পৃথিবীর সবচেয়ে বড় মাছের নাম হোয়েল শার্ক বা তিমি হাঙর। মাছটি এতো বিশাল যে সাগরে চলার সময় এটিকে মনে হয় বড় কোন সাবমেরিন।
প্রাপ্ত বয়স্ক একেকটি হোয়েল শার্ক চল্লিশ ফুট থেকেও বেশি লম্বা হয়ে থাকে। এ সময় তাদের ওজন দাঁড়ায় আঠারো টনের বেশি।
অনেকেই নীল তিমিকে সবচেয়ে বড় মাছ মনে করেন। কিন্তু এটি সঠিক নয়। কারন নীল তিমি মূলত স্তন্যপায়ী প্রানী।
মাছের মধ্যে পৃথিবীর মাঝে সবচেয়ে বড় হলো হোয়েল শার্ক। এখন পর্যন্ত ধরা পড়া সবচেয়ে বড় হোয়েল শার্ক ছিলো ষাট ফুট লম্বা।
পৃথিবীর সবচেয়ে বড় এই মাছ আচরণের দিক দিয়ে মোটেও হিংস্র নয়। দৈত্যাকার শরীরের এক নিরীহ মাছ বলা যায় এটিকে।
সাধারণত ছোট মাছ আর সামুদ্রিক অনুজীব খেয়েই বেঁচে থাকে এরা।
আচরণে ভয়ংকর না হলেও এদের আক্রমনের কয়েকটিও ঘটনা ঘটেছে।
বিশ্বের সবচেয়ে বড় এই মাছ যখন হা করে, তখন তাদের মুখের প্রশস্ত দাঁড়ায় প্রায় পাঁচ ফুট পর্যন্ত। বিশাল এ মুখের ভিতরে রয়েছে ছোট ছোট তিনশোটি দাঁত।
হা করা অবস্থায় হোয়েল শার্ক দেখতে খুবই ভয়ংকর। অনেকের ধারণা আস্ত মানুষ গিলে ফেলতে পারে এটি। তবে আসলে তা নয়।
হোয়েল শার্কের দাঁতের সংখ্যা তিনশো হলেও সেগুলো খুব ছোট আকারের। তাছাড়া মাছটির গ্রাসনালি অনেকটাই চিকন।
সেজন্য এরা সাগরের স্কুইড, সারডিনের মতো ছোট আকারের মাছ খেয়েই জীবন ধারণ করে থাকে।
প্রায় সব সাগর এবং মহাসাগরে বসবাস করে দৈত্যাকার তিমি হাঙর। গ্যালাপোগেস অঞ্চলে সংরক্ষিত একটি জায়গা রয়েছে, সেখানে দেখা যায় প্রচুর সংখ্যক হোয়েল শার্ক।
এখানের সামুদ্রিক পরিবেশ হাঙরের জন্য খুবই উপযুক্ত। গবেষনার জন্য বিজ্ঞানীরা এখানে মা হাঙরের শরীরে ক্যামেরা যুক্ত করে তাদের গতিবিধি পর্যবেক্ষন করেন।
এরা বংশ বিস্তার করে ডিমের মাধ্যমে। একটি স্ত্রী হোয়েল শার্ক একসাথে জন্ম দেয় প্রায় তিনশো বাচ্চা। যদিও বেশিরভাগ বাচ্চা প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ার আগেই মারা যায়।
সাগরের সবচেয়ে বড় এই মাছের প্রজাতিকে পার করতে হয় দীর্ঘ শৈশব। পচিশ বছর বয়স হলে প্রাপ্ত বয়স্ক হয় তিমি হাঙর। তখন বাচ্চা জন্ম দেয়ার সক্ষমতা অর্জন করে তারা।
এই সময়ে এদের দৈর্ঘ দাঁড়ায় প্রায় ছাব্বিশ ফুট। বয়স বাড়ার সাথে সাথে এগুলো লম্বা হয়ে থাকে চল্লিশ ফুটের বেশি পর্যন্ত।
শার্ক হোয়েলের জীবন মানুষ থেকেও অনেক দীর্ঘ। একশো থেকে একশো পঞ্চাশ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে এরা।
সাধারণত কিছুটা উষ্ণ পানি পছন্দ করে হোয়েল শার্ক। ইন্ডিয়ান এবং প্রশান্ত সাগরে বেশি দেখা যায় এদের। প্রজননের সময় স্ত্রী হোয়েল শার্ক অবস্থান করে সাগরের একদম গভীরে।
সবচেয়ে মজার ব্যাপার হচ্ছে, হোয়েল শার্ক এর তিনশো টি দাঁত থাকলেও সেগুলো খুব একটা ব্যবহার করে না তারা।
তাদের খাওয়ার জন্য রয়েছে অদ্ভুত এক পদ্ধতি। হা করে সাগরের পানি মুখে নেয় হোয়েল শার্ক, তারপর পানিতে থাকা অনুজীব ফিল্টার করে পানি বাইরে বের করে দেয়।
হোয়েল শার্ক তার বিশাল দেহ নিয়ে অত্যন্ত ধীরগতিতে সাগরে চলাচল করে।
তাদের রয়েছে বিশাল আকারের ফুলকা, এই ফুলকার সাহায্যে প্রতি ঘন্টায় প্রায় ছয় হাজার লিটার পানি প্রসেস করতে পারে এরা।