ব্রাজিলে এমন একটি গ্রাম রয়েছে যেখানে পুরুষের অভাবে বিয়ে হচ্ছে না নারীদের। গ্রামটির নাম নোইভা ডো কোরডোইরো। এটি দক্ষিণ-পূর্ব ব্রাজিলের একটি পাহাড়ে অবস্থিত।
এই গ্রামে প্রায় ৬০০ নারীর বাস। যাদের মধ্যে ৫০ শতাংশেরও বেশি হচ্ছেন কুমারী। ১৮ থেকে ৩০ বছর বয়সী নারীর সংখ্যাই বেশি।
ব্রাজিলের পাহাড়ি এই গ্রামের প্রত্যেক নারীই খুব সুন্দরী। তা সত্ত্বেও জীবনসঙ্গীর অভাব! যে কারণে নিজেদের পাত্রের খুঁজে বিজ্ঞাপন দিয়েছে গ্রামের তরুণীরা।
গ্রামের ৬০০ নারীর মধ্যে আপাতত ৩০০ জন নারী বিয়ের প্রস্তাব পাঠিয়েছে। তবে সুন্দরীদের জীবন সঙ্গী হতে হলে কিছু শর্ত মানতে হবে।
বিয়ের পর বরকেও তার সঙ্গে থাকতে হবে। অর্থাৎ সেই গ্রামে গিয়েই বসতি গড়তে হবে পাত্রকে। তাই যেসব পুরুষরা, ওই গ্রামে বসবাস করবে সুন্দরীরা তাদেরকেই বর হিসেবে মেনে নিবে।
তবে গ্রামেই স্ত্রীর সঙ্গে থাকতে হবে বলে আশপাশের এলাকার কোনও পুরুষই ওই গ্রামে বিয়ে করতে চান না। ফলে বিবাহযোগ্যা হয়েও মেয়েদের অবিবাহিত থাকতে হচ্ছে।
যে কয়েক জন নারী বিয়ে করেছেন তারা নিজেদের গ্রাম ছেড়ে কখনও যাননি। ফলে স্বামীকে ছাড়াই তাদের থাকতে হয়।
তা ছাড়া ছেলেদের ১৮ বছর বয়স হলেই বাইরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। ফলে ক্রমে পুরুষশূন্য হয়ে পড়েছে গ্রামটি।
গ্রামের বেশ কিছু শিক্ষিত ও সুন্দরী যুবতী, অবিবাহিত পুরুষের সন্ধানে ব্যর্থ হয়ে, বিবাহিত পুরুষদেরকেই বেছে নিয়েছেন। তবে তারা, নিজেদের গ্রাম ছেড়ে কখনও যাননি।
যদিও সপ্তাহ শেষে দু’দিনের জন্য স্বামীরা গ্রামে আসেন। তাছাড়া উৎসব পার্বনে দেখা যায় তাদের।
এই গ্রামের বয়স প্রায় ১২৮ বছরের মতো। তার পরেও বাহিরের কোনো গ্রামের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক নেই।
গ্রামের এমন রীতির পিছনেও রয়েছে একটি কাহিনী। ১৮৯০ সালে মারিয়া সেনহোরিনা ডি লিমা নামে একটি মেয়েকে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে বিয়ে দেওয়া হয়।
কিন্তু সে নিজের বিয়ে কিছুতেই মেনে নেন নি। এরপরই তিনি শ্বশুরবাড়ি ছেড়ে নোইভা ডো কোরডোইরোতে এলাকায় চলে আসেন। একাই বাস করতেন সেখানে।
১৮৯১ সালে তিনি এখানে একটি গ্রাম গড়ে তোলেন। আর তখন থেকেই স্থির হয় এই গ্রামের কোনও মেয়ে বিয়ের পর শ্বশুরবাড়ি যাবে না। স্বামীকেই স্ত্রীর সঙ্গে থাকতে হবে।
এই গ্রামের নারীরা ছেলেদের উপর, কোনোভাবেই নির্ভরশীল না। তারা কৃষিকাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। তাছাড়া একা হাতে, সন্তানদের দেখাশোনাও করেন তারা।
গ্রামের সমস্ত মহিলারা মিলে, কমিউনিটি সেন্টারের জন্য ওয়াইড স্ক্রিন টিভি কিনেছেন। সেখানে সবাই মিলে টিভি দেখেন, আনন্দ করেন।
শুধু তাই নয়, এখানে প্রত্যেকে প্রত্যেকের কাপড় ব্যবহার করতে পারেন, একে অপরকে চুল বেঁধে দেন, নেলপলিশ লাগিয়ে দেন। পুরো গ্রামেই যেন একটা পরিবার।
নিজেদের গ্রাম ছেড়ে না যাওয়ার প্রথা প্রায় দেড়শো বছর ধরে কঠোর ভাবে মেনে চলছেন তারা।
যে কারণে পাত্র খুঁজে পাওয়া তাদের জন্য কঠিন হয়ে দাড়িয়েছে। বিয়ের বয়স পেরিয়ে গেলেও অবিবাহিত থাকতে হচ্ছে তরুণীদের।