে জানে, সেই তুলনায় মেয়েরা চেহারা আর স্বভাবের দিক দিয়ে একেবারেই সাদামাটা।


এমনকি মিষ্টি কণ্ঠের দিক দিয়েও এগিয়ে পুরুষ পাখি। বসন্তে মধুর কণ্ঠে ডাকতে পারে পুরুষ কোকিল। অন্যদিকে স্ত্রী কোকিলের গলার স্বর ভাঙা আর কর্কশ।        


কোন কোন পুরুষ পাখি জোড় বাঁধার সময় সুন্দর করে ঘর বানাতেও জানে। তাদের অধিক আকর্ষণীয় হওয়ার পেছনে রয়েছে বিশেষ কিছু কারণ।     


ছেলে মেয়ের মধ্যে সৌন্দর্যগত পার্থক্য পাখিদের বংশের ধারা অব্যাহত রাখতে সাহায্য করে। স্ত্রী পাখিরা পুরুষদের সৌন্দর্য দেখে মুগ্ধ হয়ে তাদের সাথে জোড় বাঁধে।


স্ত্রী পছন্দ না করলে সেই পুরুষটি জোড় বাঁধতে পারবে না, ফলে বংশ বৃদ্ধিও হবে না। বিলুপ্ত হয়ে যাবে প্রজাতিটি।


প্রজনন মৌসুমে পুরুষরা মধুর শব্দে ডেকে বা গান করে নারীদের আকৃষ্ট করে, কেউবা নাচ করে দেখায়। আর এসব শৈল্পিক কাজের জন্য পুরুষটিকে যথেষ্ট পরিশ্রম করতে হয়।        


তাছাড়া স্ত্রীরা সুস্থ-সবল ও সুন্দর সন্তানের জন্ম দিতে চায়। পুরুষদের মজবুত দেহের গড়ন, বড় ঝুঁটি, লম্বা লেজ, উজ্জ্বল চকচকে দেহ আর রঙ বেরঙের পালক সুস্থতার লক্ষণ প্রকাশ করে। 


তারা দেখেশুনে এমন পুরুষকেই সঙ্গী হিসেবে বেছে নেয়। প্যারাডাইস পাখিদের ক্ষেত্রে মেয়েরা কমপক্ষে ২০-২৫ টি পুরুষের নাচ দেখে।   


যার নাচ ও গায়ের রঙ ভালো লাগে মেয়েটি তাকেই নির্বাচন করে সঙ্গী হিসেবে। ময়ূরীও একই প্রক্রিয়ায় সঙ্গী নির্বাচন করে।         


শারীরিকভাবে শক্তিশালী পুরুষ স্ত্রী ও ছানাদের বিপদ আপদে রক্ষা করতে পারে। তাই এমন পুরুষদেরই স্ত্রী পাখিরা পছন্দ করে থাকে।   


ডিম উৎপাদনের ক্ষেত্রে স্ত্রী পাখি খুব ভেবে চিন্তে সঙ্গী বাছাই করে। যে পুরুষ তাকে বড় ও পরিপক্ব ডিম উপহার দিতে পারবে অনেকের মধ্যে তাকেই বেছে নেয়। 


কারন এমন ডিম থেকেই সুস্থ শিশুর জন্মলাভের সম্ভাবনা থাকে। কোন কোন মেয়ে, ছেলেদের পালকের রঙ কতটা উজ্জ্বল তার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেয়। 


পাখি জগতে সঙ্গী নির্বাচনে মেয়েদের প্রাধান্য বেশী। পুরুষরা তাই অধিক সুন্দর হয়ে থাকে বংশরক্ষার তাগিদেই।      


আরও একটি কারণ আত্মরক্ষা। বেশিভাগ ক্ষেত্রেই মা পাখিকে ডিমে তা দেয়া থেকে শুরু করে সন্তান লালন পালনের সিংহভাগ দায়িত্ব নিতে হয়। 


বাবা পাখি খাবারের সন্ধানে চলে গেলে মায়েরা একা একা বাসায় থাকে। এসময় তাদের নিরাপত্তার কোন ব্যবস্থা থাকে না।  


তারা অধিক সৌন্দর্যের অধিকারী হলে, সহজেই শত্রুর নজরে চলে আসত এবং আক্রমণের শিকার হতো। একারণেই স্ত্রী পাখিরা ছেলেদের তুলনায় কম সুন্দর।       


গায়ের রঙ আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সাধারণত মেয়ে পাখির গায়ের রঙ উজ্জ্বল ও আকর্ষণীয় না হওয়ায় তারা শিকারি পাখিদের হাত থেকে রেহাই পায়। 


অন্যদিকে ছেলেদের ক্ষেত্রে এই হিসেবটি আলাদা। গায়ের রঙ উজ্জ্বল না হলে মেয়েরা পছন্দ করে না।


অবশ্য এই রঙের কারণেই পুরুষ পাখিদের মধ্যে বিবাদের সৃষ্টি হয়। এক্ষেত্রে পুরুষরা বিশেষ কৌশল অবলম্বন করতে পারে।   


লাল ঘাড় বিশিষ্ট কোন কালো দেহের পাখি তার ঘাড়ের লাল পালকের অংশটি ঢেকে রাখতে পারে। প্রজননের সময় স্ত্রীদের আকৃষ্ট করতেই শুধু সেই অংশটি উন্মুক্ত করে।  এতে বংশরক্ষাও হয়, আবার লড়াইয়ের হাত থেকে রক্ষাও পাওয়া যায়।  


তাছাড়া পুরুষগুলো শারীরিকভাবে শক্তিশালী হয়, তাই রঙ দেখে আকৃষ্ট হয়ে কেও আক্রমণ করলে উলটো তাকে তাড়িয়ে দিতে পারে। অন্যদিকে স্ত্রীরা সুন্দর নয় বলে নিরাপদে বংশবিস্তার এবং আত্মরক্ষা করতে পারে।