বাংলাদেশ

কুষ্টিয়া প্রথম শ্রেণির পৌরসভা, বাস্তবে তৃতীয় শ্রেণির জীবনযাপন

ডেস্ক রিপোর্ট

ডেস্ক রিপোর্ট

সোমবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২৫
কুষ্টিয়া প্রথম শ্রেণির পৌরসভা, বাস্তবে তৃতীয় শ্রেণির জীবনযাপন
প্রথম শ্রেণির মর্যাদাসম্পন্ন কুষ্টিয়া পৌরসভা—কাগজে কলমে যেটি একটি পুরোনো ও ঐতিহ্যবাহী শহর, বাস্তবে却 নাগরিক সেবার সংকটে আজ গভীরভাবে জর্জরিত। ১৮৬৯ সালে প্রতিষ্ঠিত পৌরসভাটির বয়স শতবর্ষ পেরোলেও শহরের সড়ক, ড্রেনেজ, নাগরিক সুবিধা ও নগর পরিকল্পনার দুরবস্থা যেন সেই পুরোনো সমস্যারই দীর্ঘ ছায়া।

পৌর এলাকার সড়কগুলো এখন শহরের মুখচ্ছবি—নিস্তেজ, ভাঙাচোরা, অবহেলায় ক্লান্ত। কোথাও গর্ত, কোথাও ধুলো, আর একটু বৃষ্টি হলেই সড়ক নদীর মতো পানিতে ডুবে থাকে। এমন পরিস্থিতিতে পথচারী থেকে শুরু করে গাড়িচালক—সবাইকে প্রতিদিনই সহ্য করতে হচ্ছে দুঃসহ ভোগান্তি।
অ্যাম্বুলেন্স চালক মনির হোসেন জানান, “রোগী নিয়ে ভাঙা রাস্তায় চলাচল করা মানে জীবন নিয়ে খেলা। গর্ত এড়াতে গিয়ে সময় নষ্ট হয়, রোগীর ঝুঁকি আরও বাড়ে।”

রাস্তার দুই পাশে দালান উঠেছে নিয়ম-নীতি উপেক্ষা করে। শহরের নগর পরিকল্পনায় অনুমোদন, নকশা বা সাইনবোর্ড—কোথাও নেই সুনির্দিষ্ট তথ্য। এ অবস্থায় রাস্তা প্রশস্তকরণসহ যেকোনো উন্নয়ন প্রকল্প আটকে আছে অবৈধ কাঠামোর বেড়াজালে।

ব্যবসায়ী আশাদুল ইসলাম বলেন, “রাস্তা এমন সরু আর ভাঙা যে ক্রেতা দোকানে আসতেও ভয় পায়। মার্কেট আছে, কিন্তু পার্কিং নেই। ব্যবসা কমে গেছে ভয়াবহভাবে।”

পৌর এলাকার ড্রেনগুলো কোথাও ভেঙে পড়া, কোথাও মুখবন্ধ, আবার অনেক জায়গায় নেইই। সামান্য বৃষ্টি হলেই পানি জমে ঘর-বাড়ি থেকে দোকানপাট—সব জায়গায় সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা।
পারুল খাতুনের অভিযোগ, “বৃষ্টি হলেই বাসার সামনে পানি জমে থাকে দিনের পর দিন। বাচ্চারা বের হতে পারে না। বারবার বলেছি, কেউ ব্যবস্থা নেয়নি।”

অবকাঠামো উন্নয়নে পিছিয়ে পড়ায় সাবেক প্রশাসনের দিকে আঙুল তুলছেন অনেকেই। বহু বছর দায়িত্বে থাকা সাবেক মেয়র আনোয়ার আলীর আমলেও শহরের এই অব্যবস্থা থেকে উত্তরণ ঘটেনি—এমন অভিযোগ স্থানীয়দের।

পৌর প্রশাসক মিজানুর রহমান জানান, এডিবির তহবিলসহ বেশ কিছু উন্নয়ন প্রকল্প অপেক্ষমাণ। সড়ক, ড্রেনেজ ও নগর পরিবেশ উন্নয়নের পরিকল্পনা রয়েছে। ফাইল ঢাকায় পাঠানো হয়েছে; অনুমোদন পেলেই কাজ শুরু হবে।

তবে সবচেয়ে বড় বাধা হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন—অবৈধ ভবন অপসারণ। সেগুলো না সরালে কোনো উন্নয়ন টেকসই হবে না বলে জানান তিনি।

কুষ্টিয়া পৌরবাসীর দাবি খুব বেশি নয়— উন্নত সড়ক, জলাবদ্ধতা মুক্ত ড্রেনেজ ব্যবস্থা, নিয়ম-নীতি মানা ভবন, পরিচ্ছন্ন শহর, সামান্য হাঁটার মতো মুক্ত জায়গা
কিন্তু বাস্তবে তারা বলছেন— কুষ্টিয়া প্রথম শ্রেণির পৌরসভা, কিন্তু জীবনযাপন তৃতীয় শ্রেণিরও নিচে।শেষ কথা
নতুন প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন হলে হয়তো বদলাতে পারে শহরের চিত্র। ভবিষ্যতের কুষ্টিয়া হয়তো আরও প্রাণবন্ত ও পরিকল্পিত নগর হয়ে উঠবে। তবে আজকের কুষ্টিয়া—জলাবদ্ধতা, ভাঙা পথ, অবৈধ নির্মাণ আর প্রশাসনিক সীমাবদ্ধতার দুঃসহ ভারে নুয়ে পড়া একটি ক্লান্ত শহর।
শহরের যেন একটিই আর্তি— দেখুন, আমি এখনো বাঁচতে চাই।

  • প্রতিবেদক: বাদশা আলমগীর