সামুদ্রিক স্টার্জিওন মাছের ডিম ক্যাভিয়ার। বিশ্বের সবচেয়ে দামী খাবারের মধ্যে রয়েছে এটি। প্রতি পাউন্ড ক্যাভিয়ারের দাম ৪০ হাজার মার্কিন ডলার পর্যন্ত হতে পারে।
তবে এটি খুবই দুষ্প্রাপ্য। এর প্রধান কারণ হল ক্রেতার অত্যাধিক চাহিদা ও স্টারজিওন মাছের অপর্যাপ্ততা।
গত ২০০ বছরে খাবারটি আভিজাত্যের প্রতিক হয়ে ওঠেছে। একে বলা হয় ধনীদের খাবার। উৎপাদন খরচ অত্যধিক হওয়ায় রয়ে গেছে মধ্যবিত্তের নাগালের বাইরে।
প্রজাতিভেদে ক্যাভিয়ারের আকার বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে। খাবারটি কালো, জলপাই সবুজ, ধূসর, বাদামী, হালকা হলুদ, গাঢ় হলুদ বা কমলা বর্ণের হয়ে থাকে।
তবে কালো বর্ণের ক্যাভিয়ার সবচেয়ে আকর্ষণীয় ও চাহিদা সম্পন্ন। তাই এর দামও অন্যান গুলোর তুলনায় অনেক বেশি।
ঐতিহাসিক ভাবে ক্যাভিয়ারের উৎপাদন কেন্দ্র রাশিয়া এবং মধ্যপ্রাচ্যে। বর্তমানে সবচেয়ে বেশি উৎপন্ন হয় চীনে, যদিও এখানকার ক্যাভিয়ার শতভাগ ফার্মে উৎপাদিত হয়।
প্রধান ক্যাভিয়ার গুলো হল বেলুজা, স্টারলেট, ক্যালুজা, হাইব্রিড, অসেট্রা সহ সাইবেরিয়ান স্টার্জেন।
তবে সবচেয়ে সুস্বাদু ও দামী ক্যাভিয়ার আসে বেলুজা স্টার্জেন মাছ থেকে। একটি বেলুজা স্টার্জেনের পূর্ণবয়স্ক হতে সময় লাগে প্রায় বিশ বছর।
বিশ্বে প্রায় ২৬ প্রজাতির স্টার্জন মাছ পাওয়া যায়। ক্যাভিয়ার আহরণের উদ্দেশ্যে স্ত্রী স্টার্জন মাছ বিশেষভাবে রাখা হয়। এরা জীবন্ত ফসিল প্রাণী গুলোর একটি।
একটি পূর্ণাঙ্গ মাছের মোট ওজনের ১২ শতাংশ ডিম থাকে। এই ডিম বা ক্যাভিয়ার সবচেয়ে সুস্বাদু ও দামী। এর রং কালো।
স্টারজিওন মাছ শুধুমাত্র কাস্পিয়ান সাগর এবং কৃষ্ণ সাগরেই দেখা মেলে। এরা শীতকালে ডিম দেয়। যখন মোহনায় আসে তখন এ মাছ থেকে ডিম সংগ্রহ করা হয়।
তবে দুঃখের বিষয় হলো, মাছের পেট থেকে ডিম সংগ্রহ করার সময় একে কেটে ফেলতে হয়। এজন্যই স্টারজিওন মাছের কোন কোন প্রজাতি বিলুপ্তির পথে।
লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে এই ক্যাভিয়ার খায় পশ্চিমার দেশের মানুষগুলো। তাদের বিয়ে, জন্মদিন বিভিন্ন পার্টিতে ক্যাভিয়ার থাকাটা যেন অত্যাবশ্যক।
এই মাছের ডিমকে আগে লবন পানি এবং এক ধরনের বিশেষ চাটনিতে ম্যারিনেট করে নিতে হয়।
ক্যাভিয়ার বর্তমানে আভিজাত্য আর 'ধনীদের খাবার' হলেও এটি সবসময় ধনীদের খাবার ছিল না। এর আগমন ঘটে অন্তত ২২ কোটি বছর আগে।
একসময় রাশিয়ান জেলেরা তাদের প্রতিদিনের খাবারে ক্যাভিয়ার রাখত। আলু দিয়ে এটি নিয়মিত রান্না করে খেতেন তারা।
ক্যাভিয়ারকে 'রো' নামেও ডাকা হত, যা রাশিয়ান জেলেদের নামে নামকরণ করা হয়েছিল।
১৯ শতকে আমেরিকার হোটেলগুলোতে বিনা মূল্যে ক্যাভিয়ার দেওয়া হতো। তখন ক্যাভিয়ারের সহজলভ্যতা ছিল বাদামের মতোই। সে সময় আমেরিকাতে প্রচুর পরিমাণে স্টার্জেন মিলত।
কিন্তু দিন দিন এর চাহিদা বাড়তে থাকে। তাই বেড়ে যায় বিক্রয় মূল্য। তাছাড়া বর্তমানে মাছের সংখ্যা কমে বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ার কারনে এমন আকাশ ছোয়া দাম।
পর্যাপ্ত ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে খুব শীগ্রই হয়ত বিলীন হয়ে যাবে মহামূল্যবান স্টারজিওন মাছ। তখন কোন কিছুর বিনিময়েও মিলবে না আর ক্যাভিয়ার।